লন্ডন সংবাদদাতা

২৪ এপ্রিল, ২০১৫ ১৭:১৬

মেয়র পদ হারানো লুৎফুর এবার তদন্তের মুখোমুখি

নির্বাচনী প্রচারণায় ধর্মের ব্যবহার, ভোট জালিয়াতিতে পূর্ব লন্ডনের টাওয়ার হ্যামলেটসের মেয়র পদ হারানো বিতর্কিত বাংলাদেশি লুৎফর রহমানের বিরুদ্ধে ফৌজদারি অপরাধের তদন্তে নামার কথা ভাবছে পুলিশ। তাকে যতদ্রুত সম্ভব মেয়র অফিস ত্যাগের নির্দেশ দিয়েছে দেশটির নির্বাচনী কোর্ট।

তার সঙ্গে জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে তদন্তে নামবে লন্ডন পুলিশ। লুৎফুরের বিরুদ্ধে মামলার জন্য যুক্তরাজ্যের ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিসের অনুমোদন নিয়ে তাদের এগোতে হবে।

পূর্ব লন্ডনের স্থানীয় ওই কাউন্সিলে নতুন করে ভোটগ্রহণের আদেশ দিয়ে তাতে লুৎফুরের অংশগ্রহণের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে কোর্ট। সেইসঙ্গে অবিলম্বে তাকে আড়াই লাখ পাউন্ড জরিমানা পরিশোধ করতে বলা হয়েছে।

আদালতের এই আদেশ আসার কয়েক ঘণ্টার মধ্যে রাতে লন্ডন মেট্রোপলিটন পুলিশের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ওই রায় পুলিশের নজরে এসেছে এবং তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছে। লুৎফুরের বিরুদ্ধে মামলার জন্য যুক্তরাজ্যের ক্রাউন প্রসিকিউশন সার্ভিসের অনুমোদন নিয়ে তাদের এগোতে হবে।

বাংলাদেশি লুৎফুর এক সময় লেবার পার্টিতে যুক্ত ছিলেন, দলটির হয়ে তিনি টাওয়ার হ্যামলেটস বারা কাউন্সিলে কাউন্সিলর হয়েছিলেন।

লেবার পার্টি থেকে মনোনয়ন না পেয়ে ২০১০ সালে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচন করে বিজয়ী হন। চার বছর পর আবার তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে প্রার্থী হন।

গত বছর দ্বিতীয় মেয়াদে টাওয়ার হ্যামলেটসে মেয়র পদে ভোটে জয়ী লুৎফরের বিরুদ্ধে বহু অভিযোগ। উগ্র ইসলামী গোষ্ঠীকে মদদ দেওয়ার পাশাপাশি লন্ডনে থাকা একাত্তরের যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গে তার সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ রয়েছে।

লুৎফুরকে ভোট না দিলে তা ‘ইসলামবিরোধী’ হবে বলে ২০১৪ সালের মে মাসে অনুষ্ঠিত নির্বাচনে প্রচার চালানোর অভিযোগ ওঠে তার বিরুদ্ধে, সেই সঙ্গে নির্বাচনে প্রভাব খাটানোর অভিযোগও ওঠে।

চার ভোটারের ওই অভিযোগ তদন্তের পর রয়েল কোর্টস অফ জাস্টিসে সেই অভিযোগের বিষয়ে ১০ সপ্তাহ শুনানির পর বৃহস্পতিবার রায় হয়।

রায়ে ওই নির্বাচন বাতিলের আদেশ দিয়ে নির্বাচন কমিশনার রিচার্ড মওরি বলেন, নির্বাচনী প্রচারে ‘ধর্ম’ ও ‘বর্ণবাদ’কে কাজে লাগিয়েছেন লুৎফুর রহমান। নির্বাচনের পুরো সময়জুড়ে ‘রেইস ও ইসলামফোবিয়া কার্ড’ খেলেছেন তিনি। নিঃসন্দেহে তিনি দুর্নীতি ও অবৈধ কর্মকাণ্ডে জড়িত ছিলেন। ভোটের দিন লুৎফুর রহমানের সমর্থকদের আচরণ নিয়েও আদালতের উত্থাপিত তথ্য-প্রমাণের ভিত্তিতে তাকে ‘উদ্বেগজনক’ বলে মন্তব্য করেছেন বিচারক।

“বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের মানুষের সংমিশ্রণে গড়ে ওঠা জনগোষ্ঠী থেকে এট আসেনি। কোনো সামাজিক বা অন্য কোনো বঞ্চনা থেকেও এটা হওয়ার নয়। কোনো একজন ব্যক্তির ভয়ানক লালসার ফল এটা। এই ঘটনায় প্রকৃত অর্থে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন তারা টাওয়ার হ্যামলেটসের জনগণ।”

তার বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো, একটি উগ্রপন্থী ইসলামী গোষ্ঠীর পৃষ্ঠপোষকতা ও অর্থায়নে তার রাজনৈতিক গ্রুপ গড়ে উঠেছে এবং নির্বাচনী প্রচারে নির্লজ্জভাবে ‘বর্ণ ও ধর্মীয় কার্ড’ ব্যবহার করা হয়েছে।

এদিকে, গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, লুৎফুরকে অবিলম্বে আড়াই পাউন্ড পরিশোধ করতে বলা হলেও তার জরিমানার অঙ্ক ১০ লাখ পাউন্ড হতে পারে। আদালতে শুনানিতে লুৎফুর ‘মিথ্যাচার’ করেছেন বলে বিচারকের মন্তব্য আসায় তার আইন পেশার ওপরও নিষেধাজ্ঞা আসতে পারে বলে ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।

শুরু থেকে সব অভিযোগ অস্বীকার করে আসা লুৎফুরের পক্ষ থেকে এই রায়ে হতাশা প্রকাশ করে বলা হয়েছে, তারা এই রায় পুনর্বিবেচনার জন্য আইনি উদ্যোগ নেবেন।

লুৎফুরের পক্ষে এক বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “যে রায় এসেছে তা অত্যন্ত দুঃখজনক। মেয়র কোনো ধরনের অনিয়মের কথা নাকচ করেছেন এবং বিচারিক ব্যবস্থার উপর তার পূর্ণ আস্থা আছে। তাই বলতে গেলে এই রায় বিস্ময়কর।”

আদালতের রায় চ্যালেঞ্জ করলেও নতুন মেয়র নির্বাচন ঠেকাতে পারবেন না লুৎফুর। আগামী জুনের মাঝামাঝিই আবার ভোট হতে পারে।  প্রথম দফা ভোটে লুৎফুর রহমান পেয়েছিলেন ৪৩ শতাংশ ভোট। তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিগস পান ৩৩ শতাংশ ভোট। কেউ ৫০ শতাংশ ভোট না পাওয়ায় দ্বিতীয় দফা ভোটে বিগসের ৪৭ দশমিক ৭ শতাংশের বিপরীতে ৫২ দশমিক ৭ শতাংশ ভোট পেলে বিজয়ী ঘোষণা করা হয় লুৎফুরকে।

লুৎফুরের পাশাপাশি নির্বাচনী আইন ভঙ্গের দোষী হিসেবে চিহ্নিত হয়েছেন তার সহযোগী আলিবর চৌধুরীও। আদালতের রায়ে তিনিও কাউন্সিলর পদ হারিয়েছেন। লুৎফুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগ করার সাহস দেখানোর জন্য চার আবেদনকারীর প্রশংসা করেছেন বিচারক।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত