প্রধান সম্পাদক : কবির য়াহমদ
সহকারী সম্পাদক : নন্দলাল গোপ
টুডে মিডিয়া গ্রুপ কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত।
Advertise
আলমগীর শাহরিয়ার | ২২ জুন, ২০১৭
তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলোতে সবচেয়ে কঠিন ও চ্যালেঞ্জিং দায়িত্ব হলো অর্থ মন্ত্রণালয় ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন। এ দেশে দীর্ঘদিন ধরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। অপ্রিয় এ পদে থেকে নানা সময় তাকে নানাজনের মৌখিক লাঞ্ছনা ও আক্রমণের শিকার হতে হয়েছে, এখনও হচ্ছেন। হয়েছেন ব্যঙ্গ বিদ্রূপের খোরাক। সর্বশেষ খোদ নিজ দলের এমপি শেখ ফজলুল করিম সেলিম বাজেটোত্তর এক আলোচনায় সংসদে সবচেয়ে কঠোর ভাষায় অর্থমন্ত্রীর শুধু সমালোচনা নয়, রীতিমতো নিন্দা ও বিষোদগার করেছেন। অর্থমন্ত্রীর বয়স হয়ে গেছে মনে করিয়ে দিয়ে কথা কম বলার পরামর্শ দেন। সমালোচনার এ মিছিলে যোগ দিয়েছেন আরও অনেকেই।
অর্থমন্ত্রীর বিরুদ্ধে প্রায়ই সোজা সাপ্টা কথা বা বেফাঁস মন্তব্য করা, শেয়ার বাজার, ব্যাংক লুটপাটের, কালো টাকার কারবারিদের ঠেকানোসহ নানা ব্যর্থতার মশহুর অভিযোগ আছে। এসব মানছি এবং সঙ্গে যোগ করছি দলীয় অকাট্য পরিচয়ের রাঘব বোয়ালেরা সাঙ্গপাঙ্গ নিয়ে নানা সেক্টরে লুটপাট করবেন আর তা ঠেকানোর ব্যর্থতা অর্থমন্ত্রীর একার ঘাড়ে চাপাবেন, গালি দেবেন - এ অন্যায়।
তাছাড়া, শেখ সেলিম সাহেব মনে হয় ভুলে গেছেন, আওয়ামী লীগ যে উন্নয়ন অর্থনীতির রাজনীতির আজ গালভরা গল্প করছে, পাকিস্তান-ভারতের চেয়ে এগিয়ে যাওয়া সামাজিক অনেক খাতে অগ্রগতির সূচক নিয়ে গর্ব করছে, বৈশ্বিক অর্থনীতির দুর্দিনে ৭ শতাংশের উপরে ধরে রাখা জিডিপি, ১৬০২ মার্কিন ডলারের মাথাপিছু আয়, মেট্রোরেল, সোনাদিয়া গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ, রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্প, পায়রা সমুদ্র বন্দর নির্মাণ, দক্ষিণবঙ্গকে যুক্ত করা ৬.১৫ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের পদ্মা সেতুসহ আরও অনেক মেগা অর্থনৈতিক প্রকল্প বাস্তবায়নের মাধ্যমে মধ্য আয়ের দেশ থেকে উন্নত বিশ্বের একটিতে পৌঁছানোর আকাঙ্ক্ষা পোষণ করছে - যা নিয়ে আজ আওয়ামী লীগের সাংসদ ও নেতা-কর্মীরা জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে প্রচার প্রচারণায় শুধু মুখর না, নির্বাচনী বৈতরণী পার হবার অন্যতম হাতিয়ার ভাবছেন, আবার ক্ষমতায় আসার স্বপ্ন দেখছেন - সেসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও অর্জনের নেপথ্যে নিরলস কাজ করছেন এই নির্লোভ, সদাচারী, নিরহংকার, পরিশ্রমী, মেধাবী মানুষটি।
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবুল বারাকাত তাঁর "বঙ্গবন্ধু-সমতা-সাম্রাজ্যবাদ" বইয়ে এক আলোচনায় লিখেছেন, স্বাধীনতাত্তোর বিশ্বে অর্থনীতিবিদদের নমস্য তত্ত্বগুরু জাস্ট ফাল্যান্ড ও জে. আর. পারকিনসন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশের উন্নয়ন সম্ভাবনা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ সংশয় প্রকাশ করে রীতিমতো গুরুগম্ভীর এক পুস্তকই লিখে ফেললেন - 'Bangladesh: The Test Case of Development' - অর্থনীতিবিদদ্বয় এ গ্রন্থে এ সিদ্ধান্তে উপনীত হন যে, বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১ কোটি হলে ভালো হতো। কিন্তু জনসংখ্যা ৮ কোটি, তাও আবার ক্রমবর্ধমান। সে কারণে ভবিষ্যতে বাংলাদেশের অবস্থা আরও খারাপ হতে বাধ্য। অধ্যাপক বারাকাত তাঁর লেখায় বলছেন, "তাদের এ ধারণা আজ শুধু ভ্রান্ত হয়নি, মিথ্যা প্রমাণ করে বাংলাদেশ সামাজিক ও অর্থনৈতিক অগ্রগতির মিছিল অব্যাহত রেখেছে।"
এ অর্জন অগ্রগতির মিছিলে নিশ্চয়ই সাধারণ মানুষের শ্রম-ঘাম বিশেষ করে এক কোটি প্রবাসীর বৈদেশিক আয়, গার্মেন্টস শ্রমিক, কৃষি ও অন্যান্য পেশার মানুষের অবদানের সঙ্গে এই অর্থমন্ত্রীর মেয়াদকালও লেখা থাকবে। এদেশের অনেক সাংসদদের বিরুদ্ধে যখন জনবিচ্ছিন্নতা, স্থানীয় রাজনীতিতে সন্ত্রাস, সহিংসতা আমদানি, জনগণের পাহাড়সম অভিযোগ, ক্ষোভ তখন মুহিত সাহেব তুলনামূলকভাবে এখনো অনেক স্বচ্ছ ভাবমূর্তির অধিকারী এক রাজনীতিক। এদেশের সুধী সমাজে একজন সুপণ্ডিত, শিল্পবোদ্ধা হিসেবে যেকোনো রাজনীতিবিদদের চেয়ে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা অনেক গুণ বেশি। সন্ত্রাস তোষণ, তদবির, রাজনীতির প্রভাব খাটিয়ে বাণিজ্য-বেসাতি, সম্পদের পাহাড় ও পাচারে যখন অনেক সংসদের নাম গণমাধ্যমে ভাঙা রেকর্ডের মত বাজছে তখন অর্থমন্ত্রীর বিরুদ্ধে তাঁর দীর্ঘ আমলা ও রাজনৈতিক জীবনে এমন কোন একটি অভিযোগ তার শত্রুও কখনো করেনি।
একবার তাঁর ইংরেজিতে লেখা চারটি বইয়ের প্রুফ দেখার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। বইগুলো পড়ে জেনেছিলাম এদেশে রাজনীতিতে যুক্ত না হয়ে তিনি যদি শুধু লেখালেখি আর গবেষণা করতেন এদেশে তিনি একজন শ্রেষ্ঠ গবেষক ও লেখক হিসেবে অনেক গুণ বেশি সমাদৃত হতেন। সেলিম সাহেব, নিজ দলের বয়োজ্যেষ্ঠ একজন প্রবীণ সম্মানীয় সাংসদ, এদেশের ভাষা সংগ্রাম, মুক্তিযুদ্ধ ও উন্নয়ন অর্থনীতিতে যার অবদান ফেলনা নয়, বরং অপরিসীম তাঁর বিরুদ্ধে সংসদে দাঁড়িয়ে যখন বস্তাপচা শব্দে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেন তখন আমাদের মনে পড়ে তিনি এর আগেও এমন উদ্ধত অভব্য আচরণ করেছেন। এদেশের বরেণ্য অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সায়ীদের বিরুদ্ধেও তিনি সংসদে দাঁড়িয়ে অমার্জিত ভাষায় বিষোদগার ও নিন্দাবাদ করেছিলেন। এ বড় অন্যায়।
শোনা যায়, আওয়ামী লীগে স্বচ্ছ রাজনীতির রক্তের উত্তরাধিকার, মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদের সুযোগ্য তনয় সোহেল তাজের মত উদীয়মান তরুণকেও তিনি অপমান করে মন্ত্রীসভা থেকে পদত্যাগ করাতে কলকাটি নেড়েছিলেন।
তাই বলি অন্যকে আলোকিত হবার মন্ত্র দেবার আগে প্রদীপ তাকিয়ে দেখুন - আপনার নিচে কি গভীর অন্ধকার।
মুক্তমত বিভাগে প্রকাশিত লেখার বিষয়, মতামত, মন্তব্য লেখকের একান্ত নিজস্ব। sylhettoday24.com-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে যার মিল আছে এমন সিদ্ধান্তে আসার কোন যৌক্তিকতা সর্বক্ষেত্রে নেই। লেখকের মতামত, বক্তব্যের বিষয়বস্তু বা এর যথার্থতা নিয়ে sylhettoday24.com আইনগত বা অন্য কোনো ধরনের কোনো দায় গ্রহণ করে না।
আপনার মন্তব্য