আজ শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪

Advertise

অবিচার নয়, ন্যায়বিচার চাই; সর্বক্ষেত্রে

কবির য়াহমদ  

সাম্প্রতিক সময়ে হয়রানির আরেক নাম 'ইয়াবা'। পুলিশ-র‍্যাব কাউকে ধরবে আর তার সঙ্গে ইয়াবা আবিষ্কার করবে- এটা যেন নিয়তিই হয়ে গেছে। কয়েক দিন আগে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজীব আহসানকে পটুয়াখালী থেকে গ্রেফতারের পর ইয়াবা উদ্ধারের দাবি করেছিল পুলিশ। এটা নিয়ে গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক সমালোচনা হয়েছিল। সে মামলাসহ আরও অনেক মামলায় ছাত্রদলের সে সভাপতি এখন কারাগারে।

 



রাজনৈতিক নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা আমাদের দেশে নতুন কিছু নয়। ছাত্রদলের সভাপতির বিরুদ্ধে মামলা ও গ্রেফতারকে স্বাভাবিক প্রক্রিয়া হিসেবেই ধরা যেত যদি না তার কাছ থেকে ইয়াবা উদ্ধারের দাবি করত পুলিশ। তার বিরুদ্ধে হরতাল-অবরোধকালীন সময়কার নাশকতার মামলা ছিল- সেগুলোর কারণে গ্রেফতার বিষয়টিকে অনেকেই স্বাভাবিক হিসেবে ধরে নিত কারণ সরকারবিরোধী আন্দোলনকালীন সময়ে ছাত্রদল, ছাত্রশিবিরসহ বিএনপি ও এর অঙ্গসহযোগি সংগঠনগুলো সাধারণ মানুষকদের ওপর পেট্টোলবোমা ছুঁড়েছিল। এবং সে সব নাশকতার ঘটনায় অনেক সাধারণ মানুষ প্রাণ হারিয়েছিল। যদি বিএনপি প্রথম থেকে দাবি করছিল পেট্টোল বোমাবাজির জন্যে দায়ি আওয়ামী লীগ।

 



ইয়াবা সহ ছাত্রলের কেন্দ্রীয় সভাপতি গ্রেফতারের পর অনেকেই নড়েচড়ে বসেছিলেন আসলে কী হতে যাচ্ছে এ উৎকণ্ঠা নিয়ে। তার কাছে ইয়াবা ছিল কি ছিল না সেটা পুলিশের দাবির পর কেন জানি বিশ্বাসযোগ্য হচ্ছিল না। তবে অনেকেই আশঙ্কা করছিলেন এবার বুঝি পুলিশ ইয়াবা নামক এক ‘মারণাস্ত্র’ নিয়েই এগিয়ে আসছে। আশঙ্কাটা সত্য বলে প্রমাণ হতে খুব বেশি দিন অপেক্ষা করতে হয় নি। সে ঘটনার দুই সপ্তাহের মধ্যেই প্রমাণ হলো আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো এবার কর্তৃক এবার ইয়াবা হয়রানির প্রতিশব্দ হতে যাচ্ছে!

 



ইয়াবা সহ ছাত্রদলের সভাপতি রাজীন আহসানের গ্রেফতারের প্রসঙ্গের অবতারণার মূল কারণ নারায়ণগঞ্জের আরেক তরুণকে ইয়াবা সহ আটকের দাবি করেছে র‍্যাব-১১ (র‍্যাপিড একশন ব্যাটালিয়ান)। সে তরুণকে নিয়ে মাতামাতি হওয়ার সম্ভাবনা ছিল না খুব একটা কারণ সোহেল নামের সে তরুণটি কোন রাজনৈতিক, সামাজিক কিংবা আর্থিক কোনভাবেই প্রতিষ্ঠিত কেউ না। তবু আলোচনা এসেছে কারণ সোহেলের চাচাতো ভাইয়ের তিন ঘণ্টার এক অভিনব দাবি, আকুতির জন্যে। সোহেলের চাচাতো ভাই আবুল কালাম আজাদ “ন্যায়বিচার চাই” লিখে প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনের সামনে দাঁড়িয়েছিল।

 



রবিবার (২ আগস্ট) সকাল নয়টায় গণভবনের পশ্চিম ফটকের উত্তর পাশে “ন্যায়বিচার চাই” দাবি কিংবা আকুতি নিয়ে হাতে লেখা প্ল্যাকার্ড নিয়ে দাঁড়িয়েছিল আবুল কালাম আজাদ। খুব সাধারণ বেশভূষা- গায়ে সাদা রঙের শার্ট, কালো প্যান্ট ও পায়ে চটি; কাঁধে একটি ব্যাগও ছিল তার। চেহারার মধ্যেও আর্থিক দীনতা স্পষ্ট।

 



আজাদ বলেন- স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি গ্রামের দরিদ্র কিছু মানুষের ৬০ থেকে ৭০ বিঘা জমি বালু দিয়ে ভরাট করে দখলের চেষ্টা করছেন। তার প্রতিবাদ করতে গিয়ে জমির মালিকরা আক্রমণ ও হুমকির শিকার। আমি গরিব মানুষ। আমাদের কথা কেউ শোনে না। তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার কথা পৌঁছে দিতে চাই। তিনি যদি চান, তাহলে আমিসহ গ্রামের গরিব মানুষরা উপকৃত হব। (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম, ২ আগস্ট, ২০১৫)”

 



পেশাগত জীবনে একজন পোশাককর্মী নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁও উপজেলার সাদিপুর ইউনিয়নের পঞ্চমীঘাট এলাকার আবুল কালাম আজাদকে সে সময় গণভবনের সামনের দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যরা সেখান থেকে চলে যেতে বললে আজাদ চলে যান।

 



আজাদের এ প্রতিবাদের মূল কারণ স্থানীয় এক প্রভাবশালী ব্যক্তি তাদের জমি দখল করে নিচ্ছে। এর প্রতিবিধানের জন্যে তিনি প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চেয়েছেন। তার বিশ্বাস ছিল অন্তত প্রধানমন্ত্রী এ অন্যায়ের প্রতিকার করতে পারেন।

 



ধারণা করি, আজাদ বিচারের নিম্নতম পর্যায়ে হয়ত ন্যায়বিচার পায়নি বলে দাঁড়িয়েছিল গণভবনের সামনে। সে নিশ্চয়ই এও জানত তার এ প্ল্যাকার্ড দেখে প্রধানমন্ত্রী সাক্ষাৎ দেবেন না, এসব হয়ও না। তবু দাঁড়িয়েছিল। তার বিশ্বাস ছিল এ রকমভাবে দাবি জানালে যদি প্রধানমন্ত্রীর কানে যায় বিষয়টি। কিন্তু সে দিন সে ঘটনা ঘটেনি। প্রধানমন্ত্রীর কানে পৌঁছানোর আগেই তাকে সে স্থান থেকে সরে আসতে হয়েছিল।

 



সে দিনের ঘটনা ছিল কেবল ন্যায়বিচার চাই দাবিতে প্ল্যাকার্ড হাতে প্রধানমন্ত্রীর বাড়ির সামনে যাওয়া আর ফিরে আসা। কিন্তু বিপত্তি ঘটল অন্যখানে। সে রাতেই নারায়ণগঞ্জের র‍্যাব-১১ আজাদের বাড়িতে হানা দিলো। আজাদ, তার চাচা ও চাচাতো ভাইকে মারধর করল এবং চাচা ও চাচাতো ভাইকে ধরে নিয়ে গেল। পরে চাচাকে ছেড়ে দিলেও চাচাতো ভাই সোহেলকে গ্রেফতার করে তার কাছ থেকে ইয়াবা উদ্ধার করা হয়েছে এ অভিযোগে।

 



প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবনের সামনে দাঁড়ানোর রাতেই আজাদের বাড়িতে র‍্যাব যাওয়ার ঘটনায় হয়ত সরকারের কোন হাত নাই কিন্তু এক্ষেত্রে স্থানীয় প্রভাবশালী সে ব্যক্তি যে জড়িত সেটা আজাদের বক্তব্যেই পরিষ্কার। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবনের সামনে দাঁড়ানোতে স্থানীয় ভূমিখেকো ব্যক্তি এক্ষেত্রে গোস্যা হয়েছেন। ফলে তাদের বাড়িতে র‍্যাব পাঠিয়ে তাকে এবং তার পরিবারের ওপর নির্যাতন চালানো হয়। গ্রেফতার করা হয় আজাদের চাচাতো ভাই সোহেলকে।

 



আজাদের দাবি তাদের বিরুদ্ধে থানায় কোনো জিডি বা মামলা নেই। মেট্রো নিটিং এন্ড ডাইং ফ্যাক্টরির মালিক অমল পোদ্দারের ভাতিজা বাপ্পি পোদ্দার পরিকল্পিতভাবে র‌্যাব দিয়ে তাদেরকে ফাঁসিয়েছে। তাদের সঙ্গে জমি নিয়ে কারও বিরোধ হলেই র‌্যাব দিয়ে গ্রেফতার করানো হয়।

 



‘জমি নিয়ে বিরোধ হলেই র‍্যাব দিয়ে গ্রেফতার করানো হয়’ এ অভিযোগকে আমলে নেওয়া উচিত কারণ নারায়ণগঞ্জের আলোচিত সেভেন মার্ডারে র‍্যাবের সম্পৃক্ততা ছিল বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ হয়েছে। নারায়ণগঞ্জের কাউন্সিলর নজরুল ইসলামসহ সাতজনকে অপহরণ করে খুনের মামলায় র‍্যাব-১১ এর সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদসহ বাহিনীর তিন কর্মকর্তা আসামি। প্রধান আসামি নুর হোসেন র‍্যাবকে অর্থ দিয়ে এই হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছেন। সুতরাং এটা বলতেই হয় নারায়ণগঞ্জের র‍্যাব তার পুরনো বদনাম থেকে বেরিয়ে এসে শোধরাতে পারেনি।

 



সোহেলকে গ্রেফতার প্রসঙ্গে র‍্যাব-১১ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আনোয়ার লতিফ খান বলেন, যাকে ধরেছি, সে ইয়াবা ব্যবসায়ী। ওই যুবকের পকেট সার্চ করে ইয়াবা পেয়েছে আমার টিম। পরে তার বাড়িতে অভিযান চালিয়ে আরও ইয়াবা পাওয়া গেছে। তার বাড়িতে প্রতিবেশী ও আত্মীয় স্বজনের উপস্থিতিতেই অভিযান চালানো হয়েছে। (বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম)

 



আজাদদের জমি-জমা সংক্রান্ত বিরোধে জড়ানোর অভিযোগ নাকচ করে র‍্যাব-১১ এর অধিনায়ক আনোয়ার লতিফ বলেন, “আমরা জমি-জমার কোনো সমস্যা সমাধান করতে যাইনি, তা আমাদের কাজও নয়।” এদিকে স্থানীয়রা বলছেন, সোহেল ইয়াবা ব্যবসায় জড়িত এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। সোহেল নামে ওই যুবককে তারা কখনও সিগারেট কিংবা বিড়ি খেতেও দেখেননি, মাদক তো দূরের কথা।

 



সোহেলের পরিবারের দাবি, প্রভাবশালীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি প্রত্যাশা করে তার চাচাত ভাই আবুল কালাম আজাদের পদক্ষেপ নেওয়ার কারণে তাকে মাদক মামলায় ফাঁসানো হয়েছে।

 



র‍্যাবের দাবি আর পরিবারের দাবি ভিন্ন এবং এটা হয়েও থাকে। তবে স্থানীয়রা যখন একটা ছেলেকে সার্টিফিকেট দিচ্ছে তখন সেটা ধর্তব্যের মধ্যে নিতেই হয়। এক্ষেত্রে র‍্যাবের বক্তব্যকে বিশ্বাসযোগ্য মনে হয় না, তার ওপর কলঙ্ক তিলক হয়ে আছে এক বছর আগের আলোচিত সেভেন মার্ডারে র‍্যাবের সম্পক্তৃতা।

 



জমি দখলের প্রতিবিধান চেয়ে আজাদের গণভবনের সামনে দাঁড়ানোর ঘটনার সঙ্গে তার চাচাতো ভাই সোহেলকে ইয়াবা সহ গ্রেফতারের সম্পৃক্ততা আছে, কী নাই- এটা এখন আর প্রশ্নের উদ্রেক করে না, এটা পরিষ্কার। কারণ প্রতিকার চেয়ে দাঁড়ানোর পরের রাতেই যেখানে বাড়িতে হানা দেওয়া হয় তখন এই দুই ঘটনার মধ্যকার সম্পর্ক খুব নিবিড় বলেই মনে হয়।

 



সোহেল যদি ইয়াবা ব্যবসায়ি হতো তাহলে র‍্যাব কেন সে রাতেই বাড়িতে গেলো? হ্যাঁ, যেতেই পারে এবং গ্রেফতার করতে পারে কিন্তু আজাদের বিরুদ্ধে ত কোন অভিযোগ নেই যদিও সোহেলের বিরুদ্ধে থানায় কোন মামলা ত দূরের কথা কোন জিডি এন্ট্রিও নেই। সোহেলকে ইয়াবা সহ গ্রেফতারের সাথে সাথে র‍্যাব কেন আজাদকে মারধর করল? এটা যে সাজানো এবং স্থানীয় র‍্যাব অর্থ ও প্রভাব প্রতিপত্তি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে এ ঘটনা ঘটিয়েছে হয়ত তার একটা উদাহরণ বটে!

 



এদিকে, আজাদের “ন্যায়বিচার চাই” দাবির বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীর কানে পৌঁছেছে এবং প্রধানমন্ত্রী দফতরের একজন কর্মকর্তা আজাদের সঙ্গে স্থানীয় জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে যোগাযোগ করেছেন। এটা ভাল লক্ষণ সন্দেহ নেই। একই সঙ্গে আজাদ ও তার পরিবারের প্রতি স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি অমল পোদ্দার ও র‍্যাব-১১ যে অন্যায় করেছে তার প্রতিবিধানও জরুরি। নারায়ণগঞ্জের র‍্যাব কেন অন্যায়ে বার বার জড়িয়ে পড়ছে তার প্রতিকার না করলে এভাবে আজাদেরা হেনস্তা হতেই থাকবে। আর কেবল ইস্যুভিত্তিক সমাধান হবে; স্থায়ি সমাধান হবে না। কারণ এরপর যে আবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক মানুষজন নির্যাতিত হবে না সে নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারে না।

 



আজাদের পরিবারের সঙ্গে র‍্যাবের ইয়াবা নাটকের পর মনে হচ্ছে শহুরে মাদক ইয়াবার বিস্তার নিয়ে র‍্যাব এতখানি তৎপর যে তারা জানে কোন গ্রামের কোন চিপায় কার কাছে ইয়াবা লুকানো আর কে এর ব্যবসায়ি। অথচ  দেশবাসী জানে, মিডিয়ায়ও খবর বেরিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একজন সাংসদ পারিবারিকভাবে ইয়াবা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। র‍্যাব-পুলিশ তার টিকিটি স্পর্শ করতে পারে না। ইয়াবা সংক্রান্ত বিষয়ে যাকে নিয়ে, যাদেরকে নিয়ে এত মাতামাতি- যে খবর দেশবাসি জানে সে খবর র‍্যাব কিংবা পুলিশ জানে না এটা অবিশ্বাস্য। আর তারচেয়ে অবিশ্বাস্য ব্যাপার হচ্ছে প্রত্যন্ত অঞ্চলের এক বাড়িতে গিয়ে ইয়াবা উদ্ধারের দাবি।

 



আজাদের ন্যায়বিচার চাই প্ল্যাকার্ড হয়ত তিন ঘণ্টার জন্যে স্থির ছিল গণভবনের সামনে কিন্তু এরকম হাজার হাজার অদৃশ্য প্ল্যাকার্ড নিয়ে এ দেশের মানুষ সত্যিকার অর্থেই ন্যায়বিচারের আশায় দিন গুনছে। অথচ মর্মান্তিক সত্য হলো, ন্যায়বিচার চাওয়ার দাবি জানালে এখন অবিচার করা হচ্ছে। আর অন্যায়-অবিচারকে যারা প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিয়ে চলেছে সে পুলিশ প্রশাসনের কিংবা মন্ত্রণালয়ের এ নিয়ে ভাবান্তর নেই।

 



ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সভাপতি রাজীব আহসানের গ্রেফতারের সঙ্গে ইয়াবা, ন্যায়বিচারের আকুতি নিয়ে গণভবনের সামনে দাঁড়ানো আজাদের চাচাতো ভাইকে গ্রেফতারের সঙ্গে আবারও ইয়াবা! তবে কী ধরে নিতে হবে- এখন পুলিশি হয়রানির সঙ্গে ইয়াবা সংযোগ ভবিতব্য হতে চলেছে? যদি সত্যি সত্যি এমন হয় তবে এটা সবার জন্যেই উদ্বেগের, নিঃসন্দেহে। ইয়াবা কিংবা অন্যান্য মাদকদ্রব্য জীবনে চোখেও দেখেনি এমন কেউ যদি এরকম অভিযোগ অভিযুক্ত হয়ে পড়ে সেটা নিশ্চিতভাবেই আইনের শাসনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি, একইভাবে নাগরিকের গণতান্ত্রিক অধিকারের মুখে চপেটাঘাত।

 



আমাদের অতীত ইতিহাস বলে, পুলিশ কিংবা র‍্যাবের হাতে কেউ গ্রেফতার হলে এক সময় অস্ত্র সহ গ্রেফতার দেখানো হয়েছে এমন অভিযোগ ভুরি ভুরি। ক্লিন ইমেজের আওয়ামী লীগের সাংসদ সাবের হোসেন চৌধুরীকে বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে একবার গ্রেফতার দেখানো হয়েছিল প্লেট চুরির অভিযোগে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিএনপি নেতা ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদকে গ্রেফতার করার সময়ে পুলিশ দাবি করেছিল তার বাসায় অবৈধ মদ পাওয়া গিয়েছিল। মজার ব্যাপার হলো চার্জশিটে এসব বিষয়ে উল্লেখ ছিল না। ফলে ধরে নেওয়াই যায় গ্রেফতারের অব্যবহিত পরের পুলিশি বক্তব্যগুলোর কোন মূল্য নাই। এক্ষেত্রে সোহেলের বিষয়টিও একই বলে মনে হচ্ছে।

 



সাম্প্রতিক সময়কার ঘটনাপ্রবাহের দিকে লক্ষ্য করলে প্রশ্ন জাগে- এখন পুলিশ-র‍্যাব কাউকে ধরলেই তার সঙ্গে ইয়াবা সংযোগ কীভাবে খুঁজে পায়? এটা কি প্রশাসনের দূর্বলতা নয়? এর মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো কি কারও পক্ষ নিয়ে অন্যায় করছে না? এটা বাস্তবতা হলে পরিস্থিতি ভয়াবহ- বলাই যায়। এর প্রতিকার হিসেবে যথাযথ তদন্তপূর্বক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ আশু করণীয়।

 



সোহেলকে ইয়াবা সহ গ্রেফতার করা হয়েছে র‍্যাবের এ দাবিকে সমর্থন করে কেউ কেউ বলতে পারেন, ইয়াবা ব্যবসায়ি হলে কেন ধরবে না তাকে? তাদের প্রশ্ন আর যুক্তিকে গ্রহণ করেই বলি, দুই ঘটনার মধ্যকার সময়ের ব্যবধান লক্ষ্য করুন- তাহলেই এর সমাধান আপনা থেকে বেরিয়ে আসবে। স্থানীয় প্রভাবশালীদের অবিচারের কারণে আজাদ দাঁড়িয়েছিল প্রতিবাদে, আর এতে গোস্যা হয়ে র‍্যাবকে লেলিয়ে দেওয়া কি সে প্রভাবশালীদের কাজ হতে পারে না? আজাদও একই অভিযোগ করেছেন।

 



প্রশ্ন আসতে পারে, স্থানীয় সে প্রভাবশালী ব্যক্তি যদি সত্যিকার অর্থে র‍্যাবকে নিয়ে আজাদ পরিবারকে হেনস্তা করত তাহলে সে চাচাতো ভাইকে উদ্দিষ্ট ভাবল কেন? এর উত্তর খুব সহজ। আজাদ কিংবা তার ভাই-বোন-বাবা-মা'কে গ্রেফতার করলে প্রতিক্রিয়া হতো সরাসরি তাই কৌশল অন্য। তাই মারধর করা হয়েছে তাকে এবং গ্রেফতার করা হয়েছে চাচাতো ভাইকে। তবে এর মাধ্যমে স্থানীয় ভুমিখেকো ব্যক্তি/ব্যক্তিগণ আসলে আজাদকে ভয়ভীতি প্রদর্শনের ব্যবস্থাই করেছিল। ধারণা করি আজাদ ভয় পায়নি, কারণ এর আগে তার সে দাবি জানানোর প্রক্রিয়া মানুষের কাছে পৌঁছে গেছে এবং মানুষের সহানুভূতি অর্জন করতে সমর্থ হয়েছে। আশার কথা, প্রধানমন্ত্রী নিজেও এতে সম্পৃক্ত হয়েছেন এবং দায়িত্বশীল একজনকে এ সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে নির্দেশ দিয়েছেন।

 



আজাদ ও তার পরিবার নির্যাতিত হলেও বিষয়টি যখন প্রধানমন্ত্রীর কানে পৌঁছেছে তখন আশা করতেই পারি এর একটা প্রতিবিধান হবে। হয়ত স্থানীয় ভূমিখেকো প্রভাবশালী ব্যক্তির দখল থেকে জমি উদ্ধার হবে কিন্তু স্থানীয় প্রশাসনকে কীভাবে ঠিক করা হবে সে সম্পর্কে এখনও নিশ্চিত হতে পারছি না। আজকাল পুলিশ-র‍্যাব কাউকে গ্রেফতারের পরেই তার সঙ্গে ইয়াবা জুড়ে দিচ্ছে- এর রাশ টেনে ধরা উচিত।

 



সেভেনে মার্ডারের ঘটনায় র‍্যাবের সম্পক্তৃতার ঘটনায় নারায়ণগঞ্জের তৎকালীন তিন র‍্যাব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ চলমান থাকলেও সেখানকার র‍্যাব এখনও প্রভাবশালীদের প্রভাব রক্ষকের ভূমিকায় নেমে সাধারণ মানুষদের হেনস্তা করছে- এর বিহিত হওয়া দরকার। তা না হলে কথিত আইন রক্ষকগণ আইন ভক্ষকের ভূমিকায় নেমে সাধারণ, অসহায় আর নির্যাতিতদের নির্যাতন করতেই থাকবে!

 



অবিচার নয়, ন্যায়বিচার চাই; সর্বক্ষেত্রে!

কবির য়াহমদ, প্রধান সম্পাদক, সিলেটটুডে টোয়েন্টিফোর; ইমেইল: [email protected]

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৭ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০২ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৬ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ