সিলেটটুডে ডেস্ক

০৩ জুন, ২০১৬ ১৬:০৪

বাঁশখালীতে সাংসদের বিরুদ্ধে ইসির মামলা

বাঁশখালীতে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে 'পেটানোর' ঘটনায় স্থানীয় সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীসহ তিনজনের নাম উল্লেখ করে ও ৭-৮ জনকে অজ্ঞাত আসামি করে একটি মামলা দায়ের করা হয়েছে।

শুক্রবার দুপুর ২টার দিকে মামলাটি নথিভূক্ত করা হয়। মারধরের শিকার উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহেদুল ইসলাম বাদি হয়ে মামলাটি দায়ের করেছেন।

মামলার অপর দুই আসামি হলেন, সংসদ সদস্যের ব্যক্তিগত সহকারী (পিএস) ও বাহারছড়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ সমর্থিত চেয়ারম্যান প্রার্থী ‍তাজুল ইসলাম এবং ওলামা লীগ সভাপতি মাওলানা আকতার হোসাইন।

সাতকানিয়া সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) কামরুল হাসান বলেন, ‘উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহিদুল ইসলাম বাদি হয়ে তিনজনের নাম উল্লেখ করে ও ৭-৮ জনকে অজ্ঞাত আসামি মামলা দায়ের করেছেন। মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩৫৩/৩৪৩/৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।’

এর আগে বৃহস্পতিবার দুপুরে নির্বাচন কমিশন থেকে মৌখিকভাবে এবং বিকেল পাঁচটার পর লিখিতভাবে মামলা করার অনুমতি পান নির্বাচন কর্মকর্তা জাহেদুল ইসলাম। যার অনুলিপি শুক্রবার সকালে পৌঁছে বাঁশখালী থানায়।

উল্লেখ্য, বুধবার (০১ জুন) দুপুরে বাঁশখালীতে নির্বাচন কর্মকর্তা জাহেদুল ইসলাম মারধরের শিকার হওয়ার পরপরই বুধবার বিকালে এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করার সিদ্ধান্তের কথা গণমাধ্যমকে জানান ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম। 

ওই সময় তিনি বলেন, ‘উপজেলার নির্বাচন কর্মকর্তা জাহেদুল ইসলামকে মারধরের অভিযোগে মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে মামলা করা হবে। জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা প্রচলিত আইনে এই মামলা করবেন। এছাড়া এ ঘটনার পর সুষ্ঠু ও নির্বিঘ্ন নির্বাচনের পরিবেশ বিনষ্ট হওয়ায় বাঁশখালী উপজেলার সব ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচন স্থগিত করা হয়েছে।’

অভিযোগ উঠেছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ভোটকেন্দ্রে পছন্দমতো প্রিজাইডিং অফিসার, পোলিং অফিসার ও এজেন্ট নিয়োগ না দেয়ায় উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহেদুল ইসলামকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত করেছেন বাঁশখালীর সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান ও তার অনুসারীরা। বুধবার (১ জুন) বেলা ১২টার দিকে উপজেলা নির্বাচন অফিসে এ ঘটনা ঘটে।

তবে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান এ অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, ‘ওই ধরনের কোনো ঘটনাই ঘটেনি। সব মিথ্যা কথা।’

বাঁশখালী উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা জাহেদুল ইসলাম অভিযোগ করেন, ৪ নম্বর বাহারছড়া ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের চেয়ারম্যানপ্রার্থী তাজুল ইসলাম ভোটগ্রহণ কর্মকর্তা (প্রিজাইডিং অফিসার) নিয়োগের জন্য তাকে একটি তালিকা দিয়েছিলেন। তিনি ওই তালিকা অনুযায়ী সবাইকে নিয়োগ দিতে পারেননি। তাই ক্ষিপ্ত হয়ে বুধবার সকালে সাংসদ মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী তাকে ইউএনও কার্যালয়ে ডেকে পাঠান এবং জানতে চান তার তালিকা বাস্তবায়ন হয়নি কেন। এ নিয়ে কথা বলার এক পর্যায়ে তার উপর চড়াও হন সাংসদ। তিনি তাকে কিল-ঘুষি মারতে থাকেন। এ সময় সাংসদের সঙ্গে থাকা আরও কয়েকজনও তাকে মারধর করেন।

জাহিদ জানান, এ সময় ইউএনও তার কার্যালয়ে ছিলেন না। তবে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী তাজুল ইসলাম এবং স্থানীয় ওলামা লীগ নেতা মাওলানা আক্তার সেখানে ছিলেন।

স্থানীয়রা জানান, তাজুল ইসলাম সাংসদ মোস্তাফিজের এপিএস। বাহারছড়া ইউনিয়নে তাজুল ইসলাম ছাড়াও আওয়ামী লীগের দুইজন বিদ্রোহী প্রার্থী এবং ১জন বিএনপি প্রার্থী রয়েছেন।

৬ষ্ঠ ও শেষ ধাপে আগামী ৪ জুন সারা দেশে সাত শতাধিক ইউপির মধ্যে বাঁশখালী উপজেলায় ১৪টিতে ভোট হওয়ার কথা ছিল। এর মধ্যে তিনটি ইউপির ভোট ঘূর্ণিঝড় রোয়ানুর কারণে আগেই স্থগিত করেছিলেন ইসি। সাংসদ কর্তৃক নির্বাচন কর্মকর্তাকে পেটানোর ঘটনায় এবার বাকি ১১ ইউপির ভোটও স্থগিত করেছেন ইসি। 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত