আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

সুন্দরবন, পুঁজিবাদ ও সমাজ প্রকৃতির প্রতীক

নিখিল নীল  

পুঁজিবাদের সঙ্গে প্রকৃতির সম্পর্ক সহ-অবস্থানের নয়। সম্পর্কটা আবার সহজে ধরে ফেলার মতও নয়।  যেমন— পুঁজিবাদ বিকশিতই হয় প্রকৃতিকে শোষণ করে— পুঁজিবাদ বিষয়ক এমন মন্তব্য যেমন অবধারিত সত্য,  এ-সত্যটা আবার অনেক ভয়ঙ্কর সত্যকে লুকিয়েও ফেলে। কারণ প্রকৃতি সর্বত্র সমান নয়।

নিউইয়র্ক-এর প্রকৃতি আর সুন্দরবনের প্রকৃতি এক নয়,  ঢাকার প্রকৃতি আর লাউয়াছড়া ফরেস্ট বা শ্রীমঙ্গলের চা-বাগানের প্রকৃতি এক নয়। তাই তাদের উপযোগিতাও ভিন্ন। হ্যাঁ, হয় ত নিউইয়র্ক বা ঢাকার প্রকৃতি এক সময় ছিল সুন্দরবনের কিছুর মত।

পুঁজি সেগুলোকে বহু আগে গিলে ফেলেছে। সংক্ষেপে বললে,  যে সব জায়গায় ব্যবসা জমে গেছে ইতোমধ্যে সে সব জায়গা থেকে পুঁজিবাদের উৎপাদনের আর কিছু নেই। তাই পুঁজিপতিরা নতুন জায়গা খোঁজে। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক অর্থনীতিবিদরা— যেমন নিল স্মিথ তার অসম উন্নয়ন বইয়ে— বলছেন যে কীভাবে পুঁজিবাদ তৈরিও করে নেয় নতুন জায়গা।  

আবার, ঐ যে শুরুতে বললাম, সব জায়গা এক নয়,  কিছু জায়গার রয়েছে আলাদা গুরুত্ব। পুঁজিবাদের কাছে।  সমাজবিজ্ঞানী বাঙ্কার ও সিকানটেল তাদের বিশ্বায়ন ও রিসোর্স বিষয়ক বইয়ে,  পুঁজি সংগ্রহের পেছনের নতুন ঐতিহাসিক বস্তুবাদ ব্যাখ্যা করতে যেয়ে দেখিয়েছেন, কীভাবে স্পেস,  প্রযুক্তি,  আর রিসোর্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে পুঁজিবাদের জয়যাত্রায়। যেমন, ব্রাজিলের আমাজন ফরেস্টের প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঢুকে জাপানের কোম্পানি সেখানে স্থাপন করেছে পৃথিবীর বৃহত্তম আইরন মাইনিং।

আমাজনের সে এলাকা থেকে জাপানের অর্থনীতি ফায়দা পেয়েছে ব্যাপক,  বিপরীতে আমাজন হয়ে পড়ছে বন্ধ্যা।  তাই প্রকৃতি গুরুত্ব সর্বত্র সমান নয়,  পুঁজিবাদ সেটা ভাল বোঝে।

নতুন উৎপাদনের জন্য তাই পুঁজিবাদ সুন্দরবন, আমাজন, বা মাগুরছড়া খোঁজে।

সুন্দরবনের প্রস্তাবিত রামপাল কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের পরিণাম কী হতে পারে সেটা বিভিন্ন আলোচনায় এসেছে। আমি সেদিকে যাচ্ছি না। কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির যুক্তি খুবই ঠুনকো। কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমনের প্রভাব পৃথিবী এখন জানে (সেটাকে না হয় বাদই দিলাম,  কারণ আমরা এ-ও জন্য বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনে উন্নত বিশ্বই দায়ী)। মনে রাখা জরুরি যে মাগুরছড়া ও টেংরাটিলায় গ্যাস বিস্ফোরণে সমাজপ্রকৃতির যে ক্ষতি হয়েছে তা টাকা দিয়ে পরিমাপ/ সংশোধনযোগ্য নয়। 

সুন্দরবনের প্রাকৃতিক বৈচিত্র্যকে রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র ধ্বংস করে দিবে। লোকাল মানুষ হবে উদ্বাস্তু। এ স্লোগানই তাই যথার্থ: বিদ্যুতের বিকল্প আছে, সুন্দরবনের বিকল্প নেই”।  পুঁজিবাদের গ্রাস থেকে বাঁচাতেই হবে সুন্দরবন। তাই আন্দোলনেরও বিকল্প নেই।

এসব আন্দোলনের সফলতারও পর কেবল সুন্দরবনের ভবিষ্যৎ নয়,  বাংলাদেশের টিকে থাকার ভবিষ্যতও নির্ভর করে। প্রকৃতি ও মানুষের বিরুদ্ধে পুঁজিবাদের যুদ্ধের বিপরীতে মানবতার সংগ্রামের ভবিষ্যতও নির্ভর করে। মানবতার, মানুষের ক্ষমতা বলে আর কিছু বাকি আছে কিনা,  তার প্রমাণ মানুষকে দিতে হবে পৃথিবীর সুন্দরবন রক্ষা করে। বিশ্বপুঁজিবাদকে বাংলাদেশ জানিয়ে দিক বর্তমান অর্থনৈতিক ব্যবস্থার অন্ধকার ও সাংঘর্ষিক বাস্তবতা।

মনে রাখতে হবে, বাংলাদেশ রাষ্ট্র সেটা করতে চাইবে না,  কারণ রাষ্ট্র পুঁজির আঞ্চলিক প্রতিনিধিত্ব করে, পুঁজির মুনাফা ভোগ করে। মানুষকেই সেটা জানতে হবে,  জানাতে হবে। এ প্রতিবাদ কেবল বাংলাদেশের মানুষের বাংলাদেশের সুন্দরবন রক্ষার জন্য নয়,  এটা বিশ্বপুজিঁবাদের তৈরি সংকটের বিরুদ্ধে সাধারণ,  নির্যাতিত,  লোকাল মানুষের যূথবদ্ধ হওয়ার সংগ্রাম।

সমাজ প্রকৃতির ভবিষ্যৎ রক্ষার প্রতীক হয়ে উঠুক সুন্দরবন।

নিখিল নীল, শিক্ষক, সমাজবিজ্ঞান বিভাগ, শাবিপ্রবি, সিলেট। বর্তমানে আমেরিকার ইউনিভার্সিটি অব টেনেসিতে সমাজবিজ্ঞানে পিএইডি করছেন। ইমেইল: [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ