আরিফ জেবতিক

১২ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:৪৩

পশ্চাৎপদ লোকজনকে গুরুত্ব দেওয়ার দরকার নেই

তেঁতুল হুজুরের এই ওয়াজটা তো নতুন না। আমি আগেও উনার এমন ওয়াজ শুনেছি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিল, মেয়েদেরকে গার্মেন্ট কারখানায় কাজ করতে দিতে পাঠাবেন না, তারা সেখানে কাজ করে নাকি জিনা (পতিতা বৃত্তি) করে টাকা আনে, তার ঠিক নাই।

মেয়েদেরকে ক্লাস ফোর পর্যন্ত পড়াবেন যাতে হিসাব কিতাব রাখে পারে, এর বেশি দরকার নেই- এটা উনার একটা ট্রেডমার্ক বক্তব্য।

কথা হচ্ছে এসব পশ্চাৎপদ লোকজনকে আমাদের গুরুত্ব দেওয়ার দরকার নেই। এরা সংঘবদ্ধভাবে একটা মব, একথা সত্যি। সেই মব সামাল দিতে গেলে হয় লাঠির বাড়ি নয়তো লাঠি লজেন্স দিতে হয়। আওয়ামী লীগ আগে লাঠির বাড়ি দিয়েছে, ইদানীং লাঠি লজেন্স দিলে যেহেতু কাজ সহজে হয়, তাই লজেন্স ধরিয়ে দিয়েছে। এই সংঘবদ্ধ মব ছাড়া সামাজিক অগ্রগতিতে এদের কোনো ভূমিকা নেই, সেই অগ্রগতি থামিয়ে দেয়ার মুরোদও তাদের নেই।

গ্রামে গ্রামে শীতকালে ওয়াজের নামে এক শ্রেণীর ধর্মব্যবসায়ীরা নারীদের নামে অশ্লীল আলোচনা করে নিজেরাও গরম হয়, স্রোতাদেরকেও কু-বিনোদন দেয়। এটা স্রেফ বিনোদনই। আজ পর্যন্ত এই ওয়াজ শুনে কোনো নারী গার্মেন্ট কারখানার চাকুরি ছেড়ে গেছেন বলে শুনিনি।

আজ এবং আগামীকালের দিনগুলো লেখাপড়ার। গ্রামেগঞ্জে স্কুল-কলেজ-মাদ্রাসা-মহিলা মাদ্রাসা হচ্ছে কারণ লোকজন এখন লেখাপড়ার গুরুত্ব বুঝতে পারছে এবং নিজ নিজ সাধ্যমতো বাচ্চাদেরকে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে পাঠাচ্ছে।

স্বয়ং শফি হুজুর তাদের সনদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি পেয়ে খুশিতে আটখানা হয়ে 'কওমি জননী' উপাধি দিতে ঢাকা শহরে ছুটে এসেছে। অর্থাৎ প্রাতিষ্ঠানিক লেখাপড়ার গুরুত্ব তারা নিজেরাও বুঝতেছেন। কিন্তু যেহেতু অন্যকে লেখাপড়া থেকে বঞ্চিত করতে পারলে তাদের নিজেদের ব্যবসা সহজ হয়, তাই অন্যের লেখাপড়ার বিরুদ্ধে তাদের এসব ওয়াজ নসিহত চলতেই থাকবে।

বাংলাদেশ হচ্ছে বিশ্বের 'লিঙ্গভিত্তিক বেতন বৈষম্যের' বিরুদ্ধে সবচাইতে ভালো করা দেশ। এই তালিকায় আমরা বিশ্বের শ্রেষ্ঠ। এখানে মাঠে ঘাটে, রাস্তা বাজারে নারীরা দলে দলে কাজে নেমে পড়েছেন। অনেক প্রতিকূলতা, যৌন সন্ত্রাস, বৈষম্য ও সুযোগের অভাবের মাঝেও তাঁরা প্রবল বিক্রমে এগুতে শুরু করেছেন।

অন্ধকূপের প্রতিধ্বনি সেই অগ্রগতি আর থামাতে পারবে না।

  • আরিফ জেবতিক: লেখক, সাংবাদিক।
  • (ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

আপনার মন্তব্য

আলোচিত