লন্ডন সংবাদদাতা

১৮ মার্চ, ২০১৭ ০০:০৬

‘একাত্তরের গণহত্যাকে স্বীকৃতি দিন’, জাতিসংঘ সেশনে নির্মূল কমিটি

একাত্তরে বাংলাদেশে পাকিস্তানী সামরিক বাহিনীর গণহত্যাকে ‘গণহত্যা‘ হিসেবে স্বীকৃতি দিতে জাতিসংঘের প্রতি আহবান জানিয়েছেন একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি, ইউরোপ শাখার নেতৃবৃন্দ।

১৪ মার্চ সুইজারল্যান্ডে অনুষ্ঠিত জাতিসংঘ হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের ৩৪তম অধিবেশনে ‘এনফোর্সড ডিজএপিয়ারেন্স ইন পাকিস্তান: এন ইন্টারেক্টিভ গ্লোবাল টক‘ (Enforced Disappearances in Pakistan, an interactive Global Talk) শীর্ষক সেমিনারে উপস্থিত হয়ে নির্মূল কমিটি নেতৃবৃন্দ এই আহবান জানান। জেনেভা’র পালে দ্যা নেশনস এ অনুষ্ঠিত এই সেমিনারের আয়োজক ছিলো একশন এড অ্যা ফ্যামিলিয়া ডিমিউনস (Action Aides Aux Familles Demunies)। পাকিস্তানের বেলুচিস্তানের জনগণের প্রতি সংহতি জানিয়ে এই সেশনের আয়োজন করে তারা।

জাতিসংঘ হিউম্যান রাইটস কাউন্সিলের ৩৪তম অধিবেশনের এই সেশনে সুইজারল্যান্ড নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি রহমান খলিলুরের নেতৃত্বে অংশ নেয়া নির্মূল কমিটি প্রতিনিধি দলের অন্যান্য সদস্যরা হলেন, নির্মূল কমিটি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী সদস্য আনসার আহমেদ উল্লা এবং সুইজারল্যান্ড নির্মূল কমিটি নেতা হাসান ইমাম খান, নিজাম উদ্দিন ও অরুণ বড়ুয়া।

একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর মানবতা বিরোধী গণহত্যা সম্পর্কে অধিবেশনে বক্তব্য রাখেন রহমান খলিলুর। তিনি অবিলম্বে বাংলাদেশের গণহত্যাকে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি দিতে জাতিসংঘের প্রতি আহবান জানান।

ভবিষ্যতে গণহত্যার মত অপরাধ করার মানসিকতা পোষণ করে এমন অপরাধীদের নিরুৎসাহিত করতেই একাত্তরের গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও এর সাথে জড়িতদের বিচার জরুরী, এমন মন্তব্য করে নির্মূল কমিটির কেন্দ্রীয় নেতা, মানবাধিকার কর্মী আনসার আহমেদ উল্লাহ সেমিনারে তাঁর বক্তৃতায় বলেন, জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টে পৃথিবীর অন্যতম ঘৃণ্যতম গণহত্যা হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে একাত্তরের পাকিস্তানী আর্মি কর্তৃক সংঘটিত বাংলাদেশের গণহত্যাকে। এই গণহত্যার জন্যে পাকিস্তানই একক ভাবে দায়ি, মানবাধিকার কমিশনের রিপোর্টে এমনটিও উল্লেখ রয়েছে। অথচ পাকিস্তান কখনও এটি স্বীকার বা বাংলাদেশের সাধারণ মানুষের বিরুদ্ধে তাদের সেনাবাহিনীর এমন মানবতা বিরোধী অপরাধের দায় গ্রহণ করেনি।

বাংলাদেশসহ বিশ্বের শান্তিকামী মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি স্বত্বেও এখন পর্যন্ত একাত্তরের গণহত্যার সাথে জড়িত পাকিস্তানী সেনা সদস্যদের বিচারের উদ্যোগ নেয়নি পাকিস্তান সরকার, এমন অভিযোগ করে যুক্তরাজ্য নির্মূল কমিটির প্রতিষ্ঠাতা নেতা আনসার আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, বাংলাদেশের গণহত্যার সাথে জড়িত পাকিস্তানী সেনা অফিসারদের যতদিন না বিচারের আওতায় আনা হয়েছে ততদিন দেশটির সেনাবাহিনী এধরনের অপরাধ করতেই থাকবে। সাম্প্রতিক সময়ে বেলুচিস্তানে পাকিস্তানী আর্মির কর্মকাণ্ড সে ইঙ্গিতই দিচ্ছে।

‘এনফোর্সড ডিজএপিয়ারেন্স ইন পাকিস্তান: এন ইন্টারেক্টিভ গ্লোবাল টক‘ শীর্ষক এই সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন বালুচ ভয়েস এসোসিয়েশনের সভাপতি মুনির মেঙ্গল। বিশেষ অতিথি ছিলেন বেলুচিস্তানের জনপ্রিয় নেতা খান অব খালাত মীর সুলেমান সাউদ আহমেদজাই।

মূল বক্তা হিসেবে বক্তব্য রাখেন জার্মানির মানবাধিকার কর্মী ক্লাউডিয়া হেইল্ডবার্গ, নরওয়ের আইনজীবী রান্ডি হেগান, এশিয়ান রিসোর্স সেন্টারের বাসির নাভিদ, হিমালয়ান রিসার্চ ফাউন্ডেশনের অধ্যাপক কে.ওয়ারিকো, ইটালিয়ান নেপালি কবি টনি সিটোসহ কাশ্মিরী, সিন্ধী, পস্তু ও বেঙ্গলী মানবাধিকার কর্মীরা।

পরিকল্পিতভাবে বালুচিস্তানের মানুষকে গুম করে হত্যা করা হচ্ছে সেমিনারে এমন অভিযোগ করেন বক্তারা।

বিভিন্ন সংগঠন ও ভিকটিম ফ্যামিলি সদস্যদের অভিযোগ, এই পর্যন্ত প্রায় ২৪ হাজার সাধারণ মানুষকে জোরপূর্বক তুলে নেয়া হয়েছে, যাদের গণকবর বালুচিস্তানের বিভিন্ন এলাকায় আবিষ্কৃত হয়েছে।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত