০২ মে, ২০২০ ১৫:৩২
করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে সংকটে থাকা বয়স্ক, অসুস্থ্য ও অস্বচ্ছল ৩৮৪ জন আইনজীবীদের মধ্যে অনুদান হিসেবে প্রায় ৩০ লক্ষ টাকা বিতরণ করেছে সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতি। এছাড়াও সদস্যদের বিনাসুদে ঋণ প্রদানেরও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছে সমিতি।
তবে, সমিতির কার্যনির্বাহীদের একাংশ সমিতির এ সিদ্ধান্ত বেআইনী, অবৈধ, অসাংবিধানিক এবং ক্ষমতার অপব্যহার হিসেবে অভিহিত করে সমিতির সাধারণ সম্পাদক বরাবর একটি আবেদন দাখিল করেছেন।
গত সোমবার (২৭ এপ্রিল) দাখিল করা সমিতির ৭জন নির্বাহী সদস্য ও ৩জন সম্পাদক-সহসম্পাদক সাক্ষরিত এ আবেদনে উল্লেখ করা হয়, এককালীন অনুদান প্রদানের লক্ষ্যে এপ্রিলের ১ তারিখ যে সভা অনুষ্ঠিত হয় তা কোরাম সংকটের কারণে অবৈধ এবং এ সভার সিদ্ধান্ত হিসেবে অনুদান প্রদান করাও বেআইনি ও সমিতির সংবিধানবহির্ভুত।
তারা অভিযোগ করেন, সভায় কার্যনির্বাহী ১১ জন সদস্যের মধ্যে মাত্র ৪ উপস্থিত ছিলেন এবং কোরাম হতে ৫ জন সদস্যের উপস্থিত প্রয়োজন। এছাড়াও অর্থ অনুদান যাদের প্রদান করা হয়েছে, তাদের মধ্যে স্বচ্ছল, সরকারি/বেসরকারি চাকুরিজীবী, পেনশনভোগী ও ব্যবসায়ীসহ অপেশাদার আইনজীবী রয়েছেন।
বিজ্ঞাপন
এছাড়াও সমিতির অধীন কর্মচারীদের অতিরিক্ত বোনাস হিসেবে নিয়মবহির্ভুতভাবে আরো আড়াই লক্ষ টাকা ব্যয় করা হয়েছে বলেও অভিযোগ করা হয় আবেদনে।
পরবর্তীতে, ২১ এপ্রিল একইরকম আরেকটি সভায় সমিতির সদস্যদের ঋণ প্রদানের বিষয়ে গৃহিত সিদ্ধান্তটিও অবৈধ বলে দাবি করা হয়।
সমিতির তথ্যমতে, ঋণ গ্রহণের জন্য এখন পর্যন্ত ৬০০ এর বেশি আবেদন জমা পড়েছে।
আবেদনকারীরা বলেন, সমিতির প্রভিডেন্ট ফান্ড বা বেনেভোলেন্ট ফান্ড হতে কোন টাকা ঋণ হিসেবে প্রদানের সাংবিধানিক ক্ষমতা সমিতির নেই এবং এ সিদ্ধান্তটিও কোরামবিহীন সভায় গৃহিত হয়েছে যেখানে মাত্র ৩ জন কার্যনির্বাহী সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
আবেদনকারীদের একজন, সিলেট জেলা আইনজীবী সমিতির পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক তানভীর আক্তার খান বলেন, “সমিতির নেতৃবৃন্দ এ সিদ্ধান্তটি সম্পূর্ণ অসৎ চিন্তাভাবনা থেকে নিয়েছেন এবং এর মূলে তাদের নির্বাচনকেন্দ্রীক চিন্তাভাবনা রয়েছে”।
সমিতির সাবেক সভাপতি গোলাম রব্বানী চৌধুরী কামাল বলেন, “সমিতির সংবিধান অনুযায়ী, যে কোন বিষয়ের সিদ্ধান্ত গ্রহণের প্রথম বৈঠকে অবশ্যই কোরাম থাকতে হবে। তা না হলে গৃহিত সিদ্ধান্ত বৈধ হবে না। তবে প্রথম বৈঠক কোরাম থাকলে একই বিষয়ক পরের বৈঠকে না থাকলেও চলবে”।
সাবেক আরেক সভাপতি মোহাম্মদ লালা বলেন, “আমি আবেদনের কপিটি পড়েছি এবং তাদের দাবি যৌক্তিক। কোরাম না হলে কোন সিদ্ধান্তই নেয়া যাবে না এবং এভাবে ফান্ডের টাকা ব্যবহার সম্পূর্ণ আইনবহির্ভুত হয়েছে”।
তিনি আরো বলেন, “এছাড়াও, সংবিধানে সমিতির টাকা এভাবে অনুদান বা বোনাস হিসেবে দেয়ার এখতিয়ার কার্যনির্বাহী কমিটিকে দেয়া হয়নি। এছাড়া, এ টাকা থেকে ঋণ প্রদানের কোন সুযোগ নেই। টাকাপয়সা বিষয়ক এ ধরণের বড় সিদ্ধান্ত অবশ্যই সাধারণ সভায় নিতে হবে। সমিতির টাকা থেকে মৃত আইনজীবীদের পরিবারকে এককালীন সহায়তা প্রদান করা হয়, সমিতির খরচ নির্বাহ করা হয়। এভাবে এত পরিমাণ টাকা খরচ করা হলে ভবিষ্যতে ফান্ডের অভাব দেখা দিতে পারে”।
বিজ্ঞাপন
তবে আবেদনে উল্লেখ করা এসকল অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা দাবি করে সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফজলুল হক সেলিম বলেন, “প্রথম সভাতে কোরাম সংকটের বিষয়টি ঠিক নয়। সেদিন ৬ জন নির্বাহী সদস্য উপস্থিত ছিলেন আর তাদের সাক্ষরও রয়েছে। আর অনুদান প্রদানের গৃহিত সিদ্ধান্তটিও সবার সম্মতিক্রমে নেয়া হয়েছে”।
এছাড়াও ২১ তারিখের সভাটি পরামর্শ সভা হিসেবে দাবি করেন এবং তাতে কোরাম হওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই বলেও জানান তিনি।
আবেদনকারী হিসেবে সাক্ষর করা নির্বাহী সদস্য প্রদীপ কুমার ভট্টাচার্য প্রথম সভায় উপস্থিত ছিলেন বলে সাধারণ সম্পাদক জানালেও আলাপকলে প্রদীপ কুমার সে সভায় অনুপস্থিত ছিলেন বলে দাবি করেছেন।
প্রথম সভায় কোরাম হয়েছে দেখানোর জন্য সভা শেষে দুজনের সাক্ষর গ্রহণ করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন পাঠাগার বিষয়ক সম্পাদক তানভীর।
তবে এসবই বর্তমান কমিটিকে হেয় করতে সাবেক কমিটির এবং বর্তমান কমিটির কয়েকজনের উদ্যোগ দাবি করে সাধারণ সম্পাদক সেলিম বলেন, “আমাদের কাছে যে আবেদন দেয়া হয়েছে, তার দুটি সাক্ষর সেদিন বৈঠকে উপস্থিত থেকে দেয়া সাক্ষরের সাথে মিলছে না। বিষয়টি আরো গভীরভাবে পর্যালোচনা করে দেখতে হবে। আমরা তা করবো এবং আবেদনকারীদের তার জবাবও প্রদান করা হবে”।
সেলিম বলেন, “সম্প্রতি সুপ্রীম কোর্টসহ বিভিন্ন আদালত বিভিন্নভাবে আইনজীবীদের সহায়তার উদ্যোগ গ্রহণ করছে, এমনকি অনলাইনে মিটিং করেও সিদ্ধান্ত গ্রহণ করছে। এটি জরুরি একটা সময় আর এরকম জরুরি কিছু সিদ্ধান্ত নিতে হয়েছে। নিয়মানুযায়ী সকল সিদ্ধান্তই পরবর্তী সাধারণ সভায় উত্থাপন করা হবে। সকল সিদ্ধান্তই নিয়মানুযায়ী হয়েছে এবং হচ্ছে”।
আপনার মন্তব্য