বড়লেখা প্রতিনিধি

০৪ নভেম্বর, ২০১৯ ১৯:০০

মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে মরে ভাসছে মাছসহ জলজপ্রাণি

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের পানি থেকে বিভিন্ন জাতের মাছ ও অন্যান্য জলজ প্রাণি মরে ভেসে ওঠেছে।

শনিবার (২ নভেম্বর) থেকে এই মাছ মারা যাচ্ছে। এতে জলপ্রপাতের পানির পাশাপাশি এলাকার বাতাসেও দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

মাছ মারা যাওয়ার খবর পেয়ে সোমবার (৪ নভেম্বর) বিকেলে মৎস্য বিভাগের লোকজন মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের পানির গুণাগুণ পরীক্ষা করেছেন। এতে তারা পানির প্যারামিটার মোটামুটি স্বাভাবিক পেয়েছেন।

তবে তাদের (মৎস্য বিভাগের) ধারণা মাছ মারার জন্য কেউ পানিতে পাহাড়ি বিষ লতা দিয়েছে। ফলে মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণি মারা যাচ্ছে।

বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শনিবার (২ নভেম্বর) সকালে মাধবকুণ্ড এলাকায় পর্যটক, পর্যটক পুলিশসহ স্থানীয় লোকজন মাধবকুণ্ডের পানিতে মাছসহ বিভিন্ন ধরনের জলজ প্রাণি ভেসে ওঠতে দেখেন। মৃত মাছের কারণে মাধবকুণ্ড পর্যটন এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। জলপ্রপাতের পানিতেও দুর্গন্ধ রয়েছে। এর মধ্যে ছিল পাহাড়ি বামাস মাছ, কাঁকড়া, পুঁটি, ব্যাঙ, পাহাড়ি চিংড়ি, পিপলা, ছোট বাইন, সরপুঁটিসহ বিভিন্ন ধরনের জলজ কীটপতঙ্গ।

স্থানীয় লোকজনের ধারণা, মারা যাওয়া বামাসের বয়স ১৫ থেকে ২০ বছর হতে পারে। স্থানীয় লোকজন ও মাধবকুণ্ড ইকোপার্কের কর্মীরা মরা মাছ পানি থেকে তুলে সরিয়ে ফেলেন। গত শনিবার মারা যাওয়া মাছের সংখ্যা বেশি ছিল। সোমবারও (৪ নভেম্বর) কিছু কাঁকড়া, বাইন, ব্যাঙ, পুঁটি, বিভিন্ন ধরনের জলজ প্রাণি পানিতে ভেসে থাকতে দেখা গেছে।

তবে আগের চেয়ে এগুলো সংখ্যায় কমে এসেছে বলে জানিয়েছেন স্থানীয় লোকজন।

সোমবার (৪ নভেম্বর) দুপুরে সরেজমিনে মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতে গিয়ে দেখা যায়, স্থানীয় লোকজন কিছু মরা বামাস মাছ ধরে নিয়ে যাচ্ছেন। কেউ কেউ পঁচা মাছ পানি থেকে তুলে ফেলছেন। যাতে দুর্গন্ধ না ছড়ায়। কিছু মাছসহ জলজ প্রাণি জলপ্রপাতের ছড়ার আশেপাশে ছড়িয়ে আছে। এগুলো থেকে জলপ্রপাতের পানির পাশাপাশি এলাকার বাতাসেও দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে।

স্থানীয় লোকজনের ধারণা, পাহাড়ি ছড়ায় অনেক ধরনের মাছ থাকে। মাছ ধরার জন্য মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের উপরের অংশে কেউ বিষ প্রয়োগ করতে পারে। উপর থেকে গড়িয়ে পড়া ঝর্ণার পানিতে দুর্গন্ধ রয়েছে। এই পানি ছড়া দিয়ে গিয়ে হাকালুকি হাওরে পড়ছে। পানি বিষাক্ত হলে হাওরেও এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া হতে পারে। হাওরের মাছ মাছ মারা যেতে পারে।

রাজশাহী থেকে বেড়াতে আসা তুহিন আলম নামের একজন পর্যটক সোমবার বলেন, ‘মাধবকুণ্ডের পানিতে নেমেছি। কিন্তু পানিতে গন্ধ থাকায় স্বাভাবিকভাবে তা উপভোগ করতে পারিনি।’

মাধবকুণ্ড জলপ্রপাত এলাকার ব্যবসায়ী কবির আহমদ বলেন, শনিবার এসে পানির মধ্যে মরা মাছ ভাসতে দেখি। এই পানি হাকালুকি হাওরে যাবে। সেখানে মাছ মরবে। এই পানি অনেকে পান করে থাকে। বিষ দেওয়া হলে মানুষ ও পশুপাখির ক্ষতি হবে।

মাধবকুণ্ড ইকোপার্কের কর্মী সামির বলেন, গত শনিবার সকালে এসে দেখছি মাছ মরা। পানি থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ছিল। তাই মাছ তুলে ফেলেছি। বেশ কয়েকটা মরা বামাস মাছ তুলেছি। কাঁকড়াসহ বিভিন্ন ধরনের মাছও ছিল। বিষ দেওয়া হলে; জঘন্য কাজ করেছে।

বড়লেখা উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা কুলাউড়া উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ সোমবার দুপুরে বলেন, খবর পাওয়ার পর পানির কোয়ালিটি পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে পানির কোয়ালিটি প্যারামিটার মোটামুটি স্বাভাবিক পাওয়া গেছে। আমাদের ধারণা পাহাড়ি বিষ লতা কেউ পানিতে দিয়েছে। যার কারণে মাছসহ অন্যান্য জলজ প্রাণি মারা যাচ্ছে। আমরা মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে পানিতে ওষুধ প্রয়োগের ব্যবস্থা করছি। আশা করছি ওষুধ দেওয়ার পরে পানির বিষাক্ততার প্রভাব কমে যাবে।

বন বিভাগের সহযোগী রেঞ্জ কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন রায় বলেন, মাছ মরার ঘটনা শুনে গিয়ে দেখেছি। কিন্তু কিসের জন্য মারা গেছে, কারণ এখনো পাইনি। কারণ জানতে অনুসন্ধান চলছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত