সিলেটটুডে ডেস্ক

২৯ জানুয়ারি, ২০১৭ ১৭:০০

রামপাল প্রকল্প : প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাব জাতীয় কমিটির

রামপাল প্রকল্প নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রেক্ষিতে বিবৃতি দিয়েছে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব আনু মুহাম্মদ তাঁর ফেসবুক আইডিতে এ বিবৃতি প্রকাশ করেছেন।

বিবৃতির হুবহু তুলে ধরা হলো:

“গতকাল ২৮ জানুয়ারি চট্টগ্রামে এক অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আবারও রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের পক্ষে কথা বলেছেন। তিনি বলেছেন, আমাদের রামপাল ঘুরে আসতে যাতে আমরা সুন্দরবন থেকে এই প্রকল্পের দূরত্ব বুঝতে পারি। প্রধানমন্ত্রীর অবগতির জন্য জানাচ্ছি যে, বর্তমান ডিজিটাল যুগে দূরত্ব জানার জন্য এলাকায় গিয়ে ফিতা দিয়ে মাপার দরকার হয়না, পৃথিবীর যেকোনো প্রান্তে বসে এই দূরত্ব বের করা সম্ভব। প্রধানমন্ত্রী যে দূরত্ব বলেছেন আমরা তা স্বীকার করি, এই দূরত্ব যে নিরাপদ নয়, তা বহুবার তথ্যপ্রমাণ সহ আমরা উপস্থিত করেছি। সরকারের আমন্ত্রণে এবং সরকারি আতিথ্যে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ দল এবং ইউনেসকো টিম সুন্দরবন রামপাল এলাকা সফর করেছেন। কিন্তু এই সফর করে তাঁদের মত বদলায়নি, তাঁরা সকলেই এই বিদ্যুৎ প্রকল্প বাতিলের কথাই বলেছেন। আমরা বহুবার রামপাল গেছি, যাবার কারণেই আমরা আরও নিশ্চিত হয়েছি যে, রামপাল প্রকল্প সুন্দরবন সহ উপকূলীয় অঞ্চলের জন্য ধ্বংসযজ্ঞ ডেকে আনবে।

প্রধানমন্ত্রী আমাদের রামপাল থেকে সুন্দরবন পদযাত্রা করতে পরামর্শ দিয়েছেন। আমরা এই পরামর্শ গ্রহণ করলাম। আশা করি পুলিশ ও সরকারি দলের মাস্তান বাহিনী অন্যান্য বারের মতো এ যাত্রায় বাধা সৃষ্টি করবে না।

প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, আমরা মানুষ নয় বাঘের কথা চিন্তা করছি। আমরা প্রধানমন্ত্রীকে স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যে, ঢাকায় অনুষ্ঠিত আন্তর্জাতিক বাঘ সম্মেলনে তিনিই বলেছিলেন, ‘বাঘ বাঁচলে সুন্দরবন বাঁচবে, সুন্দরবন বাঁচলে বাংলাদেশ বাঁচবে’। বাঘসহ অসংখ্য প্রাণের আধার হিসেবে সুন্দরবন অসাধারণ প্রাণশক্তি ধারণা করে। বন বেঁচে থাকা দরকার, জৈববৈচিত্র রক্ষা করা দরকার মানুষের জন্যই । ৩৫-৪৫ লক্ষ মানুষের জীবিকা, ৫ কোটি মানুষের জীবন নিরাপত্তা এই সুন্দরবনের উপরই নির্ভর করে।

সুন্দরবন বাঁচাতে হবে মানুষ বাঁচাতে, বাংলাদেশ বাঁচাতে।

প্রধানমন্ত্রী প্রযুক্তির কথা বলেছেন। এবিষয়েও আমরাসহ দেশ বিদেশের বহু বিশেষজ্ঞ বৈজ্ঞানিক তথ্য উপাত্ত দিয়ে দেখিয়েছেন কীভাবে এই প্রযুক্তি সুন্দরবন বাঁচাতে পারবে না। এর সীমাবদ্ধতার কারণেই এর চাইতে বেশি দূরত্বেও এনটিপিসি ভারতে বিদ্যুৎ কেন্দ্র করবার অনুমতি পায়নি। চীন ভারতসহ বহু দেশ এসব কেন্দ্র বাতিল করছে। তিনি সম্প্রতি কয়লা ভরা জাহাজ ডুবির কথা বলেছেন। গত তিন বছরে বহুজাহাজ ডুবির ঘটনা ঘটেছে, সর্বশেষ ১ হাজার টন কয়লা নিয়ে জাহাজ ডুবেছে। এর যে দীর্ঘমেয়াদী ক্ষতি তা নিয়ে সরকারের কোনো মাথাব্যথা দেখা যায়নি, এগুলো উদ্ধার, ক্ষতি হ্রাস, এধরনের পরিবহণ বন্ধ করার বিষয়ে সরকারের কোনো উদ্যোগ দেখা যায়নি। রামপাল প্রকল্প হলে এই পথেই প্রতিদিন ১৩ হাজার টন কয়লার জাহাজ যাবে, আমাদের উদ্বেগ সে কারণেই আরও বেশি।

প্রধানমন্ত্রীকে অনুরোধ করবো, যুক্তি তথ্য শুনুন, জনমত বিবেচনায় নিন, মানুষের কথা ভাবুন। দেশি ভূমি বন গ্রাসী কিছু গোষ্ঠী আর ভারতের ব্যবসায়িক স্বার্থের কাছে আত্মসমর্পণ করে দেশের সর্বনাশ করবেন না, অবিলম্বে রামপাল প্রকল্পসহ সুন্দরবনবিনাশী সকল অপতৎপরতা বন্ধ করবার ব্যবস্থা নিন।”

আপনার মন্তব্য

আলোচিত