কমলগঞ্জ প্রতিনিধি

১২ জানুয়ারি, ২০২০ ১৮:৫৩

চা শ্রমিকদের ভূমি অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে: পরিবেশ ও বন মন্ত্রী

কমলগঞ্জে বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের বার্ষিক সাধারণ সভা

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন বলেছেন, কাগজপত্রে নাম না থাকলেও একটানা ১২ বছর বসবাস করলে কেউ আপনাদের ভিটে থেকে উচ্ছেদ করতে পারবে না। কোন বাগান কর্তৃপক্ষ চা শ্রমিকদের উচ্ছেদ করতে চাইলে আপনারা আমাদের জানাবেন। আমরা সাথে সাথে ব্যবস্থা নিব। চা শ্রমিকদের ভূমি অধিকার প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এটা নিশ্চিত করা হবে। আপনারা ভূমির মালিক হয়ে গেছেন।

রোববার (১২ জানুয়ারি) বিকাল ৪টায় মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার আলীনগর চা বাগান নাট মন্দির প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের বার্ষিক সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন ।

এসময় তিনি আরও বলেন, চা শ্রমিকদের জীবনমান উন্নয়নে বর্তমান সরকার কাজ করে যাচ্ছে। চা শ্রমিকদের ন্যায্য দাবী দাওয়া বাস্তবায়নে প্রধানমন্ত্রী অত্যন্ত আন্তরিক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান চা শ্রমিকদের ভোটাধিকার দিয়েছিলেন। তাই চা শ্রমিকরা যেমন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অত্যন্ত ভালবাসেন। তেমনি প্রধানমন্ত্রীও চা শ্রমিকদের ভালবাসেন। চা-শ্রমিকদের কথা মনোযোগ সহকারে শোনেন।

মন্ত্রী বলেন, বর্তমান শেখ হাসিনা সরকারের আমলে চা শ্রমিকদের ভাগ্যের অনেক পরিবর্তন হয়েছে। তাদের জীবনমান উন্নয়ন হয়েছে। চা শ্রমিক সন্তানরা শিক্ষিত হচ্ছে। বিসিএস ক্যাডার হয়েছে। বিভিন্ন দপ্তরের তাদের চাকুরী হচ্ছে। চা শিল্পের প্রাণ হচ্ছে চা শ্রমিকরা। যে কোন অবস্থায় চোরাই পথে বাংলাদেশে চাপাতা আসা বন্ধ করতে তিনি স্থানীয় প্রশাসনকে নির্দেশ দেন।

চা শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবী নিয়ে মন্ত্রী বলেন, চা বাগান থেকে মদের কারখানা তুলে দেয়া হবে। চা শ্রমিকদের মজুরী অবশ্যই বৃদ্ধি করা হবে। শেখ হাসিনা চা শ্রমিকদের অত্যন্ত ভালবাসেন। চা শ্রমিকদের চুক্তি সম্পাদনে দীর্ঘসূত্রিতা যাতে না হয় সে ব্যাপারে আপনারা যত্নবান হবেন। বিদ্যালয়বিহীন চা বাগানে বিদ্যালয় করা হবে। সব শ্রমিকদের বাসস্থানে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হবে। চা শ্রমিকদের সকল দাবী দাওয়া প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরা হবে।

বাংলাদেশ চা শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি মাখনলাল কর্মকারের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সাবেক চিফ হুইপ, অনুমিত হিসাব সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি উপাধ্যক্ষ ড. মো. আব্দুস শহীদ, কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের সাবেক সদস্য কমলগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. রফিকুর রহমান, শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রণধীর কুমার দেব, বাংলাদেশীয় চা সংসদের চেয়ারম্যান এম, শাহ আলম, আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থার ইনডিজিনাস এন্ড ট্রাইবাল পিপলস প্রজেক্টের ন্যাশনাল প্রজেক্ট কো-অর্ডিনেটর আলেক্সসিউস চিছাম, কমলগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আশেকুল হক, শ্রম অধিদপ্তর শ্রীমঙ্গলের উপ পরিচালক নাহিদুল ইসলাম।

বার্ষিক সাধারণ সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক ও কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান  রামভজন কৈরী।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন কমলগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আছলম ইকবাল মিলন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এএসএম আজাদুর রহমান, শ্রীমঙ্গল উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান প্রেমসাগর হাজরা, কমলগঞ্জ পৌরসভার মেয়র মো. জুয়েল আহমদ, কমলগঞ্জ থানার ওসি আরিফুর রহমান, মাধবপুর ইউপি চেয়ারম্যান পুষ্প কুমার কানু, কমলগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ছিদ্দেক আলী।

চা শ্রমিক নেতা সজল কৈরী ও মীনা রবিদাসের যৌথ পরিচালনায় সভায় অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন চা শ্রমিক নেতা পংকজ কন্দ, বিজয় হাজরা, কমল চন্দ্র বুনার্জী প্রমুখ।

বার্ষিক সাধারণ সভায় বাংলাদেশের ৭টি ভ্যালীর সভাপতি-সম্পাদক, বাগান পঞ্চায়েত সভাপতি-সম্পাদক, শ্রমিক নেতৃবৃন্দ সহ কয়েক হাজার নারী-পুরুষ চা-শ্রমিক উপস্থিত ছিলেন।

সভায় বাগান মালিক ও শ্রমিকদের মধ্যে আরও সু-সম্পর্ক গড়ে ওঠার লক্ষ্যে চা শ্রমিকদের দীর্ঘদিনের দাবিসমূহ পূরণ ও তাদের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে সকলের সহযোগিতা ও ঐক্যবদ্ধতা কামনা করেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রামভজন কৈরী।

অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় পতাকা, জাতীয় সংগীত ও পায়রা উড়িয়ে অনুষ্ঠানে উদ্বোধন করেন পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন। পরে ৭টি ভ্যালীর দলীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়।  অনুষ্ঠানে ২৩০টি চা বাগানের প্রায় ৬ হাজার চা শ্রমিকবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।

চা শ্রমিকদের বিভিন্ন দাবী দাওয়ার ব্যাপারে মন্ত্রী একমত পোষণ করে আরও বলেন, ৩৬ টাকা থেকে বর্তমান মজুরি ১০২ টাকা করা হয়েছে। ১০২ টাকা যখন করা হয়েছে ৩০০ টাকা মজুরি করা হবে তা সময় সাপেক্ষ। এব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর সাথে আলাপ আলোচনা করা হবে। বিকাল ৫টায় চা শ্রমিক ইউনিয়নের ২য় অধিবেশন বসে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত