নিজস্ব প্রতিবেদক

২৭ জানুয়ারি, ২০২১ ০২:৫২

সুরক্ষার স্বপ্ন দেখার ঐতিহাসিক মুহূর্তে দেশ

করোনাভাইরাস থেকে সুরক্ষার স্বপ্ন দেখানোর ঐতিহাসিক দিন আজ। আজ বুধবার দেশে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব শনাক্তের ৩২৬ দিনের মাথায় বৈশ্বিক এ মহামারি থেকে মুক্তির পথ দেখানো টিকা দান কার্যক্রমে প্রবেশ করছে বাংলাদেশ। যুক্তরাজ্যের উদ্ভাবিত ও ভারতের সেরাম ইন্সটিটিউট থেকে উৎপাদিত ‘কোভিশিল্ড’ টিকা আজ দেশের মানুষের দেহে প্রয়োগ করা হবে।

বুধবার (২৭ জানুয়ারি) বিকাল সাড়ে ৩টায় রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে প্রথম যাকে টিকা দেওয়া হবে তার নাম আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়নি। তবে হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, তিনজন নার্সকে প্রস্তুত থাকতে বলা হয়েছে। তাদের মধ্যে যে কাউকে প্রথম টিকাটি দেওয়া হবে। কে আগে টিকা পাবেন, সেটি তিনজনের কাউকেই জানানো হয়নি। তবে এরই মধ্যে নানা মাধ্যমে আলোচনায় আসে রুনু ডি কস্তা নামে একজন নার্স প্রথম টিকাটি নেবেন। এই হাসপাতালের আরও দুজন চিকিৎসককেও টিকা দেওয়া হবে আজ।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি টিকা দেওয়ার কর্মসূচির উদ্বোধন করবেন।

এরই মধ্যে দেশে এসেছে অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকারের ৭০ লাখ চার হাজার ডোজ ‘কোভিশিল্ড’ টিকা। প্রথমে ২০ জানুয়ারি এসেছে ভারত সরকারের পাঠানো ২০ লাখ চার হাজার ডোজ উপহারের টিকা এবং গত সোমবার এসেছে সরকারি টাকায় কেনা তিন কোটি টিকার প্রথম চালানের ৫০ লাখ ডোজ।

প্রধানমন্ত্রী টিকা প্রদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করার পরপরই সবার জন্য চালু হবে সুরক্ষা অ্যাপস। উদ্বোধনী পর্বে টিকা দেওয়া হবে বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার ২৫ জনকে। বৃহস্পতিবার থেকে ঢাকার পাঁচটি হাসপাতালে তালিকাভুক্ত প্রায় ৫০০ স্বাস্থ্যকর্মীকে পাইলট রান বা পর্যবেক্ষণের জন্য টিকা দেওয়া হবে। টিকা দেওয়ার আগে প্রত্যেকের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে।

এরই মধ্যে অক্সফোর্ডের টিকা ব্যবহারের জন্য চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর। মঙ্গলবার অধিদপ্তরের ড্রাগ টেস্টিং ল্যাবে ভারত থেকে আসা টিকার কাগজপত্র, তাপমাত্রা ও ভায়েলের অবস্থা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে টিকা দেশের মানুষের শরীরে ব্যবহারের জন্য অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।

ঢাকার পাঁচ হাসপাতালে টিকা দেওয়া ও পর্যবেক্ষণের পর আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে টিকা দেওয়া শুরু হবে সারা দেশে সাধারণ মানুষের মধ্যে। প্রথমে অগ্রাধিকার পাবেন করোনা মোকাবেলার সম্মুখ সারির যোদ্ধা হিসেবে বিবেচিত চিকিৎসক, নার্স, স্বাস্থ্যকর্মী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও সাংবাদিক এবং বয়স্ক জনগোষ্ঠীর তালিকাভুক্তরা। পর্যায়ক্রমে টিকা পাবে অন্যরা।

কুর্মিটোলা হাসপাতালে টিকার উদ্বোধনী পর্বের আয়োজনের প্রস্তুতি গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রী জাহিদ মালেক। তিনি বলেন, ‘আমাদের সব প্রস্তুতি সম্পন্ন। প্রধানমন্ত্রী ভার্চুয়ালি টিকাদান পর্ব উদ্বোধন করবেন। প্রথমে একজন নার্সসহ কুর্মিটোলা হাসপাতালের পাঁচ স্বাস্থ্যকর্মী টিকা নেবেন। এরপর বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার আরও ২০ জনকে টিকা দেওয়া হবে। পরের দিন ঢাকা মেডিকেল কলেজ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, কুর্মিটোলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী হাসপাতালের প্রায় ৫০০ চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যকর্মীকে টিকা দেওয়া হবে। তাদের সাত দিন পর্যবেক্ষণে রাখা হবে। এরপর ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সারা দেশে টিকা দেওয়ার মূল কার্যক্রম শুরু হবে। মন্ত্রী বলেন, টিকা দেওয়ার জন্য নিবন্ধন অ্যাপস চালু হবে প্রধানমন্ত্রীর উদ্বোধনের পরপরই। উদ্বোধনী পর্বে যাদের টিকা দেওয়া হবে, তাদের তালিকা চূড়ান্ত করা হয়েছে।’

এদিকে মঙ্গলবার সকালে রাজধানীর মহাখালীতে ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তরে সংস্থাটির মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মাহবুবুর রহমান এক ব্রিফিংয়ে বলেন, ‘গত সোমবার ভারত থেকে আসা ৫০ লাখ টিকার ব্যাচভিত্তিক নমুনা ও প্রয়োজনীয় কাগজপত্র পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে সব কিছু ঠিকঠাক পাওয়া গেছে। ফলে আমরা এই টিকা বাংলাদেশের মানুষের জন্য ব্যবহারের উপযোগী বলে অনুমোদন দিয়ে দিয়েছি। তবে আগে উপহারের আসা ২০ লাখ টিকা এখনো পরীক্ষা হয়নি।’

তিনি বলেন, ‘ভারতের বিশ্বখ্যাত সেরাম ইনস্টিটিউটে এই টিকার উৎপাদন হলেও এটি ভারতীয় কোনো টিকা নয়। এটি তৈরি হয়েছে অক্সফোর্ড ও অ্যাস্ট্রাজেনেকার ফর্মুলায়। এর মান নিয়ে কোনো বিভ্রান্তির সুযোগ নেই।’

উল্লেখ্য, ২০১৯ সালের ডিসেম্বরে চীনের উহান প্রদেশে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব শনাক্ত হয়। এরপর গত বছরের মার্চ মাসের ৮ তারিখে বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্তের তথ্য জানায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এর ১০ দিনের মাথায় দেশে করোনা আক্রান্ত প্রথম কোনো রোগীর মৃত্যু হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্যমতে, করোনার ৩২৫ দিন মঙ্গলবার পর্যন্ত বাংলাদেশে ৫ লাখ ৩২ হাজার ৯১৬ জনের দেহে করোনাভাইরাসের অস্তিত্ব শনাক্ত হয়। এদের মধ্যে মারা গেছেন ৮ হাজার ৫৫ জন, এবং সুস্থ হয়ে ওঠেছেন ৪ লাখ ৭৭ হাজার ৪২৬ জন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত