মোসাইদ রাহাত, সুনামগঞ্জ

৩১ মার্চ, ২০২০ ১৫:২৪

রিকশা নিয়ে বের হয়েও ঘরের চুলায় আগুন জ্বলে না

করোনাভাইরাসে সংক্রমণ ঠেকাতে সরকারের দেওয়া সাধারণ ছুটিতে কপাল পুড়েছে খেটে খাওয়া মানুষের। রাস্তাগুলোতে মানুষের জনসমাগম না থাকায় দিনমজুর মানুষরা পড়েছেন বিপাকে। মালিকের কাছ থেকে রিকশা নিয়ে বের হয়েও দিন শেষে ভাড়ার টাকাই উঠছে না তাদের। আর বেশিদিন এমন অবস্থা থাকলে বউ-বাচ্চা নিয়ে পথে বসা ছাড়া কোন উপায় দেখছেন না তারা। যা আয় হয় তা দিয়ে কিনতে পারছেন না নিত্যদিনের খাবার। একদিকে পেটের ক্ষিদা অন্যদিকে মালিকের রিকশা ফেরত দেওয়া ও ভাড়ার টাকা প্রদান সবমিলিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।

তাদের দাবি, সরকার থেকে যদি খাবার দেওয়া হয় তাহলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে রাস্তায় বের হবেন না তারা।

সরেজমিনে, সুনামগঞ্জ শহরের পুরাতন বাসস্টেশন, ট্রাফিক পয়েন্ট, কালীবাড়ি রোড, হোসেন বখত চত্বর ও ষোলঘর এলাকা ঘুরে দেখা যায়, যে রাস্তায় দিয়ে মানুষের চলাচল করতে কষ্ট হতো সেই রাস্তাঘাট নীরব। নেই কোন গাড়ির হর্নের শব্দ, নেই কোন মানুষের ভিড়। শুধু প্রতিটি রাস্তার মোড়ে রয়েছেন কয়েকজন রিকশাচালক। যে চালকরা রয়েছেন তাদেরও এক জায়গায় বসে থাকতে হচ্ছে চুপচাপ। তাদের চোখ যাত্রী আসার অপেক্ষায়।

করোনাভাইরাসের কারণে যখন বিশ্বের সব জায়গায় মানুষ গৃহবন্দি তখন তারা শুধুমাত্র জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাইরে বেরিয়েছেন পেটের দায়ে। সরকারি ত্রাণ কার্যক্রম শুরু হলেও তাদের কাছে এখনো পৌঁছায়নি এসব।

তাছাড়া রিকশামালিকদের ভাড়া দৈনিক ৬০ টাকা হলেও বর্তমানে সেই ৬০ টাকা উপার্জন করতেই যেন দিতে হচ্ছে সারাদিনের পরিশ্রম। আবার অভাবের কারণে যাত্রীদের কাছে ৫-১০ টাকা বেশি চাইলেও নানা রকম কথা শুনতে হচ্ছে তাদের।

রিকশাচালক চন্দন সরকার বলেন, দিন চলছে খুব কষ্টে। আজকেও বের হয়ে এখনও ১২০ টাকা ইনকাম করতে পারি নাই। এভাবে কি আমাদের জীবন যাইবো। মরণ ছাড়াতো আমাদের উপায় নাই। মাছ কিনার তো স্বপ্নই এখন দেখা যায় না। দিনের আয়ে এক কেজি চাল আর কয়েকটা আলুর তলেই সব টাকা শেষ। খুব কষ্টে দিনকাল কাটতেছে। তার উপরে রিকশা যে মালিকের তারেও তো দৈনিক টাকা নিয়ে দিতে হয়। সবদিকে এ গরীবরাই মরছে।

৭ বছর ধরে সুনামগঞ্জ শহরে রিকশা চালান কুদ্দুস মিয়া। তিনি বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে চলাফেরা আগের মতো নাই। সরকার যখন থকি বন্ধ দিসে তখন থকি আমাদের ঘরে ভাত-চাল কোনও কিছু নাই। ভাইরাসটা শেষ হইলে আমরা আগের মতো সব জায়গায় যেতেও পারবো, মানুষও আসবে। আমাদের ঘরের চুলাও জ্বলবো। সরকারের কাছে অনুরোধ আমাদের দিকে একটু নজর দেওয়ার।

রিকশাচালক আব্দুল মোতাল্লিব বলেন, সরকার বন্ধ দেওয়ার পর থেকেই আমরা ঠিকমতো খাইতে পারি না। সকালে খাইলে আর রাতে গিয়ে দেখতে হয় বাসায় খাবার আছে কি না। আমাদের উপরে আল্লাহ ছাড়া এখন আর কেউ নাই। একদিন রিকশা চালানি বন্ধ রাখলে ওইদিন ঘরে খাওন থাকে না। যাও রিকশা নিয়া বাড়াই পুলিশর গালমন্দ আছে, সাথে কারো কাছে ২ টাকা বেশি চাইলে তারাও কথা শোনায়।

শুধু রিকশাচালক না। এভাবেই কপাল পুড়েছে সংসারের হাল ধরা ঠেলাগাড়ি চালক ও সিএনজি এবং অটোরিকশা চালকদের। পেটের ক্ষিদার টানে বের হয়েও কোনরকমে দিন পার করছেন তারা।

সিএনজি চালক মুবিন আহমদ বলেন, শুধুমাত্র পেটের ক্ষিদায় বের হইছি। বড় রাস্তায় যেতে পারি না পুলিশ বাধা দেয়। যাও ছোট রাস্তায় চালাই তাতেও মানুষ নেই। এসব ছুটি আমাদের মরার জন্য, ঘরে ভাত না থাকতে এমনি মরতে হবে। সিএনজি চালাই, তাও অন্যজনের। মালিককে ভাড়া দিতে হয় আর গ্যাসও নিতে হয় । তাহলে কি আয় করবো আর ঘরেই কি খাবার নিবো।

এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আব্দুল আহাদ বলেন, সরকারের দেওয়া খাদ্যসামগ্রী আমরা সকল গরীবদের মাধ্যমে বণ্টন কার্যক্রম শুরু করেছি। এতে সরকারের নির্দেশনা রয়েছে প্রকৃত অসহায় লোকেরা যেন সেগুলো পায়। আমরা সেই লক্ষেই কাজ করে যাচ্ছি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত