মৌলভীবাজার প্রতিনিধি

১৬ জানুয়ারি, ২০২০ ২৩:৫০

রাজনগরে সরকারি ধান ক্রয়ের বিতর্কিত তালিকা নিয়ে সংঘর্ষ, আহত ২

মৌলভীবাজারের রাজনগরে সরকারিভাবে আমন ধান ক্রয়ের কৃষক তালিকা নিয়ে দুইটি গ্রুপের মধ্যে সংঘর্ষ  ঘটেছে। এ সময় ২ জন আহত হয়েছেন এবং মনসুর নগর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফরজান মিয়ার দোকান ভাংচুর করা হয়েছে।

প্রশাসন ও স্থানীয়সূত্রে জানা জায়, চলতি মৌসুমের আমন ধান ক্রয় করাকে নিয়ে ক্ষমতাসীন দলের একটি সিন্ডিকেট গড়ে ওঠে। কিন্তু কৃষিবিভাগ ও উপজেলা প্রশাসনের তৎপরতায় এই সিন্ডিকেট ধান বিক্রি করতে পারেনি। এর জের ধরে কিছুদিন থেকে চাপা উত্তেজনা বৃহস্পতিবার সংঘর্ষে রূপ নেয়।

উপজেলা কৃষি বিভাগ জানায়, চলতি বছরে কৃষকদের থেকে আমন ধান ক্রয়ের জন্য ৯ হাজার কৃষক থেকে ১ হাজার ৪শ' ১৭জনের তালিকা করে স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা। তালিকার প্রকাশের পর এ নিয়ে শুরু হয় বিতর্ক। রাজগরের মাঠ পর্যায়ে অনুসন্ধান করে দেখা যায়, তালিকায় অর্ধেকের বেশী ভুয়া কৃষক। এমনকি একটি ফোন নাম্বার দিয়ে তালিকায় ঢুকেছেন ৫৭ জন।

কৃষকরা অভিযোগ করে বলেন, মাঠ পর্যায়ের কৃষি কর্মকর্তা, স্থানীয় খাদ্য বিভাগের কর্মকর্তা, ধান ব্যবসায়ী ও সরকার দলের একটি অংশের সমন্বয়ে গড়ে উঠে একটি শক্তিশালী সিন্ডিকেট। এই সিন্ডিকেটের উদ্দেশ্য প্রকৃত কৃষকদের ঠকিয়ে কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়া। আর তাই ভুয়া কৃষকদের নিয়ে তৈরি করা হয়েছে বিতর্কিত তালিকা।

তবে সংশ্লিস্টরা দাবি করেছেন, তালিকায় ভুল ছিল না, কিন্তু হাতে লেখা তালিকা প্রিন্ট হয়ে আসার সময় সঠিক তালিকা বদলে যায়। জাতীয় পরিচয় পত্রের নাম্বারসহ হাতে লেখা তালিকা প্রিন্টের জন্য দেওয়া হয় উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক অসীম তালুকদারকে। সে তালিকা অসীম কুমারের হাত থেকে যখন প্রিন্ট হয়ে আসে তখন ঢুকে পড়ে ভুয়া কৃষক।
 
রাজনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌসি আক্তার জানান, তালিকা নিয়ে বিতর্ক শুরু হওয়ার পর কিভাবে তালিকা বদলে গেছে তা জানতে আমি দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের তলব করি। তখন উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক অসীম কুমার জানান, একটি সিন্ডিকেটের প্রভাবে এবং চাপে এই তালিকা বদলে দিতে হয়েছে। প্রভাবশালী সিন্ডিকেটের কারণে বাধ্য হয়েছিলেন বলে জানান তিনি। তিনি সিন্ডিকেটের সদস্যের নামও লিখিতভাবে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে জমা দিয়েছন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, এই সিন্ডিকেটে উপজেলা যুবলীগের সভাপতি ময়নু ইসলাম খানের নেতৃত্বে পাঁচজন ধান মিলের মালিক রয়েছেন। উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক সিন্ডিকেটের নাম প্রকাশের পর তারা ক্ষুব্ধ হয়ে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের কিছু নেতাকর্মী নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের সামনে মহড়া দেয় এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার অপসারণ দাবী করে স্লোগান দেন।

এ বিষয়ে উপজেলা যুবলীগের সভাপতির কাছে জানতে চাইলে তিনি জানান, কৃষকের তালিকা নিয়ে ঝামেলা আছে এবং গৃহহীনদের ঘরের কাজে দুর্নীতি করা হয়েছে তাই আমরা এখানে অবস্থান নিয়েছি। তিনি ধান ক্রয়ের সিন্ডিকেটের সাথে যুক্ত কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, তালিকা করেছে প্রশাসন দায় থাকলে প্রশাসনের থাকবে। আমরা সিন্ডিকেটে ঢুকব কি করে।

তবে এই অবস্থান কোন দলের সিদ্ধান্ত নয় জানিয়ে রাজনগর উপজেলা ছাত্রলীগের সভাপতি রুবেল আহমদ বলেন, যারা এখানে অবস্থান নিয়েছিল তারা ব্যক্তিগত স্বার্থে সিন্ডিকেটের পক্ষে গেছে। কারো ব্যক্তিগত দায় সংগঠন নেবে না।

এই ঘটনার পর আজ (বৃহস্পতিবার) এই বিতর্কিত তালিকার নিয়ে উপজেলা আইনশৃংখলা কমিটির সভা বসলে উপজেলা কার্যালয়ের সামনে বিতর্কিত তালিকার পক্ষে ও বিপক্ষে অবস্থান নেয় উপজেলা চেয়ারম্যান শাহাজান খান ও মনসুর নগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মিলন বখতের সমর্থরা। সভা শেষে বিকেল ৪টার দিকে উভয় গ্রুপ সংঘর্ষে জড়ায় এ সময় ২ জন আহত হন এবং একটি দোকান ভাংচুর করা হয়।

এ বিষয়ে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মনসুর নগর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মিলন বখত জানান, ধান ক্রয়ের সিন্ডিকেটের পক্ষে এবং বিপক্ষের দুটি পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। আইনশৃক্ষলা কমিটির সভায় আমরা এই তালিকা নিয়ে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি তা হয়তো কারো স্বার্থে আঘাত লেগেছে তাই তারা হামলা করেছে। আমাদের দুজন আহত হয়েছে এবং একজন গরীব নেতার দোকান ঘর ভাংচুর করা হয়েছে। আমরা সিন্ডিকেটের বিপক্ষে, পক্ষে কারা আছে তা খুঁজে বের করা সাংবাদিকদের দায়িত্ব। উপজেলা চেয়ারম্যানের কার্যালয় থেকে এসে আমাদের উপর হামলা করা হয়েছে।

এ বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে উপজেলা চেয়ারম্যান শাহাজান খানের নাম্বার বন্ধ পাওয়া যায়। মৌলভীবাজারে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জিয়াউর রহমান জানান, খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে যায়। বর্তমানে পরিস্তিত শান্ত আছে।

বিতর্কিত এই তালিকার বিষয়ে রাজনগরের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফেরদৌসী আক্তার জানান, এসিল্যান্ডের অফিসে সব ইউপি চেয়ারম্যানদের সাথে আলোচনার মাধ্যমে তালিকা স্থগিত করে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া সিদ্ধান্ত হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত