নবীগঞ্জ প্রতিনিধি

৩০ ডিসেম্বর, ২০১৯ ১৭:৩৩

নবীগঞ্জে কুশিয়ারা নদীগর্ভে ২৫ গ্রামের শতাধিক ঘরবাড়ি

নবীগঞ্জ উপজেলার দীঘলবাঁক আউশকান্দি ও ইনাতগঞ্জ ইউনিয়নের ২৫টি গ্রামের শতাধিক পরিবারের ঘরবাড়ি ও শতাধিক একর ফসলি জমি কুশিয়ারা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। একই অবস্থা বিরাজ করছে নদীর অপর পারে জগন্নাথপুর উপজেলার ৩টি ইউনিয়নে। গত দুদিনে কুশিয়ারা নদী ভাঙনে এলাকার শতাধিক পরিবার ভিটেমাটি হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছেন। এদের মধ্যে অন্তত অর্ধশতাধিক পরিবার সড়কের উপর খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

উপজেলার দীঘলবাক ইউনিয়নের দীঘলবাক প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাদ্রাসা, উচ্চ বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হওয়ায় শিক্ষার্থীদের শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। বর্তমান নতুন স্থানে নির্মিত উচ্চ বিদ্যালয়টি বিলীন হবার পথে। এই পরিস্থিতিতে সরকারি কোন সংস্থা থেকে অসহায় পরিবারগুলোর সাহায্যে কেউ এগিয়ে না আসায় স্থানীয়রা ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন।

দীঘলবাঁক ইউপির সাবেক মেম্বার মো. ফরিদ মিয়া জানান, বর্ষায় ভাঙন দেখা গেলেও এখন হঠাৎ করেই কুশিয়ারার ঘূর্ণি স্রোতের আঘাতে এ ইউনিয়নের ২০টি গ্রাম ভেঙে যেতে থাকে। একদিনেই আধা কিলোমিটার এলাকার ধানী জমি কুশিয়ারার গর্ভে হারিয়ে যায়।

জানা যায়, গত কয়েক দিনে কুশিয়ারা নদীর অব্যাহত ভাঙনে দীঘলবাক উচ্চ বিদ্যালয় সংলগ্ন মাঠ ও বাড়ি ঘর বিস্তীর্ণ এলাকা নদীভাঙনের শিকার হয়। গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে এসব এলাকার অর্ধশতাধিক ঘরবাড়ি, জমিজমা ও সড়ক নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। কয়েক দিন আগে নদীর গতিপথ হঠাৎ পরিবর্তন হয়ে এক রাতেই দীঘলবাক উচ্চ বিদ্যালয় ভবনে আঘাত হানে। তাৎক্ষণিকভাবে ভবনটি অপসারণের কাজ শুরু করে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।

দীঘলবাক উচ্চ বিদ্যালয় এর ৫শ শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন চরম হুমকির মুখে পড়েছে। এই বিদ্যালয়ে প্রত্যন্ত জনপদের তিনটি ইউনিয়নের ২০টি গ্রামের ছাত্রছাত্রীরা লেখাপড়া করে।

দীঘলবাঁক গ্রামের ডা. শাহ ইউসুফ আলী বলেন, মানুষ বাড়িঘরে হঠাৎ করে ভাঙনের ফলে কোনো কিছু সরানোর সময়ও পাওয়া যায়নি। ভাঙনের ভয়াবহতায় আতংক ছড়িয়ে পড়ে সর্বত্র। গত ৬ অক্টোবর মালেক মিয়ার বাগানের প্রায় লক্ষাধিক টাকার গাছ বসতবাড়ি চোখের পলকে কুশিয়ারার  তলিয়ে গেছে।

জামারগাঁও গ্রামের ফারুক মিয়া বলেন, এক একটি মাটির চাঁকা (ভাঙ্গনের মাটির পরিমাণ) ধসে পড়ছে প্রায় এক একর জমি নিয়ে। যেকোনো মুহূর্তে আমাদের এলাকায় ২৫টি গ্রাম বিলীন হওয়ার আশংকা রয়েছে। স্বাধীনতার পর থেকে এখন পর্যন্ত ভাঙনে ২৫টি  গ্রামের ১২/১৩শ’ বাড়ির মধ্যে এখন মাত্র পাঁচ থেকে সাতটি পুরানো বাড়ি অবশিষ্ট আছে। সব কিছুই সর্বনাশী কুশিয়ারা খাইছে। আগামী দুই চারদিনের মধ্যে সেগুলোও নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাবে বলে আশংকা করা হচ্ছে।

শ্রীমঙ্গলে বাসা ভাড়া করে থাকেন শাহ আশ্রব আলী। তিনি বলেন, পৈত্রিক বাড়ির এলাকা ভেঙে যাচ্ছে খবর পেয়ে ছুটে এসেছি। ভাঙনের এমন ভয়াবহতা গত কয়েক বছরে দেখা যায়নি।  

স্থানীয় আউশকান্দি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দিলওয়ার হোসেন জানান, নবীগঞ্জ, জগন্নাথপুর ও আজমিরিগঞ্জ উপজেলার ১০টি ইউনিয়নের মানুষ কুশিয়ারা নদীর তীরে বসবাস করেন। গত এক সপ্তাহে কুশিয়ারা নদীর তীরের বসবাসকারী অন্তত দুই শতাধিক পরিবার বাড়িঘর হারিয়ে পথের ফকির হয়ে গেছে। এদের কেউ কেউ আত্মীয় স্বজনের বাড়িতে, আবার কেউ খোলা আকাশের নিচে বেড়িবাঁধে বা সড়কে আশ্রয় নিয়েছে।

কলেজ শিক্ষক সোহাগ রহমান সোহাগ জানান, গত এক সপ্তাহে ওই এলাকার ২৫ থেকে ৩০টি গ্রামের অনেক বাড়িঘর বিলীন হয়ে গেছে। হঠাৎ করে ভাঙন তীব্র আকার ধারণ করেছে। আর মুহূর্তের মধ্যে বিস্তীর্ণ এলাকা কুশিয়ারার তলিয়ে যাচ্ছে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নিজামুল হক বলেন, স্কুলটি ভেঙে যাওয়ায় বাধ্য হয়ে ছেলেমেয়েদের নিজের বারান্দায় পড়াচ্ছি। এ স্কুলে দীঘলবাক উচ্চ বিদ্যালয় ২০ গ্রামের ছেলেমেয়েরা পড়ে। দ্রুত নতুন স্কুল নির্মাণের উদ্যোগ না নিলে ওদের শিক্ষাকার্যক্রম ব্যাহত হবে

হবিগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ সহকারী প্রকৌশলী তৌহিদুল ইসলাম বলেন, কুশিয়ারা ডাইক মেরামতের জন্য আমরা পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়কে জানানো হয়েছে। ইতিমধ্যে কুশিয়ারা ডাইক মেরামতে ৫১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে মেঘা প্রকল্পের প্রস্তাব একনেকে পাঠানো হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত