তাহিরপুর প্রতিনিধি

১৫ জানুয়ারি, ২০২০ ২২:৫৫

সুনামগঞ্জে মাদ্রাসাছাত্র হত্যার দায় স্বীকার চাচার

সুনামগঞ্জের তাহিরপুরে মাদ্রাসাছাত্র শিশু তোফাজ্জল (৭) অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডে নিজের সম্পৃক্ততা স্বীকার করেছেন সন্দেহভাজন আসামি সারোয়ার হাবিব রাসেল (২১)।

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) বেলা ১টা হতে ৫টা পর্যন্ত জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের বিচারক শুভদ্বীপ পাল পুলিশি রিমান্ডে থাকা সারোয়ার হাবিব রাসেলের জবানবন্দি গ্রহণ করেন।

রাসেলের বাড়ি উপজেলার শ্রীপুর উত্তর ইউনিয়নের চারাগাঁও সীমান্তের বাঁশতলা গ্রামে। তার বাবার নাম হাবিবুর রহমান হবি। সম্পর্কে আসামি রাসেল তোফাজ্জলের বাবার আপন ফুফাতো ভাই অর্থাৎ নিহতের চাচা।

আদালত সূত্র জানায়, গত ৮ জানুয়ারি বুধবার বিকেলে উপজেলার বাঁশতলা গ্রামের জুবায়ের হোসেনের ছেলে তোফাজ্জলকে অপহরণ ও হত্যাকাণ্ডে অন্যান্যদের সঙ্গে নিজের সম্পৃক্ততা থাকার দায় স্বীকার করে রাসেল আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি প্রদান করেন। নিজ বসতঘরের শয়ন কক্ষ হতে আলামত হিসাবে জব্দকৃত বক্সখাটের ড্রয়ারের রাখা রক্তমাখা ভেঁজা লুঙ্গি, সোফার ওপর রাখা বালিশের দুটি রক্তমাখা ভেঁজা তোয়ালে ,বক্সখাটের বিছানার নিচে রাখা ৮০ হাজার টাকা মুক্তিপণ চেয়ে লেখা চিরকুটের খাতার অবশিষ্ট অংশ নিজের বলে আদালতে স্বীকার করেন।

মঙ্গলবার রাতে পুলিশ সুপার মো. মিজানুর রহমান পিপিএম যুগান্তরকে বলেন, এ নৃশংস হত্যাকাণ্ডে রাসেল ছাড়াও আরও কে বা কারা জড়িত রয়েছে তা বলার সময় এখনও হয়নি।

তদন্ত শেষে সংবাদ সম্মেলনে মাধ্যমে কি কারণে শিশু তোফাজ্জলকে অপরহণসহ হত্যা করা হলো সে বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হবে। প্রসঙ্গত গত ৮ জানুয়ারি বিকেলে উপজেলার চারাগাঁও সীমান্তের বাঁশতলা গ্রামের জুবায়েরের ছেলে মাদ্রাসাছাত্র তোফাজ্জল হোসেন নিজ গ্রাম হতে নিখোঁজ হন।

পরদিন বৃহস্পতিবার এ ঘটনাটি পরিবারের পক্ষ হতে থানায় লিখিতভাবে জানানো হয়।

এরপর শনিবার ভোররাতে উপজেলার বাঁশতলা গ্রামের এক প্রতিবেশীর বাড়ির পেছনে সিমেন্টের বস্তায় বন্দি অবস্থায় শিশু তোফাজ্জলের লাশ উদ্ধার করেন থানা পুলিশ।

শিশু তোফাজ্জলের এক চোখ উপড়ে ফেলে ও এক পা ভেঙ্গে তাকে নৃশংসভাবে হত্যার করে তার মরদেহ বস্তায় ভরে ফেলে রেখে যায় ঘাতকরা।

লাশের পাশে রাখা অপর একটি সিমেন্টের বস্তায় বাঁধা ৬টি ইট জব্দ করে থানা পুলিশ।

পুলিশের ধারণা, শিশুটিকে হত্যার পর অপর সিমেন্টের বস্তা ভর্তি ইটগুলো মরদেহের সঙ্গে বেঁধে গ্রামের সামনে থাকা সংসার হাওরের গভীর পানিতে ফেলে দিয়ে লাশ গুমের পরিকল্পনা করেছিল ঘাতকরা।

কিন্তু সীমান্তে বিজিবির টহল থাকায় ও ভোরের আলো ফুঁটে ওঠার কারণে জনচলাচলের মুখে লাশ গুমের চেষ্টা ব্যর্থ হয় ঘাতকদের।

পরে বস্তাবন্দী তোফাজ্জলের লাশ প্রতিবেশীর বাড়ির পেছনে ফেলে রেখে চলে যায় ঘাতকরা।

এ লোমহর্ষক ঘটনায় সোমবার রাতে থানা পুলিশ জেলা কারাগারে সন্দেহভাজন আসামি হিসাবে আটক থাকা নিহত তোফাজ্জলের ফুফু শিউলি, শিউলির ফুফাতো ভাই রাসেলেকে পাঁচ দিন এবং চাচা লোকমান হোসেন, সালমান হোসেন, শিউলির ফুফা হাবিবুর রহমান হবি, শশুড় কালা মিয়া, জামাই সেজাউল কবিরসহ পাঁচ আসামিকে তিন দিনের জন্য রিমান্ডে নিয়ে আসে।

শিউলিকে সোমবার রাতে সুনামগঞ্জ সদর মডেল থানা হেফাজতে ও শিউলির ফুফাতো ভাই সারোয়ার হাবিব রাসেলকে তাহিরপুর থানা হেফাজতে রেখে রিমান্ডে পুলিশি জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

নিহত পরিবারের লোকজনের অভিযোগ, অপহরণের পর চিরকুট লিখে ৮০ হাজার টাকা মুক্তিপণ না পেয়ে তোফাজ্জলকে হত্যা করা হয়।

নিহত তোফাজ্জল প্রথম শ্রেণিতে পড়ুয়া স্থানীয় মাদ্রাসার ছাত্র ছিল।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত