বেনাপোল প্রতিনিধি

০৪ ডিসেম্বর, ২০১৬ ১৮:৪৩

ভারতীয় ৫০০ ও ১০০০ রুপি বাতিলের বিরূপ প্রভাব কাটছে

হঠাৎ করে ভারতীয় ৫০০ ও ১০০০ রুপি বাতিলে বাংলাদেশি পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যে দুর্ভোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্যে বিরূপ প্রভাব পড়েছিল রুপির সরবরাহ বাড়তে থাকায় তা ধীরে ধীরে কাটতে শুরু করেছে। এতে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে পাসপোর্টধারী যাত্রীদের যাতায়াত আবার বেড়েছে।

বাংলাদেশি টাকার বিপরীতে ভারতীয় রুপির মান বাড়ায় আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের গতিও আগের অবস্থায় ফিরে আসছে। রুপি বাতিলের খবরে ওই সময় প্রায় ৪০ শতাংশ বাণিজ্য কমে গিয়েছিল।

বেনাপোলে অবস্থিত রাজা-বাদশা মানিচেঞ্জারের সত্ত্বাধিকারী আবুল বাশার বলেন, ভারতীয় নতুন রুপির সরবরাহ আগের তুলনায় অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ায় বাংলাদেশি টাকার মান আবার বাড়তে শুরু করেছে। বর্তমানে বাংলাদেশি ১০০ টাকার বিপরীতে ভারতীয় ৭৫ থেকে ৭৬ রুপি পাওয়া যাচ্ছে। রুপি বাতিলের খবরে ওই সময় ১০০ রুপিতে কমে দাঁড়িয়েছিল ৬৩ থেকে ৬৫ রুপিতে। আর ইউএস ডলারের দাম কমে প্রতি ডলার বাংলাদেশি ৮৩ থেকে ৮৪ টাকা হয়েছিল। যা গত সপ্তাহেও ছিল প্রতি ডলারে বাংলাদেশি ৮৭ থেকে ৮৮ টাকা পর্যন্ত। রুপি সংকটে এ অবস্থা তৈরি হয়েছিল বলে জানান তিনি।

ভারতের পেট্রাপোল চেকপোস্টের মানি চেঞ্জার ব্যবসায়ী মহাদেব ঘোষ জানান, তারা বর্তমানে বাংলাদেশি ১০০ টাকায় ভারতীয় ৭৬ রুপি ও ১০০ ইউএস ডলারে ৬৩ রুপি দিচ্ছেন। যা এক সপ্তাহ আগে ছিল ১০০ টাকার বিপরীতে বাংলাদেশি ৬৮ রুপি ও ১০০ ইউএস ডলারের বিপরীতে ছিল ৬০ রুপি।

ভারতগামী পাসপোর্টধারী যাত্রী ঝিনাইদহের শওকত হোসেন বলেন, পাসপোর্টধারী যাত্রীরা প্রয়োজনীয় কাজ মেটাতে যেভাবে রুপি সংকটের মুখে পড়েছিল তাতে আমরা ভেবেছিলাম এ অবস্থা কাটাতে প্রায় কয়েক মাস লেগে যাবে। এ সময় ৫ হাজার বাংলাদেশি টাকা ভাঙিয়ে রুপি তৈরিতে হিমশিম খেতে হচ্ছিল। এতে অনেককেই অতি প্রয়োজন ছাড়া যাতায়াত করছিলো না। এখন যেভাবে রুপির সরবরাহ ও বাংলাদেশি টাকার মান বেড়েছে তাতে মনে হচ্ছে খুব দ্রুত বাংলাদেশি টাকার অবস্থান আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসবে।

বেনাপোল আমদানি-রফতানি সমিতির সহ সভাপতি আমিনুল হক জানান, ভারতীয় ৫০০ ও ১০০০ রুপি বাতিলে আমদানি-রফতানি বাণিজ্যে সবচেয়ে বেশি বিরূপ প্রভাব পড়েছিল। বাংলাদেশি টাকার মান কমে যাওয়া ও ভারতীয় ব্যাংকগুলো গ্রাহকদের মাঝে রুপি বণ্টন কমিয়ে দেওয়ায় ভারতের সঙ্গে ব্যবসা বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছিল। এতে ভারতীয় আমদানি ও রফতানিকারকরা তাদের ফোন দিয়ে আপাতত এলসি না পাঠাতে অনুরোধ জানান। এখন রুপি সরবরাহ অনেকটা স্বাভাবিক হওয়ায় তারা আবার এলসি করার জন্য খবর পাঠিয়েছেন।

ইসলামি ব্যাংক বাংলাদেশ লিমিটেডের বেনাপোল শাখার আমদানি-রফতানি এলসি বিভাগের কর্মকর্তা আরাফাত হোসেন জানান, ভারতীয় রুপি বাতিলের খবরে ওই সপ্তাহে নিয়মিত আমদানি-রফতানিকারক অধিকাংশ ব্যবসায়ীরা ফোন দিয়ে জানিয়েছিলেন আপাতত তারা এলসি করবেন না। এখন দেখছি তারা অনেকে আবার ফিরে আসছেন। এতে মনে হচ্ছে সংকট কেটে অবস্থা দ্রুত স্বাভাবিকের দিকে যাচ্ছে।

বেনাপোল চেকপোস্ট কাস্টমস কার্গো শাখার সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা তিতুমীর আহমেদ জানান, শনিবার (৩ ডিসেম্বর) বেনাপোল বন্দর দিয়ে ভারতে রফতানি হয়েছে ৯৪ ট্রাক বিভিন্ন প্রকারের বাংলাদেশি পণ্য। আর ভারত থেকে আমদানি হয়েছে ৩১৪ ট্রাক পণ্য।

বেনাপোল ইমিগ্রেশনের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইকবাল হোসেন জানান, প্রতিদিন এ পথে প্রায় ৫ থেকে ৭ হাজার পর্যন্ত পাসপোর্টধারী যাত্রী যাতায়াত করতেন। ভারতীয় রুপি বাতিলে হঠাৎ করে তা কমে দাঁড়িয়েছিল হাজার থেকে ১৫০০। এখন আবার যাতায়াত বেড়েছে। এতে ২ ডিসেম্বর বেনাপোল চেকপোস্ট দিয়ে ২১৫৯ জন বাংলাদেশি ও ৩৮০ জন বিদেশি যাত্রী ভারতে গেছে। আর ভারত থেকে এসেছে ১৮২১ জন বাংলাদেশি ও ৪৫৩ জন বিদেশি যাত্রী।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত