সিলেট টুডে ডেস্ক

২৮ ডিসেম্বর, ২০১৪ ০৮:০০

বাড়ি ফিরেছেন বাংলাদেশের বন্ধু গোবিন্দ হালদার

"পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে", "এক সাগর রক্তের বিনিময়ে", "মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি", "পদ্মা মেঘনা যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা" - কালজয়ী এসব গানের রচয়িতা গোবিন্দ হালদার

'পূর্ব দিগন্তে সূর্য উঠেছে', 'এক সাগর রক্তের বিনিময়ে', 'মোরা একটি ফুলকে বাঁচাব বলে যুদ্ধ করি', 'পদ্মা মেঘনা যমুনা, তোমার আমার ঠিকানা'-  কালজয়ী এসব গানের রচয়িতা গোবিন্দ হালদারের শারীরিক অবস্থা ভালো নেই৷ মানসিকভাবেও বিপর্যস্ত তিনি। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের অকৃত্রিম বন্ধু গোবিন্দ হালদারের চিকিৎসার দায়িত্ব নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রি শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রি গোবিন্দ হালদার এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের সাথে কথা বলে এই দায়িত্ব নেন।

গোবিন্দ হালদারের সহায়তায় এগিয়ে আসার জন্য তার মেয়ে গোপা হালদার প্রধানমন্ত্রীর প্রতি 'গভীর কৃতজ্ঞতা' প্রকাশ করে বলেছেন, এ ঘটনায় তারা 'অভিভূত'।   ২৭ ডিসেম্বর শনিবার বিকালে গোবিন্দ হালদার ও তার মেয়ে গোপা হালদারের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে ফোনে কথা বলেন তার বিশেষ সহকারী মাহবুবুল হক শাকিল। স্বাধীন বাংলা বেতারের গীতিকার ও সুরকার গোবিন্দ হালদার বার্ধক্যজনিত রোগে আক্রান্ত হয়ে গত ১৩ নভেম্বর হাসপাতালে ভর্তি হন।

 ২০ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টেলিফোনে গোবিন্দ হালদারের সঙ্গে কথা বলেন। তার চিকিৎসাসহ সব ব্যয় বহন করবেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রী। ভারত সফরের সময় গত সোমবার কলকাতার হাসপাতালে গোবিন্দ হালদারকে দেখতে যান রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

গোবিন্দ হালদার শনিবার হাসপাতাল থেকে বাসায় ফিরেছেন জানিয়েছেন মাহবুবুল হক শাকিল। তিনি জানান- গোপা হালদার তার পরিবারের পক্ষ থেকে বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, আমরা অভিভূত।নিজ ঘর ছেড়ে পরবাসী হয়ে জীবনযাপন করছেন হাওড়া জেলার বকুলতলার নজিরগঞ্জে যেখানে গোবিন্দ হালদারের স্ত্রী পারুল হালদারের বাবার বাড়ি। গোবিন্দ হালদারের মেয়ে আর্থিকভাবে তার বাবাকে ঠকিয়েছে এবং জোর করে বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেবারও পায়তারা করছে বলে অভিযোগ। অভিযোগ ওঠেছে শারীরিকভাবেও হেনস্থা করেছে মেয়ে এবং মেয়ের জামাই। এমতাবস্থায় বাংলাদেশের এই বন্ধুকে তীব্র আর্থিক সংকটের পাশাপাশি, মানসিক অত্যাচার এবং প্রতিনিয়ত বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দেবার হুমকিও চলছে সমানতালে।গোবিন্দ হালদারের কলম যতই শক্তিশালী হোক না কেন এই বৃদ্ধ বয়সে তিনি মানসিক ও শারিরীক আক্রমণগুলো মোকাবেলা করতে অক্ষম। অসহায় এই পরিবার ইতোমধ্যে নিরাপত্তা চেয়ে পশ্চিমবঙ্গের একটা থানায় সাধারণ ডায়েরিও লিপিবদ্ধ করেছে। কিন্তু পুলিশ সার্বক্ষণিক কোন মানুষের নিরাপত্তা দিতে পারে না বলে তিনিও অত্যাচার থেকে মুক্তি পাচ্ছেন  না।

বাংলাদেশ আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে বিদেশি বন্ধুদের অবদানের জন্যে মুক্তিযুদ্ধ/মুক্তিযোদ্ধা সম্মাননা দিয়ে আসছে বেশ কয়েক বছর ধরে। এটা ভাল উদ্যোগ নিঃসন্দেহে। গোবিন্দ হালদারকেও বাংলাদেশ সম্মানিত করেছে। রাষ্ট্রীয় এই সম্মাননার সঙ্গে সঙ্গে আর্থিক সম্মানিও ছিল। ২০১২ সালে মুক্তিযুদ্ধে অনন্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ 'মুক্তিযোদ্ধা মৈত্রী সম্মাননা' দিয়ে সম্মানিত করে। এর আগে ২০১০ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাঁর ত্রাণ তহবিল থেকে গোবিন্দ হালদারকে ১৫ লাখ টাকাও অনুদান  দেন।

১৯৩০ সালে পশ্চিমঙ্গে জন্ম নেওয়া কালজয়ী এই গীতিকার আমাদের মুক্তিযুদ্ধে যে অবদান রেখেছেন সেটা অতুলনীয়। বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতা আর স্বাধিকারের চেতনাকে ধারণ করা এই মানুষটি সীমানাগত সীমাবদ্ধতা অতিক্রম করে ধারণ করেছিলেন তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান আর বর্তমান বাংলাদেশের মানুষের স্বাধীনতার আকুতি। একাত্তরে পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ সীমান্তের বাসিন্দা গোবিন্দ হালদার আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সময় আকাশবাণী কলকাতার কেন্দ্রে বসে একের পর এক লিখে গেছেন কালজয়ী চেতনা উদ্দীপক সব গান। সে গানগুলো একাত্তরের রণাঙ্গনে মুক্তিসেনাদের উদ্দীপ্ত করেছে পাকিস্তানি হায়েনাদের বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে। শুধু নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধেই গান রচনা করে তিনি ক্ষান্ত হননি ১৬ ডিসেম্বর যখন বাংলাদেশ স্বাধীন হয় তখন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে প্রচারিত হয় পুরো নয় মাসের স্থিরচিত্র বর্ণনাভিত্তিক অমর গান ‘এক সাগর রক্তের বিনিময়ে...’। পরদেশের মানুষের জন্যে তারাই এমন আবেগ আর ভালোবাসা উৎসারিত করতে পারে যারা অন্তর থেকে ধারণ করে। গোবিন্দ হালদার ধারণ করেছিলেন বাংলাদেশকে, আত্মত্যাগ আর সংগ্রামকে।

 

আপনার মন্তব্য

আলোচিত