০৫ ডিসেম্বর, ২০২৩ ১৬:১৭
‘সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমে যাওয়ায়’ বার্ষিক আয় কমেছে সিলেট-৬ (গোলাপগঞ্জ ও বিয়ানীবাজার) আসনের তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী সমশের মবিন চৌধুরীর। দল বদলানো এই নেতার পাঁচ বছরের ব্যবধানে সম্পদও কমেছে। একই আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদের আয় ও সম্পদ পাঁচ বছরের ব্যবধানে কিছুটা বেড়েছে।
২০১৮ সালের জাতীয় নির্বাচন ও এবারের নির্বাচনে প্রার্থী হতে দেওয়া হলফনামার তথ্য বিশ্লেষণ করে এই চিত্র পাওয়া গেছে। হলফনামার তথ্য অনুযায়ী, সমশের মবিনর বার্ষিক আয় ৫ বছরে প্রায় পৌনে ২ কোটি টাকা থেকে ৮ লাখ টাকায় নেমেছে। অন্যদিকে নুরুল ইসলামের বার্ষিক আয় সোয়া ১৬ লাখ টাকা থেকে সোয়া ৫০ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। সমশের বর্তমানে ‘অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা’। অন্যদিকে নুরুল ইসলাম পেশায় ‘রাজনৈতিক কর্মী’। দুজনের কারও কোনো ঋণ নেই।
সমশের মবিন চৌধুরী বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ছিলেন। তিনি ২০১৫ সালে বিএনপি থেকে পদত্যাগ করেন। ২০১৮ সালের ৮ ডিসেম্বর বিকল্পধারা বাংলাদেশে যোগ দিয়ে পররাষ্ট্র বিষয়ক উপদেষ্টা হন। পরে গত নির্বাচনে বিকল্পধারার মনোনয়নে সিলেট-৬ আসনে প্রার্থী হন। যদিও পরে আওয়ামী লীগের প্রার্থী নুরুল ইসলামকে সমর্থন দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ান। সম্প্রতি তিনি ‘কিংস পার্টি’ হিসেবে পরিচিত পাওয়া তৃণমূল বিএনপির চেয়ারপারসন নির্বাচিত হন।
সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সিলেট-৬ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনয়নে প্রথমবারের মতো নির্বাচিত হন নুরুল ইসলাম। পরে ২০০৮ সালে নবম, ২০১৪ সালে দশম ও ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও তিনি দলীয় মনোনয়ন পেয়ে বিজয়ী হন। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর টানা দুই দফা তিনি শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। দলের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম সভাপতিমণ্ডলীর সদস্যও ছিলেন নুরুল ইসলাম।
সমশের মবিন ২০১৮ সালে হলফনামায় তার বার্ষিক আয়ের পরিমাণ দেখিয়েছিলেন প্রায় পৌনে ২ কোটি টাকা। এবার তা দেখিয়েছেন ৮ লাখ টাকার কিছু বেশি। এবারের আয়ের পুরোটাই তিনি ‘শেয়ার, সঞ্চয়পত্র, ব্যাংক আমানত’ থেকে পান। আয় কমার কারণ হল ২০১৮ সালের মতো এবার তার ব্যাংক ডিপোজিট ও সেভিং সার্টিফিকেট মুনাফা এবং পেশাগত আয় নেই। ২০১৮ সালে এ তিন খাতে তিনি বার্ষিক ২৫ লাখ ৫৩ হাজার ২১৫ টাকা আয় করতেন। এ ছাড়া ২০১৮ সালে ‘শেয়ার, সঞ্চয়পত্র/ব্যাংক আমানত’ খাত থেকেই তিনি বার্ষিক আয় করতেন ১ কোটি ৩৭ লাখ টাকা।
হলফনামা অনুযায়ী, সমশেরর অস্থাবর সম্পদ এবার প্রায় ১ কোটি টাকা কমেছে। এবার তিনি তার অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন প্রায় পৌনে ৩ কোটি টাকার। ২০১৮ সালে তিনি অস্থাবর সম্পদের মূল্য দেখিয়েছিলেন প্রায় ৪ কোটি টাকার। তবে ২০১৮ সালের মতো এবারও তার স্থাবর সম্পদ এবং দেনা নেই। এবার তিনি পেশার ঘরে ‘অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মকর্তা’ লিখছেন। ২০১৮ সালে তা লিখেছিলেন ‘বেসরকারি চাকুরীজীবী’।
বর্তমানে কোনো ফৌজদারি মামলা এবং অতীতে কোনো ফৌজদারি মামলা ছিল কি না, এমন তথ্যের ঘরে সমশের মবিন এবার ‘প্রযোজ্য নয়’ বলে উল্লেখ করেছেন। যদিও ২০১৮ সালে জমা দেওয়া হলফনামায় অতীতে তার বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে ঢাকার বিজ্ঞ সিএমএম আদালতে তিনটি মামলা হয়েছে বলে উল্লেখ করেছিলেন। এর মধ্যে তখন দুটি মামলা চলমান ছিল এবং একটি খারিজ হয়েছে বলে উল্লেখ করেছিলেন তিনি।
আয় কমার বিষয়ে জানতে চাইলে সমশের মবিন চৌধুরীম বলেন, ‘আমি সরকারি চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর পেনশনার সঞ্চয়পত্র করেছিলাম। এখন সঞ্চয়পত্রের মুনাফার হার কমে যাওয়ায় আয় কমেছে। এ ছাড়া আমার বিকল্প কোনো আয়ও নেই। তাই আয় কমেছে।’ মামলার বিষয়ে তার দাবি, সব কটি মামলা খারিজ হয়ে যাওয়ায় পুরোনো মামলার তথ্য হলফনামায় উল্লেখ করেননি।
এদিকে সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলামের হলফনামা অনুযায়ী, পেশা হিসেবে তিনি নিজেকে রাজনৈতিক কর্মী উল্লেখ করেছেন। এবার তিনি বার্ষিক আয় দেখিয়েছেন সোয়া ৫০ লাখ টাকা। ২০১৮ সালে তা ছিল সোয়া ১৬ লাখ টাকা। এবার তিনি ২ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন। ২০১৮ সালে তা ছিল ছিল দেড় কোটি টাকার। এবার তার সোয়া ২৭ লাখ টাকার স্থাবর সম্পদ আছে বলে উল্লেখ করেছেন।
বিগত চারটি নির্বাচনে রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে নুরুল ইসলামের জমা দেওয়া হলফনামা ঘেঁটে দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে তার আয় বেড়েছে তিন গুণ। অন্যদিকে ১৫ বছরের ব্যবধানে তার আয় বেড়েছে সাড়ে ১৩ গুণ। গত পাঁচ বছরে নাহিদের অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে সোয়া গুণ। অন্যদিকে ১৫ বছরে তার অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে সাড়ে ৯ গুণ।
২০০৮ সালে নুরুল ইসলাম পেশা হিসেবে রাজনৈতিক কর্মী ও কৃষিজীবী উল্লেখ করেছেন। এরপর সব সময় তিনি পেশার কোঠায় নিজেকে রাজনৈতিক কর্মী উল্লেখ করেছেন। তার বার্ষিক আয় ২০০৮ সালে প্রায় পৌনে ৪ লাখ এবং ২০১৪ সালে প্রায় পৌনে ১৮ লাখ টাকা ছিল। এ ছাড়া তার ২০০৮ সালে সাড়ে ২১ লাখ টাকার এবং ২০১৪ সালে প্রায় ১ কোটি টাকার অস্থাবর সম্পদ ছিল। প্রতিবারই তিনি স্থাবর সম্পদের মধ্যে কৃষি ও অকৃষিজমি এবং দালান দেখিয়েছেন।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, নুরুল ইসলাম ও সমশের মবিন ছাড়াও এখানে জাতীয় পার্টির (জাপা) সেলিম উদ্দিন, ইসলামী ঐক্যজোটের সাদিকুর রহমান, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের আতাউর রহমান এবং স্বতন্ত্র সরওয়ার হোসেনের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে।
সেলিম উদ্দিন ২০১৪ সালে সিলেট-৫ (কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ) আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। এবার তিনি সিলেট-৬ আসনে প্রার্থী হয়েছেন। এবারের হলফনামার তথ্যানুযায়ী, তিনি একজন ব্যবসায়ী। বর্তমানে তার বার্ষিক আয় ২ লাখ টাকার কিছু বেশি। এখন তার ৮ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ এবং প্রায় ৩ কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ আছে।
একাদশ ও দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে জমা দেওয়া হলফনামায় দেখা গেছে, ২০১৮ সালে সেলিমের বার্ষিক আয় ছিল প্রায় ২৫ লাখ টাকা। তখন তার দেড় কোটি টাকার অস্থাবর সম্পদ এবং প্রায় দেড় কোটি টাকার স্থাবর সম্পদ ছিল। ২০১৪ সালে তিনি বার্ষিক আয় দেখাননি। তখন তিনি প্রায় সোয়া কোটি টাকার অস্থাবর সম্পদ এবং কৃষি ও অকৃষিজমি, দালান ও বাড়ি স্থাবর সম্পদ হিসেবে দেখিয়েছেন।
অন্য প্রার্থীদের মধ্যে স্বতন্ত্র প্রার্থী সরওয়ার হোসেনের বার্ষিক আয় প্রায় ৩ লাখ টাকা। ‘স্বশিক্ষিত’ সরওয়ার কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। তার ৭৮ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ রয়েছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন।
‘স্বশিক্ষিত’ দাবি করা আতাউর রহমানের বার্ষিক আয় সাড়ে ৪ লাখ টাকা। তার ৫ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ ও ১টি জিপ আছে। অপর প্রার্থী সাদিকুর রহমানের বার্ষিক আয় প্রায় পৌনে ৪ লাখ টাকা। তার ৭ লাখ টাকার অস্থাবর সম্পদ এবং সাড়ে ৭ লাখ টাকার স্থাবর সম্পদ আছে বলে হলফনামায় উল্লেখ করেছেন।
আপনার মন্তব্য