প্রদীপ সাহা, সাপাহার

০৫ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:৪৪

সাপাহারের গণকবরটির খোঁজ রাখেনি কেউ

মুক্তিযুদ্ধের ৪৮ বছর পেরিয়ে গেলেও নওগাঁ জেলার সাপাহার উপজেলা জিরো পয়েন্টে অবস্থিত গণকবরটির খোঁজ রাখেনি কেউ। তাই অযত্নে আর অবহেলায় সেটি আজ স্মৃতির পাতা থেকে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে হারিয়ে যেতে বসেছে।

উপজেলার প্রবীণ ব্যক্তি ও অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাদের সূত্রে জানা গেছে, দেশে স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু হওয়ার সাথে সাথে সাপাহার উপজেলাতেও পাক সেনারা তাদের শক্তিশালী ক্যাম্প (ঘাঁটি) বসায়। এর পর সেখান থেকে তারা বিভিন্ন গ্রামে গ্রামে গিয়ে স্বাধীনতাকামী নিরস্ত্র মানুষদের বসতবাড়িতে আগুন লাগিয়ে মা বোনদের ইজ্জত হরণ করে এক ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে। সে সময় অসংখ্য স্বাধীনতাকামী মানুষদের ধরে এনে ব্রাশফায়ার করে উপজেলার জিরো পয়েন্ট এলাকায় বর্তমানে নব নির্মিত মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্স ভবনের সামানে রাস্তার পার্শ্বে অবস্থিত ব্রিটিশ শাসনামলের একটি বিশাল আকৃতির পাত কুয়ায় ফেলে দিত। এমনকি অনেক সময় জীবন্ত মানুষদেরকেও সেখানে ফেলে দিয়ে জীবন্ত কবর দিত। সে হিসেবে ওই কুপটি একটি গণকবরে পরিণত হয়।

স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে বরেন্দ্র এলাকায় পানীয় জলের সমস্যা সমাধানে সম্ভবত ১৯৮৫ কিংবা ৮৬ সালের দিকে তৎকালীন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান প্রয়াত রোস্তম আলী প্রিন্সিপাল ওই গণকবরের কুপটিকে সংস্কারের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এসময় কুপ খননকারী কয়েকজন মিস্ত্রি সংস্কারের জন্য নামে; ওই কুপে কিন্তু সেসময় সেখান থেকে মানুষের হাড়গোড় ও কঙ্কাল বের হতে থাকলে মিস্ত্রির লোকজন কাজ বন্ধ করে দেয়। পরবর্তীতে তাদের পারিশ্রমিক দ্বিগুণ হারে বেড়ে দেয়ায় তারা হাড়গুলি কুপ থেকে ওঠে অন্যত্রে দাফন করে কুয়াটিকে পুন:সংস্কার করে এবং কয়েক সপ্তাহ পরে সে কুয়ার পানি পানের উপযোগী করে তোলা হয়।

এরপর ডিজিটাল বাংলাদেশ এগিয়ে গেলে অত্যাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করে বরেন্দ্র অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকায় নলকূপ গভীর নলকূপ স্থাপন করে মানুষ পানিয় জলের প্রয়োজন মেটাতে থাকে। যার ফলে ধীরে ধীরে কুপটি আবারো অকেজো হয়ে পানি পানের অনুপযোগী হয়ে পড়ে এবং এক সময় তা ময়লা মাটি জমে বন্ধ হয়ে যায়। বর্তমানে সেখানকার পরিবেশ এমন মসৃণ হয়ে পড়েছে যে, ওই গণকবর বা কুপটি কোথায় ছিল তা বোঝা বেশ মুশকিল হয়ে পড়েছে।

উপজেলার অনেক স্বাধীনতার পক্ষের লোকজন ও মুক্তিযোদ্ধারা মনে করছেন স্বাধীনতার এত বছর পরেও কেউ ওই গণকবরটি খোঁজ নেয়নি কিংবা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে স্মরণ করিয়ে দিতে স্থানটি ঘিরে রেখেও তার স্মৃতি রক্ষা করেনি।

এবিষয়ে সাবেক মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আলহাজ্ব ওমর আলীর সাথে কথা হলে দু:খপ্রকাশ করে তিনি জানান যে, স্বাধীনতার এত বছর পেরিয়ে গেলেও উপজেলার মুক্তিযোদ্ধারা কিংবা কোন সরকারও জায়গাটির স্মৃতি রক্ষায় এগিয়ে আসেনি। তবে বর্তমান সরকার বেশ কয়েক বছর ধরে দেশের সকল গণকবর এর স্মৃতি রক্ষার বিভিন্ন উদ্যোগ নিলে তিনি সরকারের গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে ওই গণকবরটির তালিকা প্রদান করেন। যার প্রেক্ষিতে গণকবরটির স্মৃতি রক্ষায় ২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এরপর সরকারের গণপূর্ত বিভাগের লোকজন জায়গাটি পরিদর্শনে আসেন কিন্তু বর্তমানে জায়গাটির ছোট হওয়ায় সেখানে কোন স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ করা সম্ভব নয় বলে জানান।

বীর মুক্তিযোদ্ধা আলতাফুল হক চৌধুরী আরব সহ উপজেলার সকল মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের দাবি ছোট পরিসরে হলেও মহান মুক্তিযুদ্ধের কথা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে স্মরণ করিয়ে দিতে সেখানে একটি স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপিত করা হোক।

এজন্যে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন জানিয়েছেন সকল মুক্তিযোদ্ধা ও শহীদ মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের সদস্যগণ।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত