০৪ ডিসেম্বর, ২০২৩ ০০:০৭
এবার বিএনপিবিহীন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের মাথাব্যথার কারণ হয়ে উঠেছেন দলটির মনোনয়নবঞ্চিত নেতারা। দলীয় মনোনয়ন না পেয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তারা। সিলেট বিভাগের ১৯টি আসনের মধ্যে ১৫টিতেই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিতরা।
তবে তিন মন্ত্রী এম এ মান্নান, ইমরান আহমদ ও শাহাব উদ্দিনের আসনে দলের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হননি। যদি বিভাগের আরেক মন্ত্রী সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন একজন।
রোববার মনোনয়নপত্র যাছাইবাছাই করা হয। এরআগে বৃহস্পতিবার ছিল মনোনয়নপত্র জমাদানের শেষ দিন।
সিলেট বিভাগের ৪ রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বিভাগের মধ্যে কেবল সিলেট-৪, সুনামগঞ্জ-৩, মৌলভীবাজার-১, হবিগঞ্জ-৩ আসনে আওয়ামী লীগের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হননি। এ আসনগুলোতে আওয়ামী লীগের প্রার্থী যথাক্রমে প্রবাসীকল্যান ইমরান আহমদ, পরিকল্পনা মন্ত্রী এমএ মান্নান, পরিবেশ ও বনমন্ত্রী শাহাব উদ্দিন আহমদ এবং হবিগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু জাহির।
এবার দলীয় মনোনয়ন চূড়ান্ত করার পরই নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ করার লক্ষ্যে মনোনীত প্রার্থীর পাশাপাশি ডামি প্রার্থী রাখার নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ নির্দেশনা পেয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিতদের স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার হিড়িক পড়ে যায়। দেশের প্রায় প্রতিটি সংসদীয় আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নবঞ্চিতরা স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। এই ডামি প্রার্থীরাই যন্ত্রণার কারণ হয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের। তবে এ যন্ত্রণায় অনেকটা স্বস্তিতে আছেন মান্নান, ইমরান ও শাহাব উদ্দিন। তাদের আসনে নেই কোনো স্বতন্ত্র প্রার্থী।
সুনামগঞ্জ-৩ (জগন্নাথপুর-শান্তিগঞ্জ) আসনে দলের কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে না ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নানকে।
এ আসনে ৭ জন প্রার্থী তাদের মনোনয়নপত্র দাখিল করেছেন। তারা হলেন তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট মাওলানা শাহীনুর পাশা চৌধুরী, জাতীয় পার্টির দলীয় প্রার্থী যুক্তরাজ্য প্রবাসী তৌফিক আলী মিনার, জাতীয় গণফ্রন্ট এর মকবুল হোসেন, আওয়ামী লীগের প্রার্থী এম এ মান্নান, জাকের পার্টির নজরুল ইসলাম ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহফুজুর রহমান খালেদ। এরমদ্যে রোববার স্বতন্ত্র প্রার্থী মাহফুজুর রহমান খালদের মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে।
এখানে এম এ মান্নান ছাড়াও আরও ৪ জন আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। তারা হলেন- কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যকরী কমিটির সদস্য আজিজুস সামাদ ডন, জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য খায়রুল কবীর রুমেন, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাজিদুর রহমান ফারুক ও যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা আশরাফুল ইসলাম। তবে মনোনয়ন বঞ্চিতদের কেউ নির্বাচনে প্রার্থী হননি।
এ ব্যাপারে জগন্নাথপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল করিম রিজু বলেন, জগন্নাথপুরের আওয়ামী লীগ ঐক্যবদ্ধ হয়ে নৌকার পক্ষে কাজ করবে। এখানে কেউ দলের বিরুদ্ধে যাবে না।
মৌলভীবাজার-১ (জুড়ী-বড়লেখা) আসনেও আওয়ামী লীগের কেউ স্বতন্ত্র প্রার্থী হননি। এ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী শাহাব উদ্দিন আহমদ। এর আগে টানা তিনবারের সহ মোট ৪ বারের সংসদ সদস্য তিনি।
এই আসনে ছাত্রলীগের সাবেক সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন, বড়লেখা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিকুল ইসলাম সুন্দর, কেন্দ্রীয় যুবলীগের সাবেক সদস্য অ্যাডভোকেট সিরাজুল ইসলাম, কুলাউড়া থানা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলমও দলীয় মনোনয়ন চেয়েছিলেন। তবে তাদের কেউই স্বতন্ত্র প্রার্থী হননি।
ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এস এম জাকির হোসাইন বলেন, ‘এই দুই উপজেলার মানুষ নানাভাবে অনুরোধ করছে বিদ্রোহী প্রার্থী হতে। কিন্তু নৌকার বাইরে গিয়ে নির্বাচন করার মনমানসিকতা নেই। দলীয় প্রার্থীর জয়ের জন্য কাজ করব।’
এ আসনে শাহাব উদ্দিন ছাড়াও মনোনয়ন জমা দিয়েছেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী আহমেদ রিয়াজ উদ্দিন, তৃণমূল বিএনপির আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, ধর্মভিত্তিক সংগঠনের নেতা কাজী ময়নুল ইসলাম ও ব্যবসায়ী ফারুক আহমেদ (ভাণ্ডারী)।
সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট-জৈন্তাপুর-কোম্পানীগঞ্জ) আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। এ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন চেয়েছিলেন আরও ৭ জন। তবে তারা কেউ প্রার্থী হননি। ইমরানকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন তারা।
এখানে আওয়ামী লীগের অপর মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন- গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মোহাম্মদ ফারুক আহমদ, সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সহ-সভাপতি ও জেলা আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মাহফুজুর রহমান, গোয়াইনঘাট সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ, গোয়াইনঘাট উপজেলা ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি মো. ফজলুল হক, সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি গোলাপ মিয়া, গোয়াইনঘাট উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও পশ্চিম আলীরগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. গোলাম কিবরিয়া হেলাল, জাতীয় শ্রমিক লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির কার্যনির্বাহী সদস্য ও জাতীয় শ্রমিক লীগ সিলেট মহানগর শাখার সাধারণ সম্পাদক নাজমুল আলম রোমেন, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি ও সিলেট জজকোর্টের সহকারী পিপি অ্যাডভোকেট শাহজাহান চৌধুরী।
বিভাগের তিন মন্ত্রী ডামির যন্ত্রনা থেকে রেহাই পেলেও সিলেট-১ আসনের আওয়ামী লীগের প্রার্থী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী একে আব্দুল মোমেনকে পড়তে হচ্ছে ডামির চ্যালেঞ্জে। তার আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক মিসবাহ উদ্দিন সিরাজ।
আপনার মন্তব্য