তাহিরপুর প্রতিনিধি

৩১ মার্চ, ২০২০ ১৪:৩১

ঝুঁকিতে তাহিরপুরের কমিউনিটি ক্লিনিকের স্বাস্থ্যকর্মীরা

করোনাভাইরাসের ঝুঁকির মধ্যে রয়েছে সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার ৭টি ইউনিয়নের কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত স্বাস্থ্যকর্মীরা। এখন পর্যন্ত তাদের দেওয়া হয়নি সুরক্ষার কোনও সরঞ্জাম। অথচ জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অসুস্থদের সেবা করে যাচ্ছেন তারা।

সারাদেশের ন্যায় এই উপজেলায় গ্রামের অসুস্থ অসহায় মানুষের ভরসার একমাত্র আশ্রয়স্থল হিসাবে সরকারি ছুটির দিন ছাড়া প্রতিদিনই নানা ধরনের সাধারণ রোগের চিকিৎসা, পরামর্শ দিয়ে কাজ করছেন একজন কমিউনিটি হেলথ কেয়ার প্রোভাইডার (সিএইচসিপি)। এতে করে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছেন তারা।

এই অবস্থায় করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই পিপিই, আধুনিক থার্মোমিটার, হেক্সাসল সরবরাহের দাবি করেন সিএইচসিপিগণ। সুরক্ষা ব্যবস্থা না থাকায় তাদের মাধ্যমে স্থানীয়দের মাঝেও সংক্রমণ ছড়াতে পারে বলে ধারণা করছেন সচেতন মহল।

জানা যায়, সারাদেশে ১৩হাজার ৬৬১টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। এর মধ্যে সুনামগঞ্জ জেলার ১১টি উপজেলায় ৮৮টি ইউনিয়নের ২৫৬টি কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে।  জেলার তাহিরপুর উপজেলার ১৮ কমিউনিটি ক্লিনিক রয়েছে। আর এর মধ্যে কর্মরতরা সিএইচসিপি অধিদপ্তরের আদেশ অনুযায়ী দেশের সব কমিউনিটি ক্লিনিক সকাল ৮টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত সেবাদান করছে বর্তমানে। প্রতিদিন গ্রামীণ রোগীরা ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসছেন দলে দলে। ক্লিনিকের কর্মীরাও তাদেরকে বাধ্য হয়ে ঝুঁকি নিয়ে চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। এলাকায় বিদেশ থেকে প্রবাসী আর সরকার ১০দিনের ছুটি ঘোষণার পর ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলার মানুষও এলাকায় ফিরেছেন। আর তাদের কাছে বর্তমানে চিকিৎসা নেয় গড়ে ৩০থেকে ৩৫জন আর অধিকাংশই আবার জ্বর-সর্দি-কাশির রোগী। কিন্তু করোনা ভাইরাসের ঝকিঁর সময়েও একটি করে মাস্ক দেওয়া হয় নি তাদের। এতে করে করোনা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকিতে রয়েছেন তারা।

এঅবস্থায় সুরক্ষা সরঞ্জম(পিপিই), আধুনিক থার্মোমিটার, হেক্সিসল ইত্যাদি সরবরাহ জরুরি বলে জানান, বীরেন্দ্রনগর কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি নরোউত্তম পাল।

তিনি বলেন, কমিউনিটি ক্লিনিকে প্রতিদিন রোগী আসছে। অধিকাংশই আবার জ্বর-সর্দি-কাশিতে আক্রান্ত। তাদের মধ্যে যদি কেউ কারোনা ভাইরাসে আক্রান্ত থাকেন,তাহলে রোগী থেকে আমাদের মধ্যে সংক্রমণ হতে পারে। এর পর আমাদের মাধ্যমে সংক্রমিত হতে পারেন অন্যরাও। এ মুহূর্তে আমাদের জন্য পিপিই খুব দরকার। কিন্তু একটি মাস্কও দেওয়া হয়নি। ফলে আমার মত কমিউনিটি ক্লিনিকে কর্মরত সিএইচসিপিরা ঝুঁকি নিয়েই কাজ করছি।

উপজেলার উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের বাগলী কমিউনিটি ক্লিনিকে চিকিৎসা নিতে আসা রতনপুর গ্রামের রহিম উদ্দিন বলেন, করোনা ভাইরাস নামে একটা রোগের নাম শুনছি, ক্লিনিকের দায়িত্বে যারা আছে তারাই বলেছে। আমাদের তো চিকিৎসা নিতে আসতে হবেই। আমার মত অনেকেই আসে বিনা টাকায় সরকারী ওষুধ পাওয়া যায়। এখন সুরক্ষার বিষয়ে এত কিছু করা কঠিন।

ইন্দ্রপুর গ্রাম থেকে চিকিৎসা নিতে আসা শান্তি বর্মন বলেন, আমাদের এই প্রত্যন্ত এলাকায় করোনা ভাইরাসের কথা শুনলেও কিছু করার নাই। আমরা গ্রামের মানুষ এত কি আর বুঝি।

বালিয়াঘাট কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপি ও তাহিরপুর উপজেলার সিএইচসিপি এসোসিয়েশনের সভাপতি মোঃ বিলাল হোসাইন জানান, করোনা ভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর থেকে উপজেলা হাসপাতালে সেবাগ্রহীতাদের উপস্থিতি কমে গেছেও আমাদের এখানে রোগীর উপস্থিতি বেড়েছে। অথচ আমাদের সুরক্ষার জন্য সুরক্ষা সরঞ্জম(পিপিই), আধুনিক থার্মোমিটার, হেক্সিসল কিছুই সরবরাহ করা হয় নি। আমরা করোনা ভাইরাসে জড়িয়ে পড়ার শঙ্কা করছি।

তাহিরপুর উপজেলার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স কর্মকর্তা ডাঃ ইকবাল হোসেন জানান, আমার কাছে সিএইচসিপিদের সুরক্ষার জন্য চিঠি এসেছে। আমি কিছু মাক্স দিয়েছি। আর কমিউনিটি ক্লিনিকের সিএইচসিপিদের জন্য সুরক্ষা সরঞ্জম(পিপিই),আধুনিক থার্মোমিটার,হেক্সিসল ইত্যাদি দু-এক দিনের মধ্যে আসবে আসলেই তা সরবরাহ করা হবে।  

সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন ডাঃ শামসুদ্দিন বলেন, আমরা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষর কাছে চাহিদা দিয়েছি। কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীরাও এখন ঝুঁকিতে আছেন বলে স্বীকার করেন বলেন, প্রতি উপজেলার স্বাস্থ্য কর্মকর্তাদের কমিউনিটি ক্লিনিকের কর্মীদের সুরক্ষার বিষয়ে ব্যবস্থা নিতে বলেছি।

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত