ফুজেল আহমদ, কানাডা

১৪ জানুয়ারি, ২০২৪ ০২:১৩

কানাডায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে নতুনেরা যে সমস্যায় পড়ছেন

কানাডার টরেন্টো শহরে বাংলাদেশিদের পদচারণায় মুখরিত পুরো বাংলা পাড়া ডেনফুর্ট এরিয়া। নতুন আসা অধিকাংশই এসেছেন ভিজিট ভিসায় এবং তার মধ্যে বড় একটি অংশ কানাডাতে থেকে যাওয়ার জন্য আবেদন করেছেন- কিংবা সে ভাবনায় আছেন। কিছু সংখ্যক ভিজিটর যারা এসে চলে গিয়েছেন এবং কেউ কেউ চলে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

সবার ক্ষেত্রেই নির্মম সত্য হয়ে একটি ব্যাপার মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে অমানুষ চিনিয়ে দিচ্ছে। সেটা হচ্ছে মহাজনী দাদন ব্যবসায়ীদের প্রেতাত্মায় আচ্ছন্ন চরিত্র। যারা ফিরে যাবেন; তাদের ছাড়া বাকি সবার ক্ষেত্রে আবাসন সংকটের সাথে যুক্ত হয়েছে উইন্টারের স্লো জব মার্কেট। সিন নাম্বার ছাড়া কাজের বিড়ম্বনাসহ খুবই অস্বস্তিকর এবং পীড়াদায়ক সময় পার করছেন বসবাসের ক্ষেত্রে।

সময়ের বিবর্তনে নতুনদের অনেকেই হয়তো কানাডার মেইন স্ট্রিমে ঢুকে যাবেন। কানাডাতে স্থায়ীভাবে থাকার অনুমোদন পাবেন। কিন্তু বর্তমান যে মনুষ্যসৃষ্ট অমানবিক আবাসন সংকট, সেটার ট্রমা কাটিয়ে ওঠতে সবাইকে হিমশিম খেতে হবে।

প্রতিদিনই অসংখ্য ফোন কল কিংবা রিকুয়েস্ট আসে বাসা ম্যানেজ করে দেওয়ার জন্য। সেই সূত্রে ভাড়া যাবে এমন একাধিক বাসার মালিক কিংবা লিজ হোল্ডারের সাথে যোগাযোগ এবং দেখা হয়েছে। নির্মম সত্য যারা কানাডাতে বসবাস করছেন দীর্ঘদিন থেকে এবং নিজেদেরকে বাড়িওয়ালা হিসেবে পরিচয় দিচ্ছেন তাদের মধ্যে দুষ্ট একটি চক্র বাসা ভাড়া প্রায় দ্বিগুণ করে দিয়েছেন। একজনের রুমে দুজনকে ঢুকিয়ে ডাবল ভাড়া নিচ্ছেন। এত চড়া রেন্ট নিচ্ছেন কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে খুবই চমৎকার উত্তর দেন—ইন্টারেস্ট রেট হাই হয়ে গেছে। এই নতুনরা না আসলে সেই মর্টগেজ কিংবা ইন্টারেস্ট রেটের কী হতো? তার চাইতেই বড় প্রশ্ন এদেরই একটি বড় অংশ যখন আবার আড়ালে আবডালে এই নতুনদের আগমনকে বাঁকা চোখে দেখতে অভ্যস্ত।

বাস্তব প্রেক্ষাপটে নতুনদের মধ্যে ফ্যামিলিসহ কিংবা সিঙ্গেল যারাই আসেন; বাসায় ওঠেছেন; তাদের ক্ষেত্রে অ্যাপার্টমেন্টে রুম পাওয়া সিস্টেমের কারণেই একটু কঠিন। সে ক্ষেত্রে তারা ব্যক্তি মালিকানাধীন বাড়িওয়ালাদের কাছ থেকে বাসা ভাড়া নেওয়ার চেষ্টা করেন। এখানে আবার একটি বিশাল অংশ বর্তমানে মধ্যস্থতাভোগকারী হিসেবে ঢুকে গেছে, যারা মূল মালিকের কাছ থেকে বাসা ভাড়া নিয়ে এসে সেগুলো আবার সাব-লিজ হিসাবে সিঙেল অথবা ফ্যামিলিকে ভাড়া দিতে শুরু করেছেন।

এসব ক্ষেত্রে একটি অনাকাঙ্ক্ষিত সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে—বাসার মূল মালিক চড়া দামে রেন্ট দিয়েও মনে করছেন আমার কাছ থেকে এত টাকা ভাড়া নিয়ে সে তো এখানে বিজনেস করে ফেলেছে আরও বেশি। আমি কেন নিজ দায়িত্বে সেটা করলাম না!

যুক্তি-তর্কের মানদণ্ডে বলা হবে দুজনেরই অবস্থান হয়তো সঠিক, কিন্তু নৈতিকতার মানদণ্ডে শূন্য। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে অন্য জায়গায়। আমার পরিচিত তিনজন নতুনকে নিয়ে সোশ্যাল অফিসে গিয়েছিলাম। তারা সাব-লিজ পেপারের সাথে বাসার মূল মালিকের লিজ পেপার চাচ্ছে। এক্ষেত্রে সাব-লিজ নেয়া মধ্যস্থতাভোগকারী অনেকেই মূল মালিক হতে সেই লিজ পেপার এনে দিচ্ছেন না, কিংবা দিতে পারছেন না। ল্যান্ডলর্ড আর মধ্যস্থতাভোগকারীর এই দা-কুমড়ার সম্পর্কের মধ্যে সমস্যায় পড়ে যাচ্ছেন রিফিউজি ক্লেম করা নবাগতরা। কারণ বাসা ভাড়ার লিজ পেপার দিতে না পারলে সোশ্যাল থেকে তাদের একমোডেশন বাবত যে পরিমাণ অর্থ দেওয়ার কথা সেটা ইস্যু করতে পারছেন না কেইস ওয়ার্কার। বিষয়টি খুবই পীড়াদায়ক এবং নিন্দনীয়।

বাংলা কমিউনিটিতে নেতৃত্বদানকারী সকল সংগঠনের দায়িত্বশীলদের কাছে ব্যাপারটি গুরুত্ব দিয়ে দেখার অনুরোধ করেছেন অনেকেই। এসব ক্ষেত্রে আমার সামনে যে দুটি অপশন আছে কিংবা আমি এই জায়গায় হলে যা করতাম সেটা হচ্ছে:

১. প্রথম অনুরোধ আপনারা যারা মালিক কিংবা মধ্যস্থতাভোগকারী হয়ে বাসা ভাড়া দিচ্ছেন, তারা দয়া করে আপনার টেনেন্টের হাতে লিজ এবং সাব-লিজের পেপার চাহিবার আগে দিয়ে দিন। তাদেরকে সহায়তা করুন যাতে তারা সরকার হতে প্রাপ্ত সুবিধাটুকু সহজভাবে পায় এবং আপনাদের বাসা ভাড়া ও তাহারা নিয়মিত পরিশোধ করতে পারেন।

২. কানাডায় নতুন যারা আসছেন তারা যেহেতু রাইট থাকার পর ও লিজ কিংবা লিজ এন্ড সাব-লিজ এর দুটি পেপার পাচ্ছেন না। সে জন্য সরকার হতে বরাদ্দকৃত সুবিধাটাও নিতে পারতেছেন না; সেজন্য আপনারা যে বাসায় থাকেন সবাই একত্রিত হয়ে রেন্ট দেওয়া বন্ধ করে দিন। কয়েকমাস সেটা বলবত থাকলে ও সিটি/টেনেন্ট বোর্ড আপনার পাশেই থাকবে। যদি বাড়িওয়ালা এবং সাব-লিজওয়ালাদের সমস্যা তারা সমাধান করতে না পারে সেজন্য তাহারা বঞ্চিত হোক রেন্ট থেকে। ব্যাপারটা সুন্দর নয় যদিও, তবে এর বিকল্প তো নেই।

ফুজেল আহমদ: কানাডা প্রবাসী।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত