শাহআলম সজীব

১৮ মার্চ, ২০১৮ ২১:১০

১৮ মার্চ, ১৯৭১

১৮ মার্চ ১৯৭১ বৃহস্পতিবার। সকাল থেকে বিভিন্ন সংগঠন মিছিল সহকারে বঙ্গবন্ধুর বাসভবনের সামনে এসে প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার সঙ্গে বৈঠক থেকে বঙ্গবন্ধুকে বিরত থাকার আহবান জানায় এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের ঘোষণা দাবি করে।

বিদেশি সাংবাদিকরা বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। তারা দেশের এই রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর পরিকল্পনা জানতে চান। বঙ্গবন্ধু বলেন, বাঙালি জাতি আজ জেগে উঠেছে। তারা স্বাধীনতার জন্য জীবন দিতে শিখেছে। জাগ্রত জনতার এই গণ বিস্ফোরণকে স্তব্ধ করার শক্তি কোন মেশিনগানের নেই।

১৮ মার্চ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানের খ-অঞ্চলের সামরিক প্রশাসক লে. জেনারেল টিক্কা খান কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি ও কমিটি গঠনের ব্যাপারটি প্রত্যাখ্যান করে একটি বিবৃতি প্রদান করেন। পরের দিন দৈনিক পাকিস্তান পত্রিকায় প্রকাশিত সে বিবৃতির অংশবিশেষ ছিল, 'এ ধরনের কমিশন দিয়ে কোন ফায়দা পাওয়া যাবে না। এ ধরনের তদন্ত আদৌ কোনো প্রকৃত তদন্ত হবে না, সত্যেও উপনীত হওয়া যাবে না। বরং এটা হবে জনগণকে বিভ্রান্ত করার অপকৌশল মাত্র।'

১৮ মার্চ বঙ্গবন্ধু প্রতারণামূলক কমিশন প্রত্যাখ্যান করে তদন্তের জন্য নতুন কমিশন গঠন করেন। এদিন পাকিস্তান ন্যাপের সভাপতি ওয়ালী খান ঢাকায় আসেন। তিনি সমস্যা সমাধানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে ১ ঘণ্টা বৈঠক করেন। সে সময় তার সঙ্গে পশ্চিম পাকিস্তানের ন্যাপ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

এদিন করাচি বসে ভুট্টো স্পষ্ট জানিয়ে দেন, আলোচনার জন্য তিনি ঢাকা গেলেও কোনো কাজ হবে না। তার ঢাকা আসতে অসম্মতি রাজনৈতিক জটিলতা বৃদ্ধি করে। এদিন পাকিস্তানের করাচিতে এক সংবাদ সম্মেলনে কাউন্সিল মুসলিম লীগ নেতা মিয়া মমতাজ দৌলতানা জানান, তার দল কেন্দ্রে ও প্রদেশে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করতে রাজি আছে। তিনি বঙ্গবন্ধুর চার দফা মেনে নেয়া উচিত বলে মন্তব্য করেন।

১৮ মার্চ স্বাধীন বাংলা কেন্দ্রীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ এক বিবৃতিতে স্বাধীনতা সংগ্রামে বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষের পক্ষে বিশ্ব নেতৃত্বের সমর্থন কামনা করে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, চীন প্রভৃতি দেশের সরবরাহকৃত অস্ত্রের দ্বারা বাঙালি নিধনের প্রয়াস বন্ধ করার আহ্বান জানানো হয়। প্রতিবেশী রাষ্ট্রগুলোর কাছে পশ্চিম পাকিস্তান থেকে আগত সামরিক বাহিনী ও অস্ত্রের চালান বোঝাই উড়োজাহাজের চলাচল বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ করা হয়।

১৮ মার্চ রাতে সরকারি প্রজ্ঞাপনে জানানো হয়, আগামীকাল বেলা ১১টায় আওয়ামী লীগ প্রধান শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রেসিডেন্ট আগা মোহাম্মদ ইয়াহিয়া খানের মধ্যে বর্তমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে তৃতীয় দফা আলোচনা অনুষ্ঠিত হবে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত