আজ শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

আত্মপ্রবঞ্চনা নয় বরং আত্মসমালোচনা

মাসকাওয়াথ আহসান  

বৃটিশেরা রেলপথ স্থাপন করেছিলো জন্যই উপমহাদেশে রেলগাড়ি চলে। নইলে গাধা-গরুর গাড়ি থেকে বড় জোর বাসের প্রচলন হতো এখানে।

উপমহাদেশের মুসলমান শাসকরা যখন হারেম নির্মাণে ব্যস্ত; তখন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় গড়ছিলো বৃটিশেরা; সেই ধারাবাহিকতায় স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। নইলে মাদ্রাসা-মক্তবের বেশি এগুতো না উপমহাদেশ।

হিন্দু রাজারাও ছিলো বিলাসী; উন্নাসিক; ফলে হিন্দুদের শিক্ষা-ব্যবস্থাও ধর্মীয় শিক্ষাকে ঘিরে আবর্তিত হতো বৃটিশরা না এলে। দক্ষিণ এশিয়ায় বৃটিশেরা উপনিবেশ গড়তে পারেনি আফগানিস্তানে; সে দেশটাকেই দেখলেই বৃটিশরা না এলে উপমহাদেশের কী হাল হতো বোঝা যায়।

ভারতবর্ষের কিছু ছেলে লন্ডনে গিয়ে শিক্ষিত হয়ে ফিরে এসে তাদের মনে হয়; তারা নিজেরাই কেন "রাজা" হবে না। সুতরাং শুরু হয়, দেশপ্রেমের নামে রাজনীতিকে আজকের এ জায়গায় নিয়ে আসার প্রস্তুতি। এ সময় ইগোর লড়াই শুরু হয় কথিত উচ্চবর্ণের হিন্দু ও কথিত অভিজাত মুসলমানদের মাঝে।

হিন্দু-মুসলমান প্রান্তিক মানুষ; যারা মিলেমিশে থাকতো; তাদের পরস্পরের বিরুদ্ধে ক্ষেপিয়ে তোলার কাজটি তারা করতে চায়। সুতরাং দেশভাগের জন্য হিন্দু-মুসলমান বিভাজনের কারণ তৈরির ক্ষেত্র প্রস্তুত হয়। আসলে কথিত উচ্চবর্ণের হিন্দু ও কথিত অভিজাত মুসলমানদের রাজনীতির রাজা হবার বর্ণবাদি কৌশল ছিলো এগুলো।

বৃটিশরা ভারতবর্ষ থেকে দু'শো বছরে যে সম্পদ লুণ্ঠন করেছে; গত ৭০ বছরে ভারতবর্ষের দুর্নীতিবাজ রাজনীতিকরা অনেক বেশি সম্পদ লুণ্ঠন করে পশ্চিমে নিয়ে গেছে। কাজেই ৪৭-এ স্বাধীনতার বিষয়টি গুটিকতকের রাজা হয়ে ওঠার উচ্চাকাঙ্ক্ষা হিসেবে স্পষ্ট। বরং সমঝোতা প্রক্রিয়ার মাঝ দিয়ে সত্তরের দশকে স্বাধীনতা অর্জনের চেষ্টা থাকলে; অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মতো অবকাঠামো ও পরিকাঠামো তৈরি হতো উপমহাদেশে।

'৪৭-এর স্বাধীনতার পর থেকেই ভবিষ্যতে প্রশ্ন উঠবে এ আশংকায় কথিত উচ্চবর্ণের হিন্দু ও কথিত অভিজাত মুসলমানরা নিজ নিজ ইতিহাসের ন্যারেটিভ তৈরির মামুদের নিয়োগ দেয়। তারা বড় বড় চশমা পরে; ভ্রু কুঁচকে মুখাবয়বের জ্যামিতিতে অথোরিটি এনে "বৃটিশ" শত্রুর কাকতাড়ুয়া তৈরি করে দেশি শোষকদের শোষণ হালাল করে। অথচ একটি বৃটিশ পাসপোর্টের জন্য ভারতবর্ষের মানুষের হাহাকার ও ইঁদুর দৌড়ের কমতি নেই।

পৃথিবীর সবচেয়ে অনৈতিক, শঠ, প্রতারক রাজনীতিক ও ভাঁড় বুদ্ধিজীবী জুটেছে দক্ষিণ এশিয়ায়; ফলে তাদেরকে সব জায়গায় বৃটিশ ভূত খুঁজতে হয়। অথচ ভূত যে এরা নিজেরাই তা বুঝতে সাধারণ মানুষের আর বাকি নেই।

পুনশ্চ: আজ খোদ বৃটেনেই স্যার ডাকের আকুতি নেই; আমলাতন্ত্রের দম্ভ নেই; রাজনীতিতে জবাবদিহি আছে; জনমানুষের বাক-স্বাধীনতা আছে; গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানের বিশ্বাসযোগ্যতা আছে। তার মানে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বৃটিশরা তাদের রাষ্ট্রব্যবস্থায় সংস্কার করেছে। অথচ ভারতীয় উপমহাদেশে স্যার ডাকের আকুতি, আমলাতন্ত্রের দম্ভ, রাজনীতিতে চরম জবাবদিহির অভাব, দুর্নীতি-লুণ্ঠন সর্বব্যাপী, গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান ভঙুর। এর সমালোচনা করলেই রাজনীতিবিদদের পিঠ-বাঁচানো বুদ্ধিজীবীরা বৃটিশের জুজুর গপ্পো এনে বলে; সব বৃটিশের দোষ; অরা এইগুলি শিখাইয়া গেছে।

আমরা দুগ্ধপোষ্য শিশু ছিলাম। এই শঠতার মাধ্যমে নিজেদের দোষ আড়ালের চোখ সাফাইয়ের খেলাটা একঘেয়ে ও বিরক্তিকর।

মাসকাওয়াথ আহসান, সাংবাদিক, সাংবাদিকতা শিক্ষক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪১ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ