বড়লেখা প্রতিনিধি

০৫ নভেম্বর, ২০১৯ ১৮:৩৫

মাধবকুণ্ডে জলজপ্রাণির মড়ক ঠেকাতে ওষুধ প্রয়োগ

থানায় সাধারণ ডায়েরি, পানি ও মাছের নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হচ্ছে ঢাকায়

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলার মাধবকুণ্ড জলপ্রপাতের পানিতে মাছসহ অন্যান্য জলজপ্রাণির মড়ক ঠেকাতে ও পানির গুণাগুণ স্বাভাবিক রাখতে ওষুধ প্রয়োগ করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) দুপুরে উপজেলা মৎস্য বিভাগের পক্ষ থেকে মাধবকুণ্ড- জলপ্রপাতে ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। এর আগে জলপ্রপাতের পানির গুণাগুণ পরীক্ষা করা হয়েছে। সংগ্রহ করা হয় পানি ও মাছের নমুনা। পরীক্ষার জন্য এগুলো ঢাকায় পাঠানো হবে।   

গত শনিবার থেকে হঠাৎ করে জলপ্রপাতে পাহাড়ি বামাস মাছসহ বিভিন্ন জাতের মাছও অন্যান্য জলজ প্রাণি মরে ভেসে উঠেছে। এতে জলপ্রপাতের পানির পাশাপাশি এলাকার বাতাসেও দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। মৎস্য বিভাগের ধারণা, পানিতে বিষ প্রয়োগের কারণে এমনটা হতে পারে। এই ঘটনায় বন বিভাগের স্থানীয় কর্মকর্তা থানায় সাধারণ ডায়েরি করেছেন।


মঙ্গলবার (৫ নভেম্বর) পানি পরীক্ষা ও ওষুধ প্রয়োগের সময় বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. শামীম আল ইমরান, বড়লেখা উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা কুলাউড়া উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হক, বন বিভাগের সহযোগী রেঞ্জ কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন দাস প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

বন বিভাগ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত শনিবার (২ নভেম্বর) সকালে মাধবকুণ্ড এলাকায় পর্যটক, পর্যটক পুলিশসহ স্থানীয় লোকজন মাধবকুণ্ডের পানিতে মাছসহ বিভিন্ন ধরনের জলজ প্রাণি ভেসে ওঠতে দেখেন। মৃত মাছের কারণে মাধবকুণ্ড- পর্যটন এলাকায় দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। জলপ্রপাতের পানিতেও দুর্গন্ধ রয়েছে। এরমধ্যে ছিল পাহাড়ি বামাস মাছ, কাঁকড়া, পুঁটি, ব্যাঙ, পাহাড়ি চিংড়ি, পিঁপড়া, ছোট বাইন, সরপুঁটিসহ বিভিন্ন ধরনের জলজ কীটপতঙ্গ।

স্থানীয় লোকজনের ধারণা মারা যাওয়া বামাসের বয়স ১৫ থেকে ২০ বছর হতে পারে। স্থানীয় লোকজন ও মাধবকুণ্ড- ইকোপার্কের কর্মীরা মরা মাছ পানি থেকে তুলে সরিয়ে ফেলেন। গত শনিবার মারা যাওয়া মাছের সংখ্যা বেশি ছিল। সোমবারও (৪ নভেম্বর) কিছু কাঁকড়া, বাইন, ব্যাঙ, পুঁটি, বিভিন্ন ধরনের জলজপ্রাণি পানিতে ভেসে থাকতে দেখা গেছে।

বন বিভাগের বড়লেখা রেঞ্জের সহযোগী রেঞ্জ কর্মকর্তা শেখর রঞ্জন দাস বলেন, ‘এ ঘটনায় সোমবার রাতে বড়লেখা থানায় একটি জিডি করেছি।’

জিডির বিষয়টি নিশ্চিত করে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. ইয়াছিনুল হক বলেন, ‘ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।’

বড়লেখা উপজেলার অতিরিক্ত দায়িত্বে থাকা কুলাউড়া উপজেলা জ্যেষ্ঠ মৎস্য কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ বলেন, ‘মাধবকুণ্ড- জলপ্রপাতে মাছ মারা যাওয়ার প্রেক্ষিতে সোমবার ও মঙ্গলবার দু’দফায় পানি পরীক্ষা করা হয়েছে। এরপর প্রয়োজনীয় ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। আশা করছি দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে। পানির পিএইচ, দ্রুবিভূত অক্সিজেন, এমোনিয়া, হার্ডনেস, টিডিএস স্বাভাবিক আছে।’

তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে কেউ পাহাড়ি ছড়ায় বিষ লতা দেয়ার কারণে মাছ মারা যাচ্ছে। পানি ও মাছের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এগুলো পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হবে। এছাড়া ওই এলাকায় জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম হাতে নেওয়া হয়েছে যাতে ভবিষ্যতে একরকম ঘটনা না ঘটে।’

বড়লেখা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. শামীম আল ইমরান বলেন, ‘মৎস্য কর্মকর্তা, ওসি ও রেঞ্জ কর্মকর্তাসহ মাধবকুণ্ড- এলাকা পরিদর্শন করেছি। পানি পরীক্ষা হয়েছে। পানিতে অক্সিজেন এবং এমোনিয়ামের মাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি পাওয়া গেছে। ওষুধ ছিটানো হয়েছে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত