হবিগঞ্জ প্রতিনিধি

১৬ জানুয়ারি, ২০২০ ১৪:২৬

পইল গ্রামের মাছের মেলায় ১০-১২ কোটি টাকার মাছ বিক্রি

পৌষ সংক্রান্তিতে হবিগঞ্জের পইল গ্রামে ঐতিহ্যবাহী মাছের মেলায় এবার ১০ থেকে ১২ লাখ দর্শনার্থী মানুষের সমাগম হয়েছে। এবারের মেলায় ১০-১২ কোটি টাকার মাছ বিক্রি হয়েছে।

মেলায় প্রায় ৩০ কেজি ওজনের আকর্ষণীয় একটি সর্ববৃহৎ বাগাইর মাছ বিক্রি হয় ৪৫ হাজার টাকায়। মাছটি শেরপুর থেকে নিয়ে আসেন মো. নূর আলী।

বুধবার (১৫ জানুয়ারি) হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পইল গ্রামে দিনব্যাপী ঐতিহাসিক পৌষ সংক্রান্তির মাছের মেলার আয়োজন করা হয়।

হিন্দু সম্প্রদায়ের পৌষ সংক্রান্তি উপলক্ষে এর আয়োজন হলেও এ যেন সকল সম্প্রদায়ের এক মিলনমেলা ও প্রাণের উৎসব। ২০০ বছরের পুরোনো এ মেলায় বিশেষত্ব হলো মাছ। মেলায় সবচেয়ে বড় বাগাইর মাছটির দাম হাঁকা হয়েছে ৬৫ হাজার টাকা। পইল গ্রামের মো. নূর আলী শেরপুর থেকে বাগাইর মাছটি সংগ্রহ করে মেলায় তুলেন। মাছটি দেখতে হাজারো উৎসুক জনতা ভিড় জমায়।

৬৫ হাজার টাকা হাঁকা হলেও শেষ পর্যন্ত মাছটি বিক্রি হয়েছে ৪৫ হাজার টাকায়।

পইল গ্রামের মাছ ব্যবসায়ী আব্দুর রউফ জানান, গত বছরের ন্যায় এবার প্রায় তিনগুণ পরিমাণ বেশি মাছ মেলায় আমদানি হয়েছে।

তিনি বলেন, মেলায় কয়েকশ ব্যবসায়ী ছোট-বড় প্রায় আড়াইশ থেকে ৩শ মেট্রিক টন মাছ মেলায় আমদানি করেছেন। প্রতি কেজি ২শ টাকা থেকে ১২শ টাকা কেজিতে মাছ বিক্রি হয়েছে। সে হিসেবে মাছের গড় মূল্য ৪শ টাকা হারে ধরে ওই পরিমাণ মাছের দাম ১০ থেকে ১২ কোটি টাকার বেশি হবে।

উল্লেখ্য, প্রায় ২০০ বছর আগে থেকে প্রচলিত হবিগঞ্জ সদর উপজেলার পইল গ্রামের পরিত্যক্ত একটি দিঘীর মাঠে প্রতি বছরের ন্যায় এবারও বুধবার দিনব্যাপী পৌষ সংক্রান্তিতে এ মেলার আয়োজন করে স্থানীয় পইল গ্রামের লোকজন। মেলায় ব্রাহ্মণবাড়িয়া, মৌলভীবাজার, সিলেট ও কিশোরগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী জেলা থেকে জেলেরা বড় বড় মাছ বিক্রি করতে মেলায় আসেন।

মেলায় এবার বাঘাইর, রুই, কাতলা, রিটা, বোয়াল, চিতল, কার্ফু, কালিবাউস, গ্রাসকার্পসহ নানা জাতের মাছ উঠেছে। এ ছাড়া এখানে ৫ হাজার টাকা থেকে ২০ হাজার টাকা মূল্যের অনেক মাছ বিক্রি হয়। মাছের মেলার নামে মেলায় বিক্রি হয় নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রীও।

মেলায় ছিল শিশু-কিশোরদের উপচে পড়া ভিড়। নাগরদোলাসহ শিশুদের বিনোদনের জন্য ছিল নানা আয়োজন। তবে এবার মাছের মেলায় কৃষিজ, গৃহস্থালি, প্রসাধনী সামগ্রী ও ফার্নিচার পণ্যের সমাহার ছিল লক্ষণীয়। মেলায় হবিগঞ্জসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার লোকজনের ভিড়ের জন্য কয়েকশ মিটার দূরে যানবাহন রেখে দর্শনার্থীদের আসতে হয়েছে।

মেলা উদযাপন কমিটির সভাপতি পইল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ মঈনুল হক আরিফ জানান, উপমহাদেশের প্রখ্যাত বাগ্মিনেতা বিপীন পালের জন্মস্থান পইল গ্রামে। এই মাছের মেলা ২০০ বছরের ঐতিহ্য লালন করছে। মেলাপ্রেমী লোকেরা যাতে নিরাপদে যাতায়াত করতে পারেন সে লক্ষ্যে মেলা উদযাপন কমিটি স্বেচ্ছাসেবী বাহিনী নিয়োগ করেছে, কারো কোন অসুবিধা হবে না। যুগ যুগ ধরে চলে আসা এ মেলাটি এলাকার সাধারণ মানুষের একটি প্রাণের উৎসব। শহরের উপকণ্ঠে অবস্থিত হলেও পইল গ্রামের সাথে আরো উন্নত যোগাযোগ গড়ে তোলা হবে।

এ মেলাকে গিরে পইলসহ পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতে চলে ঈদের ন্যায় আনন্দ উৎসব। দূর-দূরান্তের আত্মীয়স্বজনদের নিমন্ত্রণ করা হয়। ঘরে ঘরে তৈরি হয় হরেক রকমের পিঠা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত