কুলাউড়া প্রতিনিধি

০১ ডিসেম্বর, ২০১৯ ১৮:২৩

কুলাউড়ায় ওয়াকফ এস্টেটের ভূমি দখলের অভিযোগ

মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার হাজিপুরে মকবুলুর রহমান চৌধুরী ওয়াকফ এস্টেটের ৭ শতক ভূমি দখল নিয়ে বিরোধের সৃষ্টি হয়েছে। ৫৬ সালের এসএ ও বর্তমান ভূমি জরীপে ওয়াকফ এস্টেটের নামে রেকর্ডভুক্ত ওই ভূমি মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ মিয়াসহ তার পরিবারের সদস্যদের কর্তৃক দখলের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ নিয়ে কয়েক দফায় সামাজিক বৈঠক এবং থানা ও আদালতে পাল্টাপাল্টি মামলা হয়েছে।

জানা যায়, উপজেলার হাজীপুর ইউনিয়নের পীরের বাজারে পাবই মৌজায় এস.এ রেকর্ডে ৬৭১ নং খতিয়ানে ৪১২১ দাগে ৬০ শতক জমির মধ্যে ৭ শতক জমি ও আর এস রেকর্ডে ৩৩১১ খতিয়ানে সাবেক ৪১২১ দাগে ৭ শতক জমি ওয়াকফ এস্টেটের নামে রেকর্ডভুক্ত হয় ১৯৫৬ সালের মাঠ জরিপের সময়। তখন ওই জমি দেখাশুনার দায়িত্ব দেয়া হয় মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ মিয়ার পিতা আব্দুর রহিমকে। মুক্তিযোদ্ধার পিতা আব্দুর রহিম জমি ভোগদখলে থাকা অবস্থায় ১৯৬৯ সালে জমির ওপর মৌলভীবাজার মুনসেফী আদালতে রেকর্ড সংশোধনের মামলা করেন। ১৯৭০ সালে রায়ের সময় ওয়াকফ এস্টেটের কেউ বিবাদী হিসেবে উপস্থিত না থাকায় একতরফাভাবে আব্দুর রহিমের পক্ষে আদালত রায় দেয়। সেই রায়ের প্রেক্ষিতে মুক্তিযোদ্ধা পরিবার জমিতে দখলে আছেন।

শেষ ভূমি জরীপের মাঠ পর্চা ওয়াকফ এস্টেটের নামে ৪১২০ দাগে ৩৭ শতক, ৪১২১ দাগে ৬০ শতক, ৪১২২ দাগে ৬৪ শতক, ৪১২৪ দাগে ৩৪ শতক জমি রেকর্ডভুক্ত হয়। এই চার দাগের জায়গায় মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ মিয়াসহ তার আত্মীয়-স্বজন ভোগ-দখলে আছেন। কিন্তু ৪১২১ দাগের ৬০ শতক জমির ৭ শতকের মধ্যে লিজকৃত ৪শতক জমি নিয়ে প্রবাসী বদরুল ইসলামের সাথে বিরোধ বাঁধে মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের।

এদিকে মকবুলুর রহমান চৌধুরী ওয়াকফ এস্টেটের বর্তমান মোতোয়ালি আব্দুল মোতাকাব্বির চৌধুরীর (জীন বিজ্ঞানী আবেদ চৌধুরী) পক্ষ থেকে এস্টের ওয়াকফকৃত ভূমি দখলমুক্ত করতে ওয়াকফ প্রশাসক বাংলাদেশ বরাবরে একটি অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

চলতি বছরের গত ১৩ সেপ্টেম্বর রাতে মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ মিয়ার পরিবারের লোকজন মকবুলুর রহমান চৌধুরী ওয়াকফ এস্টেটের ৭শতক জমির গাছপালা কেটে দখলে নিয়েছিলেন। সেখানে ‘মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ মিয়ার ক্রয়কৃত’ উল্লেখ করে একটি সাইনবোর্ডও স্থাপন করেছিলেন তারা। এ ঘটনায় ওয়াকফ এস্টেটের জমি ভোগদখলকারী পিয়ারা বেগম ১৮ সেপ্টেম্বর কুলাউড়া থানায় একটি মামলা (নং-২৩) দায়ের করেন। এরপর দুই দফায় সামাজিক বৈঠক বসলেও কোন সমাধান হয়নি।

গত ১ নভেম্বর শুক্রবার বিকেলে হাজীপুর পীরের বাজারে সামাজিক বৈঠক হয়েছিলো। বৈঠকে কুলাউড়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এ কে এম সফি আহমদ সলমানের সভাপতিত্বে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (কুলাউড়া সার্কেল) সাদেক কাওছার দস্তগীর, কুলাউড়া থানার ওসি মো. ইয়ারদৌস হাসান, হাজিপুর ইউপি চেয়ারম্যান আব্দুল বাছিত বাচ্চু। বৈঠকে জমির কাগজপত্র সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করা হয়। সেখানে দখলদার মুক্তিযোদ্ধা পরিবার কোন সঠিক কাগজপত্র উপস্থাপন করতে পারেননি। বৈঠকে মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ মিয়া জমির সঠিক কাগজপত্র দেখাতে না পারায় দখলদারদের ‘মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ মিয়া’ পৈত্রিক সূত্রে জায়গার মালিক সম্বলিত সাইনবোর্ড অপসারণ করে ওয়াকফ এস্টেট কর্তৃপক্ষকে জমি বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। এরপর মকবুলুর রহমান ওয়াকফ এস্টেটের কাছ থেকে ৪ শতক জমির লিজ গ্রহীতা প্রবাসী মো. বদরুল ইসলাম প্রবাসে চলে যান। সেই সুযোগে মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ মিয়া ও তাঁর পরিবারের লোকজন লিজকৃত জমি তাদের দখলে নেন।

গত ৫ নভেম্বর মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ মিয়া বিরোধপূর্ণ ৭ শতক জমি যাতে কেউ দখল করতে না পারে সেজন্য নিজে বাদী হয়ে আদালতে (মামলা নং-২৭৭) দায়ের করেন। আদালত সেখানে ১৪৪ ধারা জারি করে। কিন্তু বাদী নিজেই ১৪৪ ধারা নিষেধাজ্ঞা ভেঙে সেই ৭শতক জমি আবারো দখলে নেন।

এ ব্যাপারে মুক্তিযোদ্ধা সিরাজ মিয়া বলেন, ৫৬ সালের জমিটি ওয়াকফ এস্টেটের ছিল। ৬৯ সালে সেটা আমার পিতা ক্রয় করেন এবং আদালতে রেকর্ড সংশোধনের মামলা করলে রায় আমাদের পক্ষে আসে। সেই রায়ের প্রেক্ষিতে আমি জমিতে দখলে আছি। আদালত বিবাদীদের শোকজ করেছে।

চৌধুরী পরিবারের সদস্য মেজর (অব.) নুরুল মান্নান চৌধুরী বলেন, রেকর্ড পত্রের মাধ্যমে জমির মালিকানা নির্ধারণ হয়। রেকর্ডপত্রে যার কাগজাদি সঠিক থাকবে সেই জমির প্রকৃত মালিক বলে গণ্য হবে। জমি নিয়ে উত্তেজনা না ছড়িয়ে মামলার আলোকে মীমাংসা হওয়া যুক্তিযুক্ত বলে মনে করি। রেকর্ডপত্রে যদি মুক্তিযোদ্ধা পরিবার জমির প্রকৃত মালিক বলে আদালত থেকে নির্দেশনা আসলে আমাদের কোন আপত্তি নেই। কিন্তু এই জমি নিয়ে এলাকায় একটি মহলের ইন্ধনে নানা ষড়যন্ত্র চলছে।

এ ব্যাপারে অতিরিক্ত পুলিশ (কুলাউড়া সার্কেল) সাদেক কাওসার দস্তগীর বলেন, আদালত থেকে যে রায় আসবে সেই প্রেক্ষিতে জমি হস্তান্তরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত