মাধবপুর প্রতিনিধি

১৩ জানুয়ারি, ২০২০ ১৭:০৩

যুদ্ধাপরাধী কায়সারের সাজার রায় বহালের দাবিতে মানববন্ধন

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদন্ডপ্রাপ্ত জাতীয় পার্টির সাবেক মন্ত্রী ও কায়সার বাহিনীর প্রধান সৈয়দ মোহাম্মদ কায়সারের সাজার রায় বহালের দাবিতে মাধবপুরে মুক্তিযোদ্ধারা মানববন্ধন করেছেন।

সোমবার (১৩ জানুয়ারি) সকালে মাধবপুর উপজেলা পরিষদ প্রাঙ্গণে মাধবপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের উদ্যোগে মানববন্ধনে কয়েকশতাধিক মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের পরিবার অংশ নেন।

ট্রাইব্যুনালের দেয়া মৃত্যুদন্ডাদেশ বহালের দাবিতে মানববন্ধনে বক্তব্য দেন মুক্তিযোদ্ধা ক্যাপ্টেন অব. কাজী কবির উদ্দিন, মুক্তিযোদ্ধা সুকোমল রায়, মুক্তিযোদ্ধা শফিকুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা রফিকুল ইসলাম, মুক্তিযোদ্ধা ফুল মিয়া, মুক্তিযোদ্ধা রতি রঞ্জন দাস, মুক্তিযোদ্ধা আব্দুস সামাদ, আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুস কুদ্দুস চকদার মাখন, মুক্তিযোদ্ধা লোকমান মিয়া প্রমুখ।

ক্যাপ্টেন অব. কাজী কবির উদ্দিন মানববন্ধনে বলেন, সৈয়দ মো. কায়সার ডিগবাজী নেতা ছিলেন। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর সহযোগিতায় ৫শ থেকে ৭শ স্বাধীনতা বিরোধীদের নিয়ে কায়সার বাহিনী গঠন করেন। এই মুসলিম লীগ নেতা এ বাহিনীর প্রধান ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাবাহিনীকে পথ দেখিয়ে বিভিন্ন গ্রামে নিয়ে মুক্তিকামী জনগণ ও হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর দমন অভিযান চালিয়েছেন। কায়সার বাহিনীর লোকজন পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর সহযোগিতায় নাসিরনগর, সরাইল, মাধবপুর, চুনারুঘাট সহ বিভিন্ন অঞ্চলে হত্যা, লুটতরাজ, অগ্নিসংযোগ, ধর্ষণ ও ধর্মান্তরিত করেন। যুদ্ধাপরাধী কায়সার ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পাকিস্তান বাহিনী আত্মসমর্পণ করার আগে লন্ডনে পালিয়ে যান। দেশে ফেরেন ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে  হত্যার পর। ১৯৭৮ সালে জিয়াউর রহমানের সময়ে তিনি দেশে রাজনীতিতে সক্রিয় হন। ১৯৭৯ সালে ২য় জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি সিলেট-১৭ আসন থেকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পরে বিএনপিতে যোগ দিয়ে তিনি জেলা বিএনপির সভাপতি হন এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির শাহ আজিজুর রহমান অংশের যুগ্ম মহাসচিবও হন। সামরিক শাসক হুসেইন মো. এরশাদের সময়ে কায়সার আবার জাতীয় পার্টিতে যোগ দেন। ১৯৮৬ সালের হবিগঞ্জ-৪ (মাধবপুর-চুনারুঘাট) থেকে ২ বার সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হয়ে কৃষি প্রতিমন্ত্রী নির্বাচিত হন।

২০১৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর মানবতা বিরোধী অপরাধে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনাল-২ সৈয়দ মো. কায়সারকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করেন। ট্রাইব্যুনাল কায়সারের বিরুদ্ধে মানবতা বিরোধী অপরাধের ১৬টি অভিযোগের মধ্যে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, যুদ্ধশিশু, আটক, মুক্তিপণ আদায়, লুটতরাজ, ধর্মান্তরিতকরণ, অগ্নিসংযোগ এবং ষড়যন্ত্রের ১৪টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়েছে। এরমধ্যে ৭টি অভিযোগের ফাঁসি ৪টি আমৃত্যু কারাদণ্ড ৩টিতে ২২ বছরের কারাদণ্ড ও ২টি অভিযোগ প্রমাণিত হয়নি।

আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনালের আপীল বিভাগ ১৪ই জানুয়ারি সৈয়দ মো. কায়সারের আপীলের দিন ধার্য রয়েছে। যুদ্ধাপরাধী কায়সার বাহিনীর অনেক সদস্য এখনো বিভিন্ন এলাকায় রয়েছে। তাদেরও বিচারের আওতায় নেওয়ার জন্য মুক্তিযোদ্ধারা দাবি করেছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত