মতিউর রহমান মুন্না, নবীগঞ্জ

০১ জানুয়ারি, ২০২০ ১১:৪৪

নবীগঞ্জে বাণিজ্যিকভাবে বাড়ছে শিম চাষ

কম খরচে বেশি লাভ হওয়ায় শীতকালের সবজি শিম চাষ করে স্বাবলম্বী হয়ে উঠেছেন নবীগঞ্জ উপজেলার পানিউমদাসহ বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের কৃষকরা। প্রতি বছরের মতো এ বছরও নবীগঞ্জের বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ব্যাপক আবাদ হয়েছে শীতের সবজি শিম।

ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ঘেঁষা সবুজের সমারোহ, খাদ্য শস্য ভাণ্ডার হিসেবে পরিচিত ও পাহাড়ি দ্বীপ খ্যাত দিনারপুর অঞ্চলের পানিউমদা ইউনিয়নের মাঠজুড়ে শুধু শিম বাগান আর শিমের বাগান। এছাড়াও নবীগঞ্জের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বাণিজ্যিকভাবে বাড়ছে শিমের চাষ। এখানকার আবাদি জমির একটি বড় অংশে গত দুই যুগের মতো নিজ উদ্যোগে কৃষকরা নানা পদ্ধতিতে বিভিন্ন জাতের শিম চাষ করে আসছেন।

গত কয়েক বছর সবজি আবাদের তালিকায় সবচেয়ে বেশি যোগ হয়েছে শিম। এ আবাদ প্রতিবছরই বেড়ে চলছে। এলাকার শিক্ষিত বেকার যুবক ও পড়াশোনার পাশাপাশি অনেকেই অল্প পুঁজিতে বেশি আয়ের আশায় এই সবজি চাষ শুরু করেছেন।

নবীগঞ্জ কৃষি অফিসের হিসাব মতে, উপজেলায় এ মৌসুমে প্রায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ করা হয়েছে। সরেজমিনে উপজেলার বড়চর, বড়গাঁও, রোকনপুর, খাগাউরা, দত্তগ্রামসহ এলাকার বিভিন্ন গ্রামের মাঠ ঘুরে দেখা যায় এলাকাগুলো যেন শিম দিয়ে ঘেরা। এসব গ্রামে শিমের ব্যাপক আবাদ হওয়ায় শিমের বাগান দেখলে যেন মনে হয় ‘শিম সাগর’। প্রতিটি কৃষক পরিবারই তাদের আবাদি জমিতে নানা পদ্ধতিতে শিম চাষ করছেন। মাঠের পর মাঠ ঘিরে রয়েছে সবুজ শিম ক্ষেত।

কৃষি অফিস ও এলাকাবাসী জানান, এ সব এলাকার অধিকাংশ জমিই শিম চাষের জন্য উপযোগী। মাঠের পর মাঠ এক সময় বিভিন্ন সবজিতে ঠাসা থাকলেও প্রায় এক যুগ ধরে স্থানীয় কৃষকরা নিজ উদ্যোগে শিম চাষ শুরু করেছেন।

বড়চর গ্রামের রাজন আহমেদ। তিনি লেখাপড়ার পাশাপাশি শিম চাষ করেন। তিনি বলেন, এক একর জমিতে শিম চাষ করে বর্তমানে পুরোদমে বিক্রি শুরু করেছেন। এ বছর তিনি ব্যাপক লাভবান হবেন বলে আশাবাদী। এ মৌসুমে শিম চাষে ব্যয় করেছেন ৩০ হাজার টাকা এবং এখন পর্যন্ত প্রায় ৪০ হাজার টাকার শিম বিক্রি করেছেন, আরো ৩০-৩৫ হাজার টাকার শিম বিক্রি করতে পারবেন বলে আশাবাদী।

মাসুম আহমেদ, আব্দুল্লা আল মামুনসহ বেশ কয়েকজন চাষী জানান, ৭-৮বছর ধরে তারা শিম চাষ করছেন, শিম চাষে শারীরিক পরিশ্রম অনেক বেশি। অন্য সবজির চেয়ে এর পরিচর্যা একটু বেশি করতে হয়। তবে তারা মনে করেন কষ্ট হলেও ফলন ভাল হলে শিম চাষে ব্যাপক লাভবান হওয়া সম্ভব এবং বেশ লাভবান হয়েছেন। কীটনাশকের দাম একটু কমালে আরো বেশি লাভবান হওয়ার কথা জানান চাষীরা।

কৃষকদের ভাষ্যমতে বিঘাপ্রতি এ বছর পুরো ২০-২৫ হাজার টাকার মতো খরচ হয়েছে। ফলন ভাল হলে এবং বাজার ভাল থাকলে প্রায় এক লাখ টাকার শিম বিক্রি সম্ভব।

যদিও বর্তমান সময়ে বাজারে পাইকারী মূল্য কম থাকায় ২০/২৫ হাজার টাকার মতো খরচ করে ৫০-৫৫ হাজার টাকা বিক্রি করতে পেরেছেন অনেক কৃষক।

পাইকারদের কাছে প্রতি কেজি শিম ২৫ টাকা ধরে বিক্রি করছেন কৃষকরা। অনেকস্থানে সবজি বাজারে শিম খুচরা মূল্য ৪৫-৫০ টাকা প্রতি কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। শিম কেনাবেচাকে কেন্দ্র করে দিগাম্বর এলাকার গড়ে উঠেছে পাইকারী বাজার।

স্থানীয় দিগম্ভর ও বড়চর পাইকারী কাঁচা বাজারে গিয়ে দেখা যায়, পুরোদমে শিম উঠতে শুরু করছে। এখান থেকে মৌলভীবাজার, সিলেট, সুনামগঞ্জ ও সিলেটের বাহিরের অনেক পাইকাররা সবচেয়ে বেশি শিম কিনে নিয়ে যায়। প্রতিদিনই ট্রাক লোড হয় এখান থেকে। এখনকার কৃষকরা শিম চাষ করে তাদের জীবন-জীবিকা নির্বাহ করছে। আর্থিক ও সামাজিকভাবে এগিয়ে যাচ্ছে কৃষকরা।

চাষীরা জানান, আধুনিক প্রশিক্ষণ ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের নিয়মিত তদারকি থাকলে কৃষকরা গোটা নবীগঞ্জ উপজেলার অর্থনীতিকে আরও মজবুত করতে সক্ষম হবে। একই সঙ্গে নিজেদেরও আর্থসামাজিক মর্যাদাও বাড়বে। কৃষি কাজে আগ্রহ বাড়াতে সার-বীজসহ সার্বিক সহযোগিতার মাধ্যমে সরকারকে আরো আন্তরিক হওয়ার দাবি কৃষকদের।

নবীগঞ্জ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা একেএম মাকসুদুল আলম জানান, কৃষি কর্মকর্তাদের সার্বক্ষণিক শিম চাষীদের পরামর্শ দিয়ে যাওয়ায় আবাদ ও ফলন ভাল হওয়ায় দামও ভাল পাচ্ছেন কৃষকরা, এ মৌসুমে প্রায় ৪৫০ হেক্টর জমিতে শিম চাষ করা হয়েছে। অনেকের দেখাদেখি অনেক নতুন কৃষক শিম চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছেন, আমাদের কাছে নানা পরামর্শ চাচ্ছেন।

তিনি আরো বলেন, নবীগঞ্জবাসীর জন্য খুশির সংবাদ হচ্ছে, নবীগঞ্জের শিম দেশের বাইরে রপ্তানির জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। খুব শীঘ্রই নবীগঞ্জের শিম দেশের বাহিরেও বিক্রি হবে বলে আশাবাদী।

আগামীতে এ অঞ্চলে শিমের আবাদ আরো বাড়বে বলে মনে করছে কৃষি বিভাগ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত