১৫ ফেব্রুয়ারি , ২০১৫ ২৩:৩৮
একের পর এক প্রতারনার জন্য অভিযোগে আবারও আলোচনায় আসলেন হবিগঞ্জের বানিয়াচঙ্গের অধিবাসী যুক্তরাজ্যপ্রবাসী জনৈক মোহাম্মদ শাহ নেওয়াজ। জানা যায়, গত ৯ ফেব্রুয়ারী শাহনেওয়াজ হবিগঞ্জের সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের সাথে সৌজন্য সাক্ষাতের নামে তার টেবিল হতে একটি বই নিয়ে ছবি তুলে বানিয়াচং-হবিগঞ্জ সড়ক সংস্কারের কাজ দ্রুত শুরু হচ্ছে উল্লেখ করে সেটি স্থানীয় কয়েকটি পত্রিকায় প্রকাশ করেন ।
সংবাদটিতে উল্লেখ করা হয়, শাহনেওয়াজ গত সপ্তাহে সড়ক বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলীর সাথে সাক্ষাত করে দ্রুত সড়কটি সংস্কার করার অনুরোধ জানান। এ ব্যাপারে তিনি নাকি যোগাযোগ মন্ত্রনালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উর্ধতন কর্মকর্তাদের সাথেও সাক্ষাত করেন। প্রকৃতপক্ষে পূরো সংবাদটিই ছিলো ভূয়া। আর এ ভূয়া সংবাদটি প্রকাশ হওয়ার হবিগঞ্জের সর্বত্র তোলপাড় সৃষ্টি হয়। কারন ৭ কোটি ৩৪ লাখ টাকা ব্যয়ে হবিগঞ্জ-বানিয়াচঙ্গ সড়কের ১৮ কিলোমিটার রাস্তার সংস্কার কাজের মতো এ ধরনের একটি বড় প্রকল্প গ্রহন ও বাস্তবায়নের পেছনে যে বড় একটি রাজনৈতিক সিদ্ধান্তের ব্যাপার জড়িত তা যে কারো পক্ষেই অনুধাবন করা সম্ভব। আর এরকম একটি প্রকল্পের কৃতিত্ব ৩/৪ হাজার টাকা খরচ করে ৩/৪ টি পত্রিকায় সংবাদ ছেপে কোন আগন্তূক নিয়ে নিবে তা কেউই মানতে পারেননি।
আর এর পরদিনই শাহনেওয়াজের কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করেন সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের সংবাদ পত্রে প্রেরিত এক প্রতিবাদ লিপির মাধ্যমে।
নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম প্রতিবাদ লিপিতে বলেন, “সংবাদে উল্লেখ করা হয়েছে আমার সাথে শাহনেওয়াজের বানিয়াচং-হবিগঞ্জ সড়ক সংস্কারের ব্যাপারে আলাপ ও সড়ক সংস্কারের তাগিদ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে এ ধরণের কোন কথা বার্তা বা আলোচনা হয়নি। তিনি স্বপ্রণোধিত হয়ে আমার সাথে দেখা করতে আসেন। একজন প্রবাসী হিসেবে তাকে সম্মান দেই। হঠাৎ টেবিলে থাকা একটি বই হাতে নিয়ে তিনি আমার সাথে একটি ছবি তোলার আগ্রহ প্রকাশ করেন। আমি সরল বিশ্বাসে তার সঙ্গে ছবি তুলি। হীন উদ্দেশ্য হাসিল করার উদ্দেশ্যে পরবর্তিতে তিনি ইন্টারনেটসহ বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করেন যা দুঃখজনক ও অনভিপ্রেত। তিনি পত্র পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করে জনমনে বিভ্রান্তি ছড়াবেন তা আমার ধারনায় ছিল না।”
জানা যায়, নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম প্রতারক শাহ নেওয়াজের বিরুদ্ধে হবিগঞ্জের আদালতে বাংলাদেশ দন্ডবিধির ৪২০ধারা মোতাবেক প্রতারনা মামলা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আর আদালতে প্রতারনার বিষয়টি প্রমানিত হলে তার সর্বোচ্চ ৭ বছরের কারাদন্ড হতে পারে।
এব্যাপারে হবিগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি ও বিশিষ্ট সাংবাদিক শোয়েব চৌধুরী তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, “হায় লন্ডন প্রবাসী হায়।এই ধরনের সস্তা প্রচার করা কত যে অপমানজনক তা নিচের বিবৃতিই প্রমান করে। বেইজ্জতির আর কি আছে। যদি ওই ভদ্র লোক মনে করেন মানি মানুষের মান জুতা দিয়ে পেটালেও যায়না।তা হলে তিনি এ ধরনের কর্মকান্ড আরো চালিয়ে যাবেন। তবে আপসোস হয় আমাদের হবিগঞ্জ জেলায় অনেক লন্ডন প্রবাসী আছেন যারা নিজের কষ্টার্জিত অর্থ দিয়ে সমাজের বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছেন গোপনে। প্রচার বিমুখী এই সব প্রবাসী কে মূল্যায়ন করছিনা। এর কারণ হচ্ছে কতিপয় স্থানীয় পত্রিকার সাংবাদিক(তারা নিজেদেরকে সিনিয়র ও শিক্ষিত বলে প্রচার করতে ভালবাসে, অথচ তারা মেট্রিক বা আন্ডার মেট্রিক) প্রচারমুখী প্রবাসীদের নিকট থেকে ১শ/২শ টাকা পেয়ে কুত্তার মতো সারাদিন এদের পেছনে থাকে। এরা কোনটি নিউজ কোনটি নয় তা বিবেচনা না এনে লন্ডনী বাবার পদলেহনে ব্যস্ত।এদের জন্য আমার করুনা হয়। আমি যদি কোটি পতি হতাম তাহলে ওইসব কথিত অসৎ সাংবাদিতাদেরকে মাসে মাসে বেতন দিয়ে বলতাম টাকা নিয়ে সংসার চালাও। তবু এই পেশার মানুষকে আর লজ্জায় ফেলিস না বাপ।”
যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগ নেতা ও হবিগঞ্জ বারের সাবেক আইনজীবি মীর গোলাম মোস্তফা তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন, “এই সব বাটপারদের সস্তা জুতা দিয়া সাইজ কর।আর কতিপয় সাংগাতিকদের কালো তালিকা করে সমাজে তাদের মুখোশ খুলে দাও।”
শাহনেওয়াজের প্রতারনার ঘটনা এখানেই শেষ নয়। তিনি সংবাটিতে লিখিয়েছেন তিনি যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের একজন উপদেষ্টা। একটি সূত্রে জানা যায়, যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের ৪৯ জন উপদেষ্টার মধ্যে তার অবস্থান ৪৯তম। তাও আবার বিতর্কিত। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের প্রথম সভায় যোগ দিয়েই তিনি বিএনপি-জামায়াত তথা তারেক রহমানের এজেন্ট অভিযোগে সাধারন কর্মীদের মাধ্যমে জুতা পেটা ও লাঞ্চিত হন। পরে হবিগঞ্জের সাবেক এক ছাত্র নেতাকে ‘মালাউন’ ডাকায় তার বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিক্ষোভ হয়। হবিগঞ্জ হিন্দু মহাজোট এক বিশাল জনসভা ও মানববন্ধন ডেকে শাহ নেওয়াজকে হবিগঞ্জে অবাঞ্চিত করে।
চতুর ও ধূর্ত প্রকৃতির লোক শাহনেওয়াজ এর কয়েক দিন পরেই হবিগঞ্জ গিয়ে ঘাটিয়াস্থ মধুমিতা ক্লথ স্টোরে গিয়ে এর সত্বাধিকারী সমাজসেবক শচীন্দ্র লাল সরকারের সাথে একটি ছবি তুলে তা পত্রিকায় শচিন্দ্র কলেজের উন্নয়নে মত বিনিময় হয়েছে বলে চালিয়ে দেন বলেও অভিযোগ উঠেছে । শুধু তাই নয় পরের দিন তিনি নাগুরায় অবস্থিত কলেজটিতে গিয়ে অফিস সহকারীর কক্ষে কিছুক্ষন বসে এসে সংবাদ প্রকাশ করান তার শচীন্দ্র কলেজ পরিদর্শন হিসেবে। যার বিরুদ্ধে এ কলেজের প্রতিষ্টাতা শচীন্দ্র লাল সরকার ও অধ্যক্ষ ফরাশ শরিফি শীঘ্রই আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে একটি সূত্রে জানা যায়।
এরই ধারাবাহিকতায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে অবনাননাকারী তাদের রোষানল থেকে বাঁচতে কয়েক জন সাংবাদিক নিয়ে চুনারুঘাটে বাসুদেব মন্দিরে গিয়ে ছবি উটিয়ে একই ধারায় তা পত্র পত্রিকায় ছাপায়।
এদিকে শাহ নেওয়াজ এর পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে । তিনি কোথা থেকে , কি গবেষনার জন্য এই ডিগ্রি লাভ করেছেন তা পরিষ্কার নয় । একসময় তিনি বৃটিশ সরকারের সাবেক প্রিন্সিপাল পলিসি অফিসার হিসেবে পদবী ব্যবহার করে আসছিলেন। পরে বিষয়টি বৃটিশ প্রশাসনের নজরে তা আর ব্যবহার করেন না। এ ব্যাপারে বৃটেনে যে কোন সময় তার বিরুদ্ধে যে কেউ স্বপ্রনোধিত হয়ে মামলা করতে পারে বলে জানা গেছে ।
গত নির্বাচনের প্রাক্কালে শাহনেওয়াজ ঢাকায় গিয়ে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পত্র সংগ্রহ করেন। এসময় বানিয়াচঙ্গের সর্বজন শ্রদ্ধেয় প্রবীন আওয়ামী লীগ নেতা আমীর হোসেন মাস্টারের সাথে একটি ছবি তুলে একই কায়দায় পত্রিকায় তার নামে চালিয়ে দিলে নেতাকর্মীরা ক্ষোভে ফেটে পড়েন বলেও জানা যায় । পরে আওয়ামী লীগ নেতা আমীর হোসেন মাস্টার প্রতারক শাহনেওয়াজকে শাসান ও গালমন্দ করেন। শাহ নেওয়াজ ভবিষ্যতে এমন কাজ আর না করার প্রতিজ্ঞা করে আমীর হোসেন মাস্টারের পা ছুয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করে। আর এ শর্তেই তাকে বানিয়াচঙ্গে প্রবেশ করতে দেয়া হয়।
এছাড়া তিনি একবার নিজেকে শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হিসেবে ভূয়া পরিচয়ে সংবাদ লেখানোয় সেখানকার বর্তমান ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা তাকে সাবধান করে নেন। এর পর থেকে তিনি শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রবেশই করেননা এবং দেশে ও বিদেশে শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন অনুষ্টানেও যান বলেও জানা যায় । শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায় তিনি শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রথম ব্যাচের ছাত্র ছিলেন কিন্ত কোর্স সম্পূর্ন না করেই তিনি বিশ্ববিদ্যালয় ত্যাগ করেন।
বানিয়াচঙ্গের কৃষক রাজা মিয়ার সন্তান শাহনেওয়াজ বৈবাহিক সূত্রে যুক্তরাজ্যের ওল্ডহামে থাকেন।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে শাহনেওয়াজের সাথে এ প্রতিবেদকের টেলিফোনে কথা হয়। প্রথমেই তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে আনীত সকল অভিযোগ সঠিক নয়। এটা তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র। তবে তিনি নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলমের সাথে প্রতারনার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন তিনি তাকে ম্যানেজ করেছেন। আর এরপরও যদি তিনি মামলার সম্মুখিন হন তাহলে ব্যাপারটি হবে দুঃখজনক। আমির হোসেন মাস্টারের পা ছুয়া সম্পর্কে বলেন একজন মুরুব্বির পা ধরা তো খারাপের বা লজ্জার কিছু নেই। তিনি বলেন ইলিয়াস আলী সাইফুর রহমানের পা ছুয়ে ক্ষমা চাইতে পারলে আমি আমীর হোসেন সাহেবের পা ছুয়ে ক্ষমা চাইতে পারবো না কেন? কোথা থেকে পিএইচডি করেছেন এ প্রশ্ন করা হলে তিনি লাইন কেটে মোবাইল ফোন বন্ধ করে ফেলেন।
আপনার মন্তব্য