প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
নাজমুল হাসান | ২৬ নভেম্বর, ২০১৬
মিডিওকার স্টুডেন্টরাই মূলত বিসিএস জেনারেল ক্যাডারের সিংহভাগ। ব্যতিক্রম ছাড়া খুব ভাল স্টুডেন্টরা সাধারণত বিসিএস দেয় না। বিসিএস পরীক্ষা মানে জীবনের সেরা মুখস্তবিদ্যা অর্জন করে তা উগরে দেওয়ার চাকুরীপণ লড়াই।
প্রচলিত ও চর্চাগত বাস্তবতা হল, ক্ষমতাধর ও সুবিধাভোগী ক্যাডার বলতে যে ক্যাডার বা ক্যাডারসমূহকে বোঝান হয়, তারা একবার বিসিএস এ সুযোগ পেয়ে গেলে চাকুরী জীবনে তাদের আর কখনও দেশ ও দেশের মানুষকে ধারণ করা জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন লেখাপড়া করার দরকার পড়ে না। কারণ, এমন বিদ্যার প্রয়োগটা দেশের জন্য অনিবার্য হলেও তা প্রয়োগ করার কার্যত কোন বাধ্যবাধকতা নাই। কাগুজে যে বিষয়টুকু আছে তা কাগজের মধ্যেই সীমাবদ্ধ। কিছু না করলেও চাকুরীর জন্য তা কোন বাধা নয়, কোন অসুবিধাও কখনও হয় না।
দেশের খুব প্রয়োজনীয় বিষয়গুলি দেখার দৃশ্যত যেন কেউ নাই। দেশের বড় কোন বিপর্যয় হলেও সরকারী কর্ণধার পর্যায়ের কারও সে অর্থে তেমন কিছু হয় না। ক্ষেত্রবিশেষে রাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণ পর্যায় থেকেও কেউ তাদের কিছু জিজ্ঞাসা পর্যন্ত করে না। আর করলেই বা কী! তাতেও তেমন কিছু যায়-আসে না। সবকিছু অন্যভাবে ম্যানেজ হয়ে যায়। ফলশ্রুতিতে ভুক্তভোগী হয় রাষ্ট্র ও জনগণ। কৌশলে বড় বড় ব্যর্থতা ও অপকর্মগুলির দায় এমনভাবে অন্যদিকে সরান হয় যে, শতভাগ ক্ষেত্রেই আমলাগণ থেকে যায় দৃশ্যের অন্তরালে। তাই কী হবার কথা?
চর্চাগত কারণেই চাকুরী পাবার পর থেকে এ সমস্ত সরকারী চাকুরেদের মূল জ্ঞান-সাধনা হয়ে পড়ে ডিপার্টমেন্টকেন্দ্রীক। যদিও এর বাইরেও এরা নানান সুযোগ-সুবিধা গ্রহণ করে অনেক দেশি-বিদেশি ডিগ্রি গ্রহণ করে, তবে সেখানে প্রায়োগিক অর্থে রাষ্ট্রের প্রয়োজন মেটানোর চেয়ে ব্যক্তিমুখী সুযোগ গ্রহণই থাকে মুখ্য। ফলে এ জন্য বছরের পর বছর যে সময় ব্যয় হয় তাও প্রকৃত অর্থে রাষ্ট্রের জন্য লোকসানি। পড়াশুনা করে আসে এক বিষয়ে আর পোস্টিং পায় বিষয় সংশ্লিষ্ট নয় এমন এক যায়গায়, পড়া কোনও কাজেই আসে না।
জ্ঞান সাধনা ডিপার্টমেন্টকেন্দ্রীক হওয়ায় ক্রমে ক্রমে তারা মানুষ থেকে আমলা হতে শুরু করে। ফলে যতই দিন যায়, চাকুরীতে সিনিয়রিটি আসে এবং মানবিক গুণাবলী লোপ পেয়ে সেখানে স্থান পেতে শুরু করে ক্ষমতা, স্ট্যাটাস, অহমিকা, আমলাতান্ত্রিক প্যাঁচ, ছড়ি ঘুরানো, পজিশনিং সেন্স, নেতিবাচক স্বাতন্ত্র্যবোধ, ব্যক্তিগত সুযোগ নেবার কৌশল, উদোর পিণ্ডি বুদোর ঘাড়ে দিয়ে আত্ম-স্বচ্ছ থাকার কুটিল বুদ্ধি ইত্যাদি। অনুভূত বাস্তবতায় এটা সার্বজনীনভাবেই বোধগম্য একটি দুঃখজনক সত্য।
কার্যত চেয়ার ও ক্ষমতা টিকিয়ে রাখার চেষ্টায় রত থাকা ছাড়া আর কোথাও তাদের কোন দায়বদ্ধতা নেই। 'সচিব নাকি মহা-করণিক' এবং 'বাংলামুলুকে আমলাতন্ত্রের ক্রমধারা' শিরোনামের দুটি আর্টিকেলের মাধ্যমে আমি এ বিষয়গুলিকে বিস্তারিত দেখানোর চেষ্টা করেছি। দুটি আর্টিকেলই একাধিক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছে। প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়েও এরা এক অস্পর্শী দেবতা যা খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত। জাতির জন্য সিন্দবাদের ভূত। এরা দেশের কোন স্বস্তি নয়, পুরোটাই বিড়ম্বনা বলে মনে হয়।
সমস্যা হয়ে গেলে সাধারণ মানুষ তা দেখে, বড়দের কাজ হল আগের থেকে তা দেখা এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া। মায়ানমারের সাথে সহজিয়া কূটনৈতিক সম্পর্ক রাখার মতো বাস্তবতা কোনোকালেও আমাদের ছিল না, ভবিষ্যতেও নাই। সেখানে সামরিক সরকার দেশ শাসন করছে। অং সাং সূচিকে যতই গালমন্দ করি না কেন আসলে তার চার পয়সার ক্ষমতাও নাই। রোহিঙ্গা ইস্যুতে একটা মানবিক শব্দ উচ্চারণ করলে তার দফা রফা হয়ে যাবে।
পার্শ্ববর্তী দেশ মায়ানমারে কী ঘটছে এবং তার প্রতিক্রিয়ায় বাংলাদেশের করণীয় কী, এ হিসেব আগেই হয়ে থাকার কথা। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও তার আমলাদের কাজ তো ঘাস কাটা নয়। অবস্থাদৃষ্টে প্রতীয়মান হয়, তারা সে ঘাসটাও ঠিকমত কাটতে পারেনি। কারণ, কাজের-কাজ বরাবরের মতো এখানেও কিছুই হয়নি। তারপরেও তারা ব্যর্থ নয়, কারণ, আমাদের যে চর্চাগত ও ধারণাগত অভিধান আছে এবং সেখানে আমলা-সম্পর্কীয় যে অভিজ্ঞতা আছে তাতে আমলারা ব্যর্থ হতে পারে এ সম্পর্কিত কোন শব্দ নেই। তারা নির্ভুল দেব-দেবী, সর্ব-উপাস্য সুজন।
খবরে দেখলাম, বিজিবি দেড়শ জন রোহিঙ্গাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে অথচ এ সময়ের মধ্যেই দেড় লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়ে বসে আছে- এ হল বাস্তবতা। পূর্ব থেকেই দেশে প্রায় পাঁচ লাখ রোহিঙ্গা অবস্থান করছে অথচ রিফুজি লিস্টে আছে মাত্র তেত্রিশ হাজার। কে করেছে এই কাল্পনিক লিস্ট? কেন করেছে? এই চরম দায়িত্বহীনতার জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে কর্মরত কোন মহা-করণিককে কী দায়বদ্ধ করা হবে? হবে না, কারণ আমলারা দায়বদ্ধ হয় না। তারা সর্ব-স্বচ্ছ প্রজাতি।
কোন রাজনীতিবিদের হেডম আছে আমলাকে কৈফিয়ত তলব করার? নাই!
এখন লাখ লাখ রোহিঙ্গা দেশে প্রবেশ করছে অথচ তা প্রচার করা হচ্ছে না। তাহলে বহির্বিশ্বে কোন স্ট্যাটিসটিকস নিয়ে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা ইস্যু থেকে নিজেকে সেফ করার অবস্থান নেবে? তেত্রিশ হাজার শরণার্থীর জন্য দূতিয়ালি করতে গেলে তা কী হালে পানি পাবে? পাওয়া উচিৎ? এতবড় দায়িত্বহীন আমলারা দেশের স্বার্থে বিশ্বময় কার্যকর ভূমিকা রাখতে কার্যকরভাবে কাজ করবে সেটা কী দুঃস্বপ্ন নয়?
শুধু দেশের নিরাপত্তা কেন, এটা তো একটা মানবিক ইস্যুও বটে। মায়ানমার সামরিক জান্তার এ অমানবিক কর্মকাণ্ডকে তুলে ধরে রোহিঙ্গাদের মানবিক প্রয়োজনে ভূমিকা রেখে নিজের দেশকে ঝুঁকিমুক্ত করতে শক্তিশালি ভূমিকা রাখা উচিৎ। কিন্তু কী ভূমিকা রেখেছে আমাদের মাথাভারী মন্ত্রণালয় এবং তার সংশ্লিষ্ট আমলাগণ? যুক্তিযুক্ত কোন জবাব বোধকরি নাই। রাজনীতিবিদদের আদলে একটা জবাব হয়ত আমরা ভবিষ্যতে পেতেও পারি, যদিও তারও কোন নিশ্চয়তা নাই। ঠিক জানি না। আমলা-রাজনীতিবিদদের বৃত্তায়িত গণতন্ত্রের মধ্যে থেকে কোনকিছুরই নিশ্চয়তা দেওয়া যায় না।
দেশখেকোরা কখনও দোষী হয় না। এটাই প্রতিষ্ঠিত নিয়ম!
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য