শাহআলম সজীব

১৪ মার্চ, ২০১৮ ২১:৩২

১৩-১৪ মার্চ ১৯৭১

১৩ মার্চ,

১৩ মার্চ ৪ ছাত্রনেতাকে মুক্তিযুদ্ধের নির্দেশনা দিলেন বঙ্গবন্ধু।

পূর্ব পাকিস্তানের সামরিক প্রধান জেনারেল টিক্কা খান একাত্তরের ১৩ মার্চ এক সামরিক ফরমান জারি করে বলেন ১৫ মার্চের মধ্যে কর্মস্থলে যোগ না দিলে তাদের চাকুরিচ্যুত করা হবে। সামরিক আইনের বিচারে এসব আইন অমান্যকারীকে ১০ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড দেয়া হবে।

টিক্কা খানের এ আদেশের পরেও অনেকেই কর্মস্থলে যোগ দেননি।

বঙ্গবন্ধু টিক্কা খানের সামরিক ফরমানকে উস্কানিমুলক আখ্যায়িত করে বলেন, "পাকিস্তানের সামরিক হুমকি ধামকি বাংলার স্বাধিকার আন্দোলনকে ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না।"

অসহযোগ আন্দোলন তখন এতটার স্বতঃস্ফূর্ত যে কেউ আর পাকিস্তান সরকারের আদেশ নির্দেশ মানছে না। গোটা বাংলাদেশে তখন নেতা একজন, "তিনিই দেশ,তিনিই সরকার।"

এদিকে বঙ্গবন্ধু তার ৩২ নম্বরের বাসায় শীর্ষ ৪ ছাত্রনেতা শেখ ফজলুল হক মনি, সিরাজুল আলম খান, আব্দুর রাজ্জাক ও তোফায়েল আহমদকে ডেকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের দিক নির্দেশনা দেন।

এসময় বঙ্গবন্ধু কলকাতার ভবানীপুরের নর্দার্ন পার্কের ২১ রাজেন্দ্র রোডের একটি বাসার ঠিকানা দিয়ে বলেন যে, প্রবাস থেকে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনার জন্য এটি হবে মুল কেন্দ্র।

তিনি জানান সংসদ সদস্য ডা. আবু হেনাকে কলকাতা পাঠিয়ে তিনি এ বাসা সহ সবকিছু ঠিকঠাক করিয়ে রেখেছেন।

সেখানে সংসদ সদস্য চিত্ত সুতার সবাইকে অভ্যর্থনা জানানো সহ ওই দেশের সরকারের সঙ্গে সমন্বয় করবেন।

১৪ মার্চ,

১৯৭১ ঢাকার উত্তাল রাজপথে সেদিন ছিল এক ব্যতিক্রর্মী চিত্র। মাঝিমাল্লারা সব বৈঠা হাতে এদিন রাজপথে নেমে আসে।

সেদিনের রাজপথ ছিল মাঝিমাল্লাদের দখলে। সামরিক আইনের ১১৫ ধারা জারির প্রতিবাদে সেদিন বেসরকারি কর্মচারীরাও বিক্ষোভে ফেটে পড়ে।

দেশের জনগণকে গণতান্ত্রিক অবস্থা থেকে বঞ্চিত করার প্রতিবাদে খ্যাতিমান শিল্পী শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন তাঁর 'হেলাল ইমতিয়াজ' খেতাব বর্জন করার ঘোষণা দেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এদিন নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় আলোচনায় বসার ব্যাপারে শর্তারোপ করেন। তিনি অবশ্য প্রেস ব্রিফিংয়ে বলেন, যদি প্রেসিডেন্টে দাবি পূরণের ইচ্ছা নিয়ে আলোচনায় বসতে চান, তা হলে আমি বসতে পারি।

তবে বঙ্গবন্ধু দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসার আহ্বান জানান। তিনি বলেন, কোনভাবেই তৃতীয় কোন পক্ষ সেখানে উপস্থিত থাকতে পারবে না।

অন্যপক্ষে পাকিস্তান পিপলস পার্টির নেতা জুলফিকার আলী ভুট্টো বঙ্গবন্ধুর দেয়া ৬ দফা দাবি প্রত্যাখ্যান করেন।

তবে ঢাকায় এসে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে অলোচনার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। ন্যাপ (ওয়ালী) নেতা খান আবদুল ওয়ালী খান পূর্ব পাকিস্তান সফরকালে বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে একান্তে আলাপ আলোচনা করেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময় বাঙালীর আন্দোলন এবং তাদের দাবির প্রতি পূর্ণ সমর্থন প্রকাশ করেন।

একাত্তরের রক্তঝরা এই দিনে জাতীয় লীগ নেতা আতাউর রহমান অস্থায়ী সরকার গঠনের জন্য বঙ্গবন্ধুর কাছে দাবি জানান।

এ সময় দেশের পত্রিকাগুলোতেও আন্দোলনকে সমর্থন করে সম্পাদকীয় লেখা চলতে থাকে। আওয়ামী লীগের সম্পাদক তাজউদ্দীন আহমেদ অসহযোগ আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৫ মার্চ পালনে ৩৫টি নতুন নির্দেশনা দেন। এ সময় সমগ্র বাংলাদেশ (পূর্ব পাকিস্তান) আওয়ামী লীগ এবং বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে চলতে থাকে।

এই দিনে ঢাকার বায়তুল মোকাররম মসজিদের সামনে ছাত্র ইউনিয়নের এক সমাবেশ থেকে দেশের ৭ কোটি জনতাকে সৈনিক হিসেবে সংগ্রামে অংশগ্রহণের আহ্বান জানানো হয়। তৎকালীন ছাত্র ইউনিয়নের সভাপতি নুরুল ইসলাম নাহিদের (বর্তমান শিক্ষামন্ত্রী) সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম (বর্তমানে সিপিবির সাধারণ সম্পাদক)।

একই দিনে শিল্প সংগঠনগুলোর প্রতিনিধিরা শিল্প সংগ্রাম গঠন করেন।

বাঙালীর স্বাধীনতার আন্দোলনের সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করে ঢাকার কবি সাহিত্যিকরা 'লেখক সংগ্রাম শিবির' নামে একটি কমিটি গঠন করেছেন। যার আহ্বায়ক মনোনীত হন হাসান হাফিজুর রহমান।

সদস্য হিসেবে ছিলেন সিকান্দার আবু জাফর, আহমদ শরীফ, শওকত ওসমান, শামসুর রাহমান, বদরুদ্দীন ওমর, রণেশ দাসগুপ্ত, সাইয়িদ আতিকুল্লাহ, বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর, রোকনুজ্জামান খান, আবদুর গফফার চৌধুরী, সুফিয়া কামাল, জহির রায়হান ও আবদুল গনি হাজারীসহ অনেকে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত