আজ বৃহস্পতিবার, ০৯ মে, ২০২৪

Advertise

সংখ্যালঘু নির্যাতন-সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা : বহুমাত্রিক জিজ্ঞাসার সরল সমীকরণ

সঙ্গীতা ইয়াসমিন  

কিছুদিন যাবত ব্যক্তিগত কারণে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলীর দিকে নজর দেবার সময় পাচ্ছিলাম না, তবু সবকিছুকে ছাপিয়ে অনেক ঘটনাই কানে আসে প্রতিনিয়ত; আর জন্ম দেয় নতুন নতুন ভীতি, নতুন আশঙ্কার, চিন্তায় ফেলে দেয় আমার প্রিয়তম স্বদেশে কী হচ্ছে, কীভাবে বেঁচে আছে সাধারণ নিরীহ মানুষেরা? কতটা নির্বিচারে, অত্যাচারের সীমাহীন বর্বরতার মুখোমুখি হচ্ছে তারা; এসব চিন্তা শত ব্যস্ততার মাঝেও ভাবায় আমাকে।

হ্যাঁ, সঙ্গত কারণেই আজকের প্রসঙ্গ নাসিরনগর; নাসিরনগরে হিন্দুদের ওপর নির্যাতন! সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, হামলা, সম্পদ লুট; এই বিষয়টি লিখতে এসে কীভাবে শুরু করব ভেবে পাচ্ছিলাম না। ব্যক্তিগত চেতনায় আমি কোন মানুষকেই ধর্ম-জাত-পাত দিয়ে কোনদিন বিচার করতে শিখিনি, তাই নিরীহ সাধারণ জনগণের ওপর হামলা, ঘরবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়া, উপসানালয় ভেঙে ফেলা এভাবেই শুরু করব নাকি আলাদা করে হিন্দু সম্প্রদায়ের কথাই উল্লেখ করব ভাবছিলাম। মুহূর্তেই টের পেলাম, আমি আমার বিবেকের কাছে দায়বদ্ধ, আর নির্দিষ্ট করে তাই আমাকে বলতেই হবে। কারণ, নাসিরনগরের এই জঘন্য ঘটনা যারা ঘটিয়েছেন, যে কারণেই ঘটিয়েছেন, এটি সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন; আর জন্মসূত্রে আমিতো আমার পূর্বপুরুষের কাছ থেকে সেই ধর্মেরই অনুসারী! অতএব, আমার নৈতিক দায় আমিতো অস্বীকার করতে পারি না কোনভাবেই!

আজকের আলোচনায় সংখ্যালঘু আর সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা শব্দ দুটি দুই বিপরীতমুখী অবস্থানে বারবার একত্রিত হচ্ছে বিধায় আলোচনার সুবিধার্থে সংখ্যালঘু কে বা কারা সে বিষয়ে আলোকপাত করতে চাই। আন্তর্জাতিক আইনে জাতিসংঘের ঘোষণাপত্র অনুযায়ী-জাতিগত, নৃতাত্ত্বিক, সাংস্কৃতিক, ধর্মীয় এবং ভাষাগত সংখ্যাতাত্ত্বিক ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠীরাই সংখ্যালঘু হিসেবে পরিচিত। এই সংখ্যালঘুরা সংখ্যায় যেহেতু কম, তারা দুর্বল; তারা অত্যাচারের-জুলুমের-অন্যায়ের শিকার। যদিও এই পরের অংশটি সাংবিধানিকভাবে কোথাও লিখিত নেই; তবে অসাংবিধানিকভাবে এটি প্রচলিত এবং অবধারিত সত্য। এবং সত্যকে অস্বীকার না করলে একথা বলতেই হবে।

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এই “সংখ্যালঘু” বস্তুটি আসলে দেখতে কেমন? এর কি আকার আকৃতি আছে, এটি কি হাসে, কাঁদে? এটি কি জায়গা দখল করে? এর কি প্রভাব প্রতিপত্তি আছে?

পাঠক হয়তো ভাবছেন কী সব অদ্ভুত প্রশ্ন করছি আমি? নাকি কৌতুক করছি, না, এর কোনটাই নয়। এর প্রত্যেকটি বৈশিষ্ট্যই এই শব্দটির মধ্যে বিদ্যমান। এটি দৃশ্যমান, এটির আকার-আকৃতি আছে, আছে বিকৃতিও। এটি হাসায় যত কাঁদায় তারও অধিক। এটি কেবল মাত্র একটি টারমিনোলজি নয়! পত্রিকার শিরোনামে যখন ভেসে ওঠে সংখ্যালঘু নির্যাতন, তখন সেই একটি ছোট্ট শব্দ অনেকের কণ্ঠস্বর হয়ে ওঠে, অনেক ক্রন্দন ধ্বনিত হয় সেই বাক্যে, অনেক যন্ত্রণা ককিয়ে ওঠে সেই লাইনে; আর অনেক অসহায়ত্ব তখন গ্রাস করে আমাদের চারপাশ। সেই অসহায়ত্বের যন্ত্রণা আমাদের প্রশাসন কিংবা রাষ্ট্র কাঠামোর কোন কিছুকে স্পর্শ করে কিনা জানি না আমি।তবে আমাদের বাড়ে দ্বিধা, বাড়ে লজ্জা, আর শঙ্কা!

শঙ্কা একারণেই যে, আমাদের রাষ্ট্র কাঠামোর বিন্যাসে যে উপাদানগুলি শক্তপোক্ত ভিত নিয়ে ছিল অতীতে, তা প্রতিনিয়ত ধর্ষিত হচ্ছে আমাদের সুবিধেবাজ, ফায়দা হাসিলকারী রাজনীতিকদের লোভের লিঙ্গ দ্বারা। আর একমাত্র এই রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নই আমাদেরকে দিনে দিনে ধ্বংসের দিকে ঠেলে নিয়ে যাচ্ছে। যার শিকার হচ্ছে অন্যসকল নিরীহ জনগণও। কারণ এই নির্যাতন পাল্টা আক্রমণ কিংবা পারস্পরিক বিষোদগারের পরিবেশ তৈরি করছে, বিনষ্ট করছে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের সকল প্রেক্ষাপট!

এবার আসি, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বিষয়ে; এটি কী জিনিষ? বস্তুত, সাম্প্রতিক সময়ে হিন্দু জনগোষ্ঠীর ওপরে যে সকল নির্যাতন হচ্ছে এর কোনটিকেই আমি সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বলতে রাজী নই; কেননা, আমার বোধ বুদ্ধিতে আমি মনে করি, কোন একটি দেশে-অঞ্চলে কিংবা এলাকায় ভিন্ন ভিন্ন সম্প্রদায়ের মানুষ বসবাস করতে গিয়ে প্রতিদিনের জীবন যাপনের অংশ হিসেবে তাদের মূল্যবোধ, দর্শন, আর নীতিগত বিরোধ থেকেই এ জাতীয় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার মত পরিস্থিতি উদ্ভূত হতে পারে। আর সেটি হতে পারে ধর্মীয়, ভৌগলিক, পেশাগত ও শ্রেণীগত। সেই দাঙ্গায় দুদলই সমানভাবে অংশ গ্রহণ করে থাকে। একে অন্যের ওপর আক্রামণাত্মকভাবে এগিয়ে গেলেই দাঙ্গা কথাটা যুক্তিযুক্ত; অপরপক্ষে, এই দাঙ্গায় প্রশাসন কখনোই যুক্ত হতে পারে না, বরং প্রশাসন যথাযোগ্য বিচারের পদক্ষেপ নিয়ে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের সকল ব্যবস্থা করবেন, আর এটাই বিধিত। তাহলে বাস্তব অবস্থার ভিত্তিতে আমরা অবশ্যই বলতে পারি, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা হয় না। যা হয়, তা হল- রাষ্ট্রের মদদপুষ্ট প্রশাসনের আশ্রয়ে রাজনীতিকদের দুর্বৃত্তায়ন; ফলে এটি স্রেফ নির্যাতন; সবলের ওপর দুর্বলের অত্যাচার! সেই দুর্বল হিন্দু, সেই দুর্বল পাহাড়ি, সেই দুর্বল গরীব-খেটে খাওয়া শ্রেণীর মানুষ, সেই দুর্বল শিশু-নারী, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধী! বাংলাদেশের সমাজের এই সকল দুর্বল শ্রেণীকেই আমি সংখ্যালঘু বলে অভিহিত করতে চাই। যদিও আজকের বক্তব্য সুনির্দিষ্ট করছি সাম্প্রতিক ঘটে যাওয়া ঘটনাকে নিয়ে।

বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা না হলেও সংখ্যালঘু নির্যাতন ছিল, আছে, একথা অস্বীকার করার উপায় নেই; একটু পেছনের দিকে তাকালেই দেখব, ভারত পাকিস্তান বিভক্তির সময় সাড়ে চার কোটি জনসংখ্যা অধ্যুষিত পূর্ব পাকিস্তানে ধর্মীয় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোক আদিবাসীসহ ৩০ শতাংশের কিছু বেশি ছিল। এর মধ্যে হিন্দুদের সংখ্যা ছিল ২৯ শতাংশের কিছু বেশি। সেই সংখ্যা এখন ৭ শতাংশের মত; ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধ এবং যুদ্ধোত্তর বাংলাদেশেও হিন্দুরা নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছে। তাই এখনো রাতের আঁধারে, বাপ-দাদার চৌদ্দ পুরুষের ভিটে মাটি ছেড়ে মুখ বুজে তারা ভারতে চলে যায়। এভাবেই তাদের জনগোষ্ঠী আজ প্রকৃত অর্থেই বাংলাদেশে সংখ্যায় লঘু হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু কেন আজ এই অবস্থা? আমরা কি এমন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম? আজও যেখানে একটি অখণ্ড জাতীয়তাবাদ প্রতিষ্ঠিত করতে পারিনি; ‘বাংলার হিন্দু বাংলার মুসলমান, বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার খৃস্টান, সবাই মোরা বাংলার জনগণ; সকলেই আমরা বাঙালি! এই স্লোগান দিয়ে জাতীয়তা বোধে আমরা উন্নীত হতে পেরেছি কি? আর না পারলে সেই দায় কার? কবিগুরু বলেছিলেন, “সাতকোটি সন্তানের অবোধ জননী, রেখেছ বাঙালি করে, মানুষ করনি” আজ মনে হয় গুরুদেবের কথায় একটা বড় ভুল ছিল কোথাও, আমরা তো আজও বাঙালি হয়ে উঠতে পারিনি, মানুষ হওয়া তো আরও দূরের পথ!

স্বাধীন বাংলাদেশের সংবিধান রচিত হয়েছিল চারটি মূলনীতির ওপর ভিত্তি করে, জাতীয়তাবাদ, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতা। আমাদের সংবিধান কাঁটা ছেঁড়া হয়েছে বহুবার, আর সুবিধেবাজদের দখলে গিয়ে সেটিতে ধর্মনিরপেক্ষতার বদলে এসে গেছে ইসলামিক রাষ্ট্র! সুতরাং, এই সিদ্ধান্তের বলে রাষ্ট্রীয়ভাবেই অন্য জনগোষ্ঠীর শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানকে অস্বীকার করা হয়েছে। আর আমরা নিশ্চিত যে ক্ষমতাসীন সরকার মসনদ হারানোর ভয়ে এই ‘রাজনৈতিক লিঙ্গ’ সন্ত্রাসীদের সাথে আপোষ করছেন বারংবার! তবে এই আপোষকে প্রকারান্তরে প্রচ্ছন্ন সমর্থনই মনে হয়। আর এতে করে সরকারের অসহায়ত্বও প্রকাশিত হয়, সেই অসহায়ত্ব ক্রমশ ভয়ানক আকার ধারণ করবে তাতে অবাক হবার কিছুই নেই। আমরা একটু লক্ষ্য করলেই দেখব, ৭৫ পরবর্তী বাংলাদেশে রাজনৈতিক অরাজকতা, দুর্বৃত্তায়ন, মৌলবাদী আগ্রাসন, সহিংসতা, ইতিহাস বিকৃতিসহ বিরাজনীতিকরণ ও রাজনীতিকে জন-বিচ্ছিন্নকরণের যে দীর্ঘ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছিল সেটি ক্রমশ ধাবমান এক লাগামবিহীন ঘোড়ার মতই এক সুদূরপ্রসারী পরিকল্পনার অংশ নিয়েই চলমান ছিল।

প্রথমেই বলি শিক্ষাব্যবস্থার কথা; আমাদের শৈশবে প্রথম বর্ণ পরিচয় সহজ পাঠ হিসেবে পড়েছিলাম সীতানাথ বসাকের আদর্শ লিপি, যেখানে, “অ- অহংকার পতনের মূল, অসৎ সঙ্গ ভাল নয়” এজাতীয় উপদেশ বাণী ছিল, হঠাতই দেখলাম, অ-তে অজু কর সকাল বেলা, আ-আযান হলে নামাজে যাও; এসব বক্তব্য খুব দৃঢ়ভাবে জায়গা করে নিল। এর পরে যুক্ত হল, মাদ্রাসা শিক্ষাব্যবস্থা, যেখানে স্বল্প মূল্যে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবী ও দরিদ্র পরিবারে সন্তানেরা পড়াশুনা করছে। মূলত: এতিমখানা কাম মাদ্রাসা স্থানীয় পর্যায়ে এক বিশাল চক্রের হাতে যথারীতি আত্মকর্মসংস্থানের এক টুল হিসেবে আবিষ্কৃত হল। ফলে এখানে পড়াশুনার মান, কিংবা উচ্চ শিক্ষালাভ করার থেকে ধর্মের ধ্বজাধারী একটি বিশাল গোষ্ঠী তৈরি হল যারা সংস্কৃতি বিবর্জিত-হিংসে বিদ্বেষপূর্ণ একটি আলাদা গোষ্ঠীই রয়ে গেল।

একইভাবে সরকারী সেবাসমূহের অপ্রতুলতা এবং অনিয়ন্ত্রিত প্রশাসনিক ব্যবস্থার ফসল হিসেবে ইসলামী ব্যাংক, বীমা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতাল, স্কুল-কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হল। যেখানে এই মৌলবাদী চক্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে অর্থনৈতিক, সামাজিক ও রাজনৈতিকভাবে, যা অসাম্প্রদায়িক চেতনার মূলে সুকৌশলে কুঠারাঘাত করেছে। ঢাকা শহরের অনেক স্কুলেই জাতীয় সঙ্গীত গাওয়া হয়না, হয় না কোন শরীর চর্চার ক্লাস, হয়না শপথবাক্য পঠন। সকল জাতীয় দিবসে স্কুল বন্ধ থাকে, কেন এই দিবস তা জানে না শিশুরা। শিশুরা কোন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সাথে যুক্ত থাকে না, তারা জানে না তাদের শেকড় কোথায়? কী ছিল তাদের বাংলাদেশ জন্মের ইতিহাস? এভাবেই ধীরে ধীরে আমাদের সন্তানেরা শেকড়বিহীন অ-সাংস্কৃতিক এক নতুন প্রজন্ম হয়ে বেড়ে উঠেছে। বাংলাদেশের অনেক উচ্চবিত্ত পরিবারের সন্তানেরা এখন ইসলামিক স্কুলে-কলেজে পড়ে, পাশাপাশি অন্য মানসম্পন্ন শিক্ষা ব্যবস্থা থাকা স্বত্বেও। এই বিরোধিতা বাড়িয়েছে মানসিক-সাংস্কৃতিক দূরত্ব, গ্রহণ করেনি কোন ভিন্নতাকে, স্বাগত জানায়নি কোন বৈচিত্র্যকে।

একথা বলা বাহুল্য, ভৌগলিক কারণে অখণ্ড পাকিস্তানের পূর্ব ভূখণ্ডে পূর্ব পাকিস্তানে আবহমান কাল থেকে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রিস্টান এবং বিভিন্ন উপজাতিসহ সকল সম্প্রদায়ের মাঝে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটি বাতাবরণ বিরাজমান ছিল। কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া বিহারীরা আগমনের আগ পর্যন্ত এই সম্প্রীতিতে ছেঁদ পড়েনি। পাকিস্তান সরকারের পরোক্ষ মদদে এদেশীয় কিছু প্রতিক্রিয়াশীল চক্র বিহারীদের সহায়তায় পাকিস্তান সৃষ্টির পর থেকে হিন্দুদের দেশ ত্যাগের মুখ্য ভূমিকা গ্রহণ করে।তবে এর বিপরীত দৃশ্যও আমরা দেখি এখনও; গণজাগরণ মঞ্চসহ অনেক বামপন্থী রাজনৈতিক দল, বুদ্ধিজীবীগণ, সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়ে ওঠেন। তবে এটিই শেষ কথা নয়; আর ভবিষ্যৎ তো সবসময় ভবিষ্যতের গর্ভে নিহিত।

আমাদের বড়ই দুর্ভাগ্য সাম্প্রদায়িক অসহিষ্ণুতার প্রেক্ষাপট তৈরি হয়েছে অতি সন্তর্পণে; রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় ধর্মীয় মৌলবাদের যে বীজ রোপিত হয়েছিল ৭৫ পরবর্তী সময়ে আজ তা বিশাল মহীরুহ হয়ে গ্রাস করেছে সবকিছুকে। গতকাল এক ফেসবুক বন্ধু বললেন,“আমাদের অসহায় আর্তচীৎকার শেখ হাসিনার কানে পৌঁছোয় না, আমাদের নির্যাতনের খবর তিনি রাখেন না। তিনি জানেন হিন্দুদের ভোট একচেটিয়া নৌকার! আজ থেকে আমরা অফিসিয়ালি মালাউন, আসুন আমরা আজ আনন্দ করি সবাই মিলে!”

একজন বিবেকবান মানুষ মাত্রেই বুঝবেন এই আনন্দ আহ্বান কতটা বেদনার, কতটা কষ্টের, আর কতটা লজ্জার? তবুও আমি বলব, আমি তার কষ্ট পুরোপুরি অনুধাবন করতে পারিনি। কারণ, জন্মসূত্রে আমি হিন্দু নই বিধায় এই ‘মালাউন’ শব্দটি শুনে শুনে আমাকে বড় হতে হয়নি! আমরা নারীরা যখন সম্ভ্রম হারাই, তখন কোন পুরুষ যেমন উপলব্ধি করতে পারেন না সম্ভ্রম হারানোর বেদনা কী জিনিষ; তেমনই এই ‘মালাউন’ শব্দটি বুকের কোথায় গিয়ে লাগে সেটা পুরোপুরি উপলব্ধিতে আনতে পারিনি বলে ক্ষমা কর বন্ধু সকল!

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী! আপনি জাতির পিতার আদর্শে গড়া তারই আত্মজা! আমরা আপনাকে জিজ্ঞাসিতে পারি বৈকি, আপনি কী তবে অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাস করেন না আর? আওয়ামী লীগ কী আর বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সেই দল নেই? আপনি কি পিতার আদর্শকে জলাঞ্জলি দিলেন? কী জবাব দেবেন আপনি? আজ যখন আওয়ামী লীগে ছায়েদুল হকের মত মানুষ মন্ত্রিত্ব পায়? আজ যখন নিজেদের দায় এড়িয়ে মন্ত্রীরা মিডিয়াকে দোষারোপ করেন, যখন আপনার প্রশাসন সাংবাদিক এবং সাধারণ মানুষের সাথে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে তারা বিচার চায় বলে; তখন এর জবাব তো দিতেই হবে আপনাকে মা জননী!

আপনি প্রায়শ বলেন, আপনি মৃত্যুকে ভয় পান না, আপনার পিতা আমাদের জন্য প্রাণ দিয়েছেন, আমরা আপনাকে প্রাণ দিতে বলি না, কেবল দেখতে চাই- প্রয়োজনে আপনি নির্মম হতে পারেন, দলের-ব্যক্তির অনেক ঊর্ধ্বে উঠে আপনি আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে জানেন! আমরা আপনার মাতৃরূপ দেখেছি অনেক; এবার আপনার দেবীরূপকে স্যালুট জানাতে চাই! বন্ধ করুন অবিলম্বে এই নির্যাতন! এই অশুভ শক্তির হাত থেকে বাঁচান দেশটাকে, ঘুরে দাঁড়ান একবার!

একবার দেখুন কতটা বিপন্ন মানবতা! কতটা অসহায় আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির প্রিয় স্বজনেরা!

সঙ্গীতা ইয়াসমিন, কানাডা প্রবাসী লেখক

মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।

আপনার মন্তব্য

লেখক তালিকা অঞ্জন আচার্য অধ্যাপক ড. মুহম্মদ মাহবুব আলী ৪৮ অসীম চক্রবর্তী আজম খান ১১ আজমিনা আফরিন তোড়া ১০ আনোয়ারুল হক হেলাল আফসানা বেগম আবদুল গাফফার চৌধুরী আবু এম ইউসুফ আবু সাঈদ আহমেদ আব্দুল করিম কিম ৩২ আব্দুল্লাহ আল নোমান আব্দুল্লাহ হারুন জুয়েল ১০ আমিনা আইরিন আরশাদ খান আরিফ জেবতিক ১৮ আরিফ রহমান ১৬ আরিফুর রহমান আলমগীর নিষাদ আলমগীর শাহরিয়ার ৫৪ আশরাফ মাহমুদ আশিক শাওন ইনাম আহমদ চৌধুরী ইমতিয়াজ মাহমুদ ৭১ ইয়ামেন এম হক এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন একুশ তাপাদার এখলাসুর রহমান ৩৭ এনামুল হক এনাম ৪২ এমদাদুল হক তুহিন ১৯ এস এম নাদিম মাহমুদ ৩৩ ওমর ফারুক লুক্স কবির য়াহমদ ৬৩ কাজল দাস ১০ কাজী মাহবুব হাসান কেশব কুমার অধিকারী খুরশীদ শাম্মী ১৭ গোঁসাই পাহ্‌লভী ১৪ চিররঞ্জন সরকার ৩৫ জফির সেতু জহিরুল হক বাপি ৪৪ জহিরুল হক মজুমদার জাকিয়া সুলতানা মুক্তা জান্নাতুল মাওয়া জাহিদ নেওয়াজ খান জুনাইদ আহমেদ পলক জুয়েল রাজ ১০৪ ড. এ. কে. আব্দুল মোমেন ১২ ড. কাবেরী গায়েন ২৩ ড. শাখাওয়াৎ নয়ন ড. শামীম আহমেদ ৪১ ডা. আতিকুজ্জামান ফিলিপ ২০ ডা. সাঈদ এনাম ডোরা প্রেন্টিস তপু সৌমেন তসলিমা নাসরিন তানবীরা তালুকদার তোফায়েল আহমেদ ৩১ দিব্যেন্দু দ্বীপ দেব দুলাল গুহ দেব প্রসাদ দেবু দেবজ্যোতি দেবু ২৭ নাজমুল হাসান ২৪ নিখিল নীল পাপলু বাঙ্গালী পুলক ঘটক প্রফেসর ড. মো. আতী উল্লাহ ফকির ইলিয়াস ২৪ ফজলুল বারী ৬২ ফড়িং ক্যামেলিয়া ফরিদ আহমেদ ৪২ ফারজানা কবীর খান স্নিগ্ধা বদরুল আলম বন্যা আহমেদ বিজন সরকার বিপ্লব কর্মকার ব্যারিস্টার জাকির হোসেন ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ ১৮ ভায়লেট হালদার মারজিয়া প্রভা মাসকাওয়াথ আহসান ১৯০ মাসুদ পারভেজ মাহমুদুল হক মুন্সী মিলন ফারাবী মুনীর উদ্দীন শামীম ১০ মুহম্মদ জাফর ইকবাল ১৫৩ মো. মাহমুদুর রহমান মো. সাখাওয়াত হোসেন মোছাদ্দিক উজ্জ্বল মোনাজ হক ১৪ রণেশ মৈত্র ১৮৩ রতন কুমার সমাদ্দার রহিম আব্দুর রহিম ৫৫ রাজু আহমেদ ১৮ রাজেশ পাল ২৮ রুমী আহমেদ রেজা ঘটক ৩৮ লীনা পারভীন শওগাত আলী সাগর শাওন মাহমুদ