প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
এস এম নাদিম মাহমুদ | ২৩ আগস্ট, ২০১৯
আপনারা কথায় কথায় রোহিঙ্গাদের সাথে মুক্তিযুদ্ধে ভারতে আশ্রয় নেয়া বাংলাদেশিদের সাথে তুলনা করলেন। রোহিঙ্গাদের অবস্থা আমাদের একাত্তরের চেয়ে ভয়ানক বলে দাবি করলেন। আমরা যদি এক সময় আশ্রয় নিই, তাহলে আজ রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দেব না কেন?
মুক্তবুদ্ধি চর্চাকারী এইসব মানুষ জানেন কি, রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সাথে মিয়ানমারের সৈন্যদের মধ্যে কোন যুদ্ধ হয়েছিল না, যেটা একাত্তরে আমাদের সাথে পাকিস্তানের সাথে তুলনা করার মত কিছু ছিল কিনা? এইদেশের কৃষক, মজুর, মূর্খ-জ্ঞানীরা যুদ্ধে রক্ত ঢেলে ত্রিশ লাখ প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ পেয়েছে, আর আপনারা রোহিঙ্গাদের বিপর্যয়কে এক লাফে মুক্তিযুদ্ধের সাথে তুলনা করলেন।
ভারতে আশ্রয় নেয়া বাঙালিদের দ্বারা ভারতীয়দের খুন করা হয়নি, মাদক ব্যবসা করা হয়নি এমনকি ভারতের পাসপোর্ট নিয়ে অন্যদেশে পালিয়ে যাওয়ার ঘটনা ছিল না, অথচ অতি মানবিকতার দোহায় দিয়ে ঘরে আশ্রয় দেয়ার পর দেখেন গত দুই বছরে রোহিঙ্গাদের দ্বারা কতজন বাংলাদেশি খুন হয়েছেন? কতজন মাদক-চোরাকারবারিতে জড়িয়েছে? কতজন বাংলাদেশিদের জাতীয় পরিচয়পত্র জালিয়াতি করেছে? কতজন সন্ত্রাসী হয়ে সারা দেশে ছড়িয়ে গেছে?
মুক্তিযুদ্ধে ভারতে বাঙালিরা আশ্রয় নিয়ে যে মানবিক বিপর্যয় পোহাতে হয়েছিল, সেই তুলনায় রোহিঙ্গাদের অনেকটাই রাজার হালে রাখা হয়েছে। বিশ্বের এমন কোন দেশ নেই যাদের শরণার্থীর সংখ্যা বাংলাদেশের সমান। গত দুই বছর রোহিঙ্গাদের যেভাবে সাহায্য সহযোগিতা করা হয়েছে, তার ছিটে ফোঁটা আমার দেশের খেটে খাওয়া, বস্তিবাসী কিংবা মঙ্গাপিড়িত এলাকার মানুষরাও পায়নি।
রোহিঙ্গাদের খাদ্যের জন্য মরতে হয়নি, চিকিৎসার অভাবে মরতে হয়নি। তাদের মাথায় রাখা হয়েছে, এমনকি কেউ কেউ অস্থায়ীভাবে কর্মসংস্থান পেয়েছেন।
এমন সুযোগ সুবিধা রেখে মৃত্যুঝুঁকি নিয়ে মৃত্যুপুরিতে কে যেতে চাইবে শুনি? আপনি কি চাইবেন, আপনার চোখের সামনে আপনার স্ত্রী ধর্ষিত হোক, আপনার সন্তানকে মধ্যযুগীয় কায়দা জখম করা হোক?
বাংলাদেশ ব্যর্থ হয়েছে মানবিকতার কাছে। বিশ্ব পরাজিত হয়েছে মিয়ানমারের কূটকৌশলের কাছে। বিশ্বনেতারা হারিয়েছেন তাদের নেতৃত্ব। নিরাপত্তা, নাগরিকত্ব কেবল ছুতো, বাংলাদেশের মানিবকতাকে পুঁজি করে বিশ্ব রাজনীতির নোংরামির কবলে পড়েছে বাংলাদেশ। আপনার অতি মানবিক আচরণ, রোহিঙ্গাদের ফিরতে দিচ্ছে না। কৈই একদিনও তো রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে নেয়ার জন্য মিছিল করলেন না, ফেইসবুকে ঝড় তুললেন না।
অতি আবেগের ফসল হিসেবে ঘরে তুলেছেন রোহিঙ্গাদের, তাদের ভবিষ্যৎ রক্ষায় আপনার দায়িত্বটুকু কী? মানবিক বিপর্যয় সারা বিশ্বে বছরের পর বছর ধরে আছে, সেটা দূর করার জন্য অতি মানবিক হওয়ার চেয়ে অতি কৌশলি হওয়া জরুরি বটে। আজ রোহিঙ্গারা প্রত্যাবর্তনে আগ্রহী নয়, কাল তারা বাংলাদেশে নাগরিকত্ব চেয়ে বসবে, তখন আপনারাই সেই আবেগের ফুসরতে টেনে রাখবেন, যেটা হতে পারে ভয়ানক বিপদ। এই বিপদ রুখবার শক্তি আপনার/আমার আছে কী?
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য