অপূর্ব শর্মা

২৩ মার্চ, ২০২০ ১৯:০২

করোনার সময়ে গণমাধ্যম কর্মীদের উদ্দেশ্যে

প্রিয় সহকর্মী, মরণব্যাধি করোনার সর্বগ্রাসী থাবায় পুরো বিশ্ববাসী আজ নিরুপায়। পৃথিবীর ১৭৭টি দেশে ছড়িয়ে পড়েছে-প্রাণঘাতি এই ভাইরাসটি। নিকটকালে পৃথিবীজুড়ে এমন গভীর সংকট তৈরি হয়নি। ছোঁয়াচে এই রোগ থেকে বাঁচার জন্য বিশেষজ্ঞদের মতামত সম্পর্কে আমরা প্রত্যেকেই জ্ঞাত। কিন্তু আমরা এমন একটি পেশার সাথে সম্পৃক্ত যে ইচ্ছে করলেই নিজেদেরকে গুটিয়ে রাখতে পারবো না বা আমাদের পক্ষে নিজেদেরকে গুটিয়ে রাখা সম্ভবপর নয়।

বন্ধুরা, পেশার দায়বদ্ধতার প্রতি আমরা প্রত্যেকেই শ্রদ্ধাশীল। কিন্তু আজকে এমন একটি পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আমাদেরকে দায়িত্বপালন করতে হচ্ছে, যার অতীত কোনও অভিজ্ঞতাই নেই আমাদের। তাছাড়া আমাদের অঞ্চলটি প্রবাসী অধ্যুষিত হওয়ায় দেশের অন্যান্য অঞ্চলের তুলনায় সিলেট একটু বেশিই ঝুঁকিপূর্ণ। যদিও আমাদেরকে সবসময়ই ঝুকি নিয়ে কাজ করতে হয়; কিন্তু এবার যে ঝুঁকিটি নিয়ে আমরা দায়িত্বপালন করছি সেটি যে কোনও সময় নিজ প্রাণসংহারের যেমন কারণ হতে পারে তেমনই পরিবার এবং সমাজকেও ফেলতে পারে বিপদে। এজন্য দায়িত্ব পালনের সময় অবশ্যই, অবশ্যই আমাদেরকে সচেতন থাকতে হবে। প্রথমে নিশ্চিত করতে হবে নিজের সুরক্ষার বিষয়টি।

আবশ্যিকভাবে সুরক্ষা সরঞ্জাম পার্সোনাল প্রোটেকশন ইকুইপমেন্ট (পিপিই) নিয়ে ঘর থেকে বের হতে হবে। (যদিও সুরক্ষা সরঞ্জাম এখনো ততটা সহজলভ্য নয়, তারপরও যতোটা সম্ভব আক্রান্ত হওয়া থেকে বাঁচার জন্য প্রয়োজনীয় প্রোটেকশন অবশ্যই নিতে হবে)। পাশাপাশি বিভ্রান্তিমূলক তথ্য যাতে আমাদের মাধ্যমে প্রচারিত না হয় সেদিকেও দৃষ্টি দিতে হবে। করোনা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ালে তা হবে করোনার মতোই ভয়ঙ্কর ব্যাপার।

এ কথাটিও মনে রাখতে হবে, আমরা কারো সন্তান, ভাই, পিতা কিংবা জীবনসঙ্গী। সে কারনে নিজের জীবন এবং পরিবারের সুরক্ষার বিষয়টিও আমাদেরকে বিবেচনায় রাখতে হবে। আমার সুরক্ষার উপরই অনেকক্ষেত্রে নির্ভর করবে আমার পরিবারের সুরক্ষা। কারণ অন্য অনেক পেশার মানুষ ঘর থেকে না বের হলেও আমাদেরকে বের হতে হয়। এক্ষেত্রে আমরা খুবই গুরুত্বপূর্ণ সংবাদ সংগ্রহ করা ছাড়া সশরীরে হাজির হওয়া থেকে বিরত থাকতে পারি। আসল বিষয়টি হচ্ছে, সঠিক তথ্য সংগ্রহ এবং প্রচার করা। যেটি ঘরে এবং অফিসে বসেও আমরা করতে পারি।

বাঁচতে হবে আমাদেরকে। বাঁচাতে হবে মানুষকে। সচেতনতা সৃষ্টিতে আমাদেরকেই পালন করতে হবে মুখ্য ভূমিকা। কারণ মানুষের বিশ্বাসযোগ্যতার ক্ষেত্রে এখনো আমরাই আরোহন করছি শীর্ষে। তাই এই সংকটকালে সত্যিকার অর্থেই জাতির দর্পণ হতে হবে আমাদেরকে। এছাড়া বিকল্প কোনও পথ খোলা নেই আমাদের।

একজন বাঙালি হিসেবে এ কথা দৃঢ়চিত্তেই বলতে পারি, অতীতের প্রতিটি দুর্বিপাকই আমরা অতিক্রম করেছি যুথবদ্ধ প্রচেষ্ঠায়। আশাকরি করোনা মোকাবেলায়ও এর অন্যথা হবে না। মানুষই জয়ী হবে, অবশ্যই পরাস্ত হবে করোনা।
ভালো থাকুন সবাই। থাকুন নিরাপদ।

(ফেসবুক থেকে সংগৃহিত)
অপূর্ব শর্মা: লেখক, সাংবাদিক।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত