মাহবুবুর রহমান

০৯ মে, ২০১৯ ০২:০৪

‘দিন যায়, কথা থাকে’

১৯৭৩ সালে সিলেটের যুগভেরীতে যোগদানের কিছুদিন পর এক সকালে অফিসে গিয়ে দেখি আমাদের বার্তা কক্ষের পাশের প্রশস্ত রুম যা ব্লক তৈরীর কাজে ব্যবহৃত হতো তা গোছগাছ ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করা হচ্ছে। ঘটনা কি, কি হবে আজ এখানে? জানলাম, আজ বিকেলে সুবীর নন্দীর গানের জলসা হবে।

সম্পাদক মরহুম আমীনূর রশীদ চৌধূরীর স্ত্রী ফাহমীদা রশীদ চৌধূরী আয়োজন করেছেন। বিকেলে আসলেন শিল্পী, এক সুদর্শন যুবক, সুবীর নন্দী। সঙ্গে ছিলেন আরেক শিল্পী হিমাংশু বিশ্বাস। ছিলেন সাংবাদিক অজয় পাল। সুবীর প্রায় দু'ঘন্টা সুরের আবেশ ছড়িয়ে সবাইকে মুগ্ধতায় ভরিয়ে দিলেন। এই প্রথম তাঁর সাথে দেখা ও গান শুনা।

তারপর সব ইতিহাস। ১৯৭৬ সালে আব্দুস সামাদের সূর্যগ্রহণ ছবিতে গান গেয়ে চলচিত্রের যাত্রা শুরু। ৪০ বছরের সঙ্গীত জীবনে আড়াই হাজারেরও বেশী গান গেয়ে কোটি কোটি মানুষের হৃদয় জয় করেছেন। পেয়েছেন একুশে পদক ও জাতীয় চলচিত্র পুরস্কার পাঁচবার।

বহু বছর পর তাঁর সঙ্গে দেখা জ্যাকসন হাইটসে উদীচীর অনুষ্ঠানে। কুশল বিনিময়ের পর বললাম, একটা আড্ডা হোক। তিনি রাজী। তখন মোমেন ভাইকে ( বর্তমান পররাষ্ট্র মন্ত্রী) প্রস্তাব দিলাম, সুবীর নন্দীকে নিয়ে আড্ডা দেবো। আপনি হোস্ট হলে প্রাণবন্ত আড্ডা হবে। মোমেন ভাই তখন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি। ম্যানহাটানে ২২ তালা ভবনের সর্বোচ্চ তালায় তার বাসভবন। তিনি সানন্দে রাজী হলেন। ভাবী ( মিসেস মোমেন) নৈশভোজের ব্যবস্থা করলেন। আরো কয়েকজন ঘনিষ্ট অতিথিকে মোমেন ভাই আমন্ত্রণ জানালেন। সুবীর নন্দী আসলেন সস্ত্রীক। আড্ডার ফাকে ফাকে চললো গান। সঞ্চালনার দায়িত্ব নিলাম আমি। সুবীর নন্দীর প্রতি আমার ভালবাসা ও উচ্ছাস এত প্রবল ছিল যে এক সময় বললাম, কলকাতামুখী বাংলাদেশের সঙ্গীতপ্রিয় মানুষদের যে শিল্পী ফিরিয়ে এনেছেন দেশে তিনি হলেন সুবীর নন্দী। শিল্পী সলাজ তাকালেন আমার দিকে। তাঁর চোখের ভাষা বুঝলাম, বলতে চাইছেন, একটু বেশী বেশী হয়ে গেল না? আমি জানি, কমই বলেছি আমি।

এরপর কেটে গেছে দীর্ঘদিন।

সর্বশেষ তাঁর সাথে দেখা ইয়র্ক কলেজের মাঠে সিলেট সম্মিলনীর গ্রীন রুমে। মঞ্চ থেকে সবে গান গেয়ে নেমেছেন। বললেন, আজ তৃপ্তি পাইনি গান গেয়ে। সেদিনের পরিবেশও তাই সায় দিচ্ছিল।

‘দিন যায়, কথা থাকে’।

তাঁর কথা আমৃত্যু আমার মনে থাকবে। তাঁর আত্মার শান্তি কামনা করি।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহিত)
মাহবুবুর রহমান: নিউইয়র্ক প্রবাসী সাংবাদিক।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত