সিলেটটুডে ডেস্ক

০৪ জুলাই, ২০২১ ১৭:০৭

৫১ বছর আগে মারা যাওয়া ব্যক্তির নামে জরিমানা

এরফান সরদার। মাদারীপুরের কালকিনি উপজেলার ভাসার গ্রামের। মারা গেছেন ১৯৭০ সালে। তার ছেলে ছালাম সরদার, একটা শিঙাড়া দোকান চালান। চলমান লকডাউনে পুত্র সালাম তার শিঙাড়ার দোকান খোলার অপরাধে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানার মুখোমুখি হয়েছেন। পরিশোধও করেছেন সেই অর্থ, তবে স্থানীয় ইউএনও জরিমানার যে রসিদ কাটেন সেখানে দোষী সাব্যস্ত করেন ৫১ বছর আগে মারা যাওয়া এরফান সরদারকে।

চাঞ্চল্যকর ঘটনাটি মাদারীপুরে কালকিনি উপজেলায় ডাসার এলাকায়। নির্দেশনা অমান্য করে এক শিঙাড়ার দোকানি দোকান খোলা রাখার দায়ে মৃত বাবার নামে পুত্রকে গুনতে হয়েছে ১০০ টাকা জরিমানা।

ভ্রাম্যমাণ আদালত ও স্থানীয় সূত্রে জাতীয় দৈনিক প্রথম আলো জানায়, কঠোর বিধিনিষেধ কার্যকর রাখতে গতকাল শনিবার সকালে কালকিনি উপজেলার ডাসার বাজারে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মেহেদী হাসান। এ সময় বিধিনিষেধের আওতামুক্ত দোকান ছাড়াও বেশ কিছু দোকানপাট খোলা রাখা ও বিনা কারণে ঘর থেকে বের হওয়ায় কয়েকজনকে ভ্রাম্যমাণ আদালত বসিয়ে জরিমানা আদায় করেন ইউএনও। এ সময় ছালাম সরদারের শিঙাড়ার দোকান খোলা রাখার অপরাধে সংক্রমণ রোগ নিয়ন্ত্রণ প্রতিরোধ দমন আইনে তাকে ১০০ টাকা আর্থিক জরিমানা করা হয়।

তবে ভ্রাম্যমাণ আদালতের জরিমানার রসিদে দোষী ব্যক্তির নামের জায়গায় লেখা আছে তার মৃত বাবার নাম—এরফান সরদার। প্রশাসনের কড়াকড়ি থাকায় মৃত বাবার হয়েই ১০০ টাকা জরিমানা দেন শিঙাড়ার দোকানি ছালাম সরদার।

৬৬ বছর বয়সী ছালাম সরদার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘খুব খারাপ অবস্থায় আছি। ঘরে চাল-ডাল নাই। তাই বাধ্য হয়ে দোকানে কিছু শিঙারা বিক্রি করার চিন্তায় খুলি। কিছু কেনাবেচাও করি। হঠাৎ স্যারেরা আইসা আমারে হুটহাট করে জরিমানা করে দিলেন। পরে দেখি তারা আমার নামের পরিবর্তে আমার বাবার নামে জরিমানা করেছেন। খুব কষ্ট পাইছি। ১০০ টাকা কামাইতে পারি না। আর জরিমানা দিতে বোঝেন কত কষ্ট!’

ছালাম সরদার বলেন, তার বাবা এরফান সরদার ১৯৭০ সালে মারা যান। তবু ভ্রাম্যমাণ আদালত এমনটা কেন করলেন, তিনি সেটা জানেন না। প্রশাসনের ভয়ে তিনি ১০০ টাকা জরিমানা পরিশোধ করেন।

ভ্রাম্যমাণ আদালতের নিয়ম অনুযায়ী জরিমানা রসিদের প্রসিকিউটরের নামের স্থানে ইউএনও বা রাষ্ট্র লেখার বিধান। অথচ সেখানে লেখা হয়েছে এরফান সরদারের ছেলে ছালাম সরদারের নাম। এ সম্পর্কে কালকিনির ইউএনও মেহেদী হাসান বলেন, ‘উপজেলার বেশ কয়েকটি স্থানে সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) যৌথ অভিযানে ১৯টি মামলায় ১৬ হাজার টাকা জরিমানা আদায় করেন।’

ডাসার বাজারে মৃত ব্যক্তির নামে জরিমানা আদায়ের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রশাসন দেখলে লোকজন দৌড়াদৌড়ি শুরু করে দেয়। ভয়ে অনেকে নিজের নাম না দিয়ে তার বাবার নামও বলে দেন। তাই হয়তো জরিমানার রসিদ কাটার সময় ভুল হতে পারে।’

প্রসিকিউটরের নামের স্থানে ছালামের নামের প্রসঙ্গে ইউএনও বলেন, ‘এখানে রাষ্ট্র বা ইউএনও নাম লিখতে হয়। না লিখলেও সমস্যা নেই। তবে ছালামের নাম লেখাটা ভুল করে হয়তো ওপরে উঠে গেছে।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত