সিলেটটুডে ডেস্ক

১০ জানুয়ারি, ২০২১ ১৯:৪১

সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালেদুর রহমান টিটো মারা গেছেন

সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও যশোর-৩ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য খালেদুর রহমান টিটো (৭৬) মারা গেছেন। রোববার দুপুরে যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

খালেদুর রহমান টিটোর বড় ছেলে মাশুক হাসান জয় জানান, কিছুদিন ধরে তার পিতা অসুস্থ ছিলেন। গত বৃহস্পতিবার তাকে যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ) ভর্তি করা হয়। সেখানে আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় রোববার দুপুর ১টা ১৯ মিনিটে তিনি মারা যান।

জানা যায়, বেশ কিছুদিন ধরেই সাবেক প্রতিমন্ত্রী খালেদুর রহমান টিটো অসুস্থ ছিলেন। গত ১৯ নভেম্বর তিনি নিজ বাস ভবনে হঠাৎ গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়। পরদিন এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে তাকে ঢাকার বারডেম হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর ধরা পড়ে তার ফুসফুসে পানি জমেছে। সেই অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়ার পর তার অবস্থার উন্নতি হয়। পরে তিনি বাড়ি ফিরে আসেন। এরপর বাড়িতেই তার চিকিৎসা চলছিল। কয়েকদিন আগে তিনি আবার অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে যশোর ২৫০ শয্যা হাসপাতালের করোনারি কেয়ার ইউনিটে ভর্তি করা হয়।

খালেদুর রহমান টিটো ১৯৪৫ সালের ১ মার্চ কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। পিতা মরহুম অ্যাডভোকেট হবিবুর রহমান। মাতা মরহুম করিমা খাতুন। সাত ভাইবোনের মধ্যে টিটো দ্বিতীয়। খালেদুর রহমান টিটো রাজনৈতিক পরিমণ্ডলের মধ্য দিয়ে বেড়ে উঠেছেন।

১৯৬৩ সালে যশোর এমএম কলেজ সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ইউনিয়নে সম্পৃক্ততার মধ্যদিয়ে রাজনীতিতে সক্রিয়ভাবে জড়িত হন। ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত তিনি ছাত্র ইউনিয়নের রাজনীতি করেন। ১৯৬৭ সালে কলেজের লেখাপড়া শেষে করে তিনি শ্রমিক রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। পরে শ্রমিক রাজনীতি থেকে বের হয়ে কৃষক আন্দোলনে যোগ দেন। শ্রমিক রাজনীতিতে থাকাকালীন তিনি মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক হন। তিনি ওই সময়ে শ্রমিকদের সংগঠিত করতে সমর্থ হন। খালেদুর রহমান টিটো যশোরে প্রথম রিকসা ইউনিয়ন তৈরি করে তাদের সংগঠিত করেন এবং ব্যক্তিগত সাহায্য সহযোগিতার মাধ্যমে তাদের প্রতিষ্ঠিত করার ব্যবস্থা করেন।

১৯৬৯ সালের শেষের দিকে তিনি কৃষক আন্দোলন জোরদার করতে কোটচাঁদপুর, মহেশপুর ও কালীগঞ্জ এলাকায় ভ্রমণ করেন। ১৯৭০ সালের শেষের দিকে তার সঙ্গে দলের রাজনৈতিক মতবিরোধ সৃষ্টি হয়। শ্রেণিশত্রু উৎপাটনের পদ্ধতিকে তিনি মেনে নিতে পারেননি। ফলে এক সময়ে দল থেকে বের হয়ে আসেন। এ সময় তিনি পুলিশি অভিযানের কারণে কুষ্টিয়াতে চলে যান। ওই বছরের মার্চ মাসে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি আবার ভারতে চলে যান। বাম রাজনীতির সঙ্গে জড়িত থাকার কারণে সেখানে তিনি শান্তিতে থাকতে পারেননি আবার পূর্ব পাকিস্তানেও ঢুকতে পারতেন না। এর কারণ হিসেবে ওই সময় পাক আর্মি তার মাথার দাম ধার্য করেছিল ১০ হাজার টাকা।

১৯৭৪ সালের প্রথম দিকে তিনি ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ভাসানী-ন্যাপ) এ যোগদান করেন। ৭৪ সালেই ন্যাপের জেলা সম্পাদকের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ৭৭ সালে ন্যাপের যশোর অঞ্চলের সভাপতি প্রখ্যাত রাজনীতিবিদ আলমগীর সিদ্দিকী মারা গেলে তিনি ন্যাপের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। ৭৮ সালে প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় তিনি ন্যাপের পক্ষ থেকে তাকে সমর্থন করেন। নির্বাচনের পর বিএনপি নামে একটি রাজনৈতিক দল গঠিত হলে তিনি ন্যাপের সঙ্গেই থেকে যান। ১৯৮১ সালে ‘গণতান্ত্রিক পার্টি’ গঠিত হলে তিনি এই রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগ দেন।

১৯৮৪ সালে পৌরসভা নির্বাচনে তিনি জয়লাভ করেন। ১৯৮৫ সালে জাতীয় পার্টি গঠিত হওয়ার পর ১৯৮৬ সালে তিনি জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে এমপি নির্বাচিত হন। ১৯৯০ সালের মে মাসে তিনি শ্রম ও জনশক্তি প্রতিমন্ত্রী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন। সরকার পতনের ফলে ১৯৯১ সালে তাকে জেলে যেতে হয়। এ সময় তিনি জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।

১৯৯১ সালে দলকে নতুনভাবে সাজানো হলে তিনি কারাগারে থাকাকালীন কৃষি বিষয়ক সম্পাদকের দায়িত্ব পান। ১৯৯১ সালের শেষে জাতীয় পার্টির মহাসচিব হন এবং ১৯৯৬ সালে নির্বাচনের আগমুহূর্ত পর্যন্ত তিনি এ দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি বিএনপিতে যোগদান করেন। কিন্তু ২০০১ সালের নির্বাচনে তিনি মনোনয়ন না পাওয়ায় নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। পরে তিনি বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন।

২০০৬ সালে খালেদুর রহমান টিটো আওয়ামী লীগে যোগদান করেন। ২০০৮ সালের ২৯ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের মনোনয়নে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত