জুয়েল রাজ, যুক্তরাজ্য

০১ এপ্রিল, ২০১৭ ২১:১৫

একাত্তরের গণকবর ও বধ্যভূমি সংরক্ষণের আহ্বান জানাল আইসিএসএফ

আন্তর্জাতিক অপরাধের ভিকটিমদের পক্ষে কর্মরত বিশেষজ্ঞ এবং কর্মীদের সমন্বয়ে গঠিত ইন্টারন্যাশনাল ক্রাইমস স্ট্র্যাটেজি ফোরাম (আইসিএসএফ) একটি স্বাধীন বৈশ্বিক নেটওয়ার্ক, যা দীর্ঘদিন ধরে বাংলাদেশে সংঘটিত গণহত্যার স্বীকৃতি আদায়ের লক্ষে কাজ করে চলেছে। আইসিএসএফ দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে, শুধু মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি বাঁচিয়ে রাখা এবং গণহত্যার শিক্ষা ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে জানানোর জন্যেই নয়, বাংলাদেশে সংগঠিত গণহত্যার পক্ষে বৈশ্বিক জনমত গড়ে তোলা এবং এর আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আদায়ের জন্যও মুক্তিযুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ স্থানসমূহ (যেমন: গণকবর, বধ্যভূমি) সংরক্ষণ এবং যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত জরুরী।

সম্প্রতি ২৫ মার্চ, প্রথম গণহত্যা দিবস উপলক্ষে 'গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির রোডম্যাপ: সরকারের প্রতি আইসিএসএফ এর ৭-দফা প্রস্তাব' শীর্ষক আইসিএসএফ এর ব্রিফিংয়ে সুনির্দিষ্টভাবে এই বিষয় তুলে ধরা হয়।

ব্রিফিংয়ে বলা হয়, সম্প্রতি কিছু সংবাদ প্রতিবেদনে অত্যন্ত উদ্বেগের সাথে আমরা লক্ষ্য করেছি, মুক্তিযুদ্ধের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু নিদর্শন কিভাবে অবহেলায় কিংবা ভগ্নদশায় রয়েছে। যেমন: পত্রিকা থেকে আমরা জানতে পেরেছি নওগাঁ জেলার ভিন্ন ভিন্ন স্থানে প্রায় ৫০টির মতো মুক্তিযুদ্ধ শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ দীর্ঘদিন ধরে পড়ে আছে অবহেলিত অবস্থায় (ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেস, ২৯ মার্চ ২০১৭)।

একই ধরণের আরেকটি উদ্বেগজনক খবরে জানা যায়, ঠাকুরগাঁওয়ের রানীশংকৈল, খুনিয়াদীঘির একটি বধ্যভূমি সম্প্রতি বিক্রি হয়ে গেছে, যেখানে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী এবং তাদের স্থানীয় সহযোগীরা নিয়মিত মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধের স্বপক্ষের মানুষদের হত্যা করে ফেলে রেখে যেতো।

পাশাপাশি ইতিবাচক পদক্ষেপের ভিন্ন আরেকটি চিত্রও বিদ্যমান। পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ সরকারের মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস সম্পর্কে জানানোর লক্ষ্য নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত ৩৬০টি ঐতিহাসিক স্থান সংরক্ষণার্থে ২০১৯ সালের জুনের মধ্যে ১৮২ কোটি টাকার প্রকল্প হাতে নিচ্ছে (যুগান্তর, ২১ মার্চ ২০১৭)। সরকারের পক্ষ থেকে এটি নিঃসন্দেহে একটি ইতিবাচক এবং সময়োপযোগী পদক্ষেপ, যার জন্য সরকারের প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করছে আইসিএসএফ।

ঠিক এ কারণেই সরকারের দিক থেকে মুক্তিযুদ্ধের সাথে সম্পর্কিত ঐতিহাসিক স্থান সংরক্ষণকে অগ্রাধিকার দেয়া সত্ত্বেও অন্যত্র বধ্যভূমির মতো ঐতিহাসিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোর ভগ্নদশা, অবহেলা কিংবা আর সব সাধারণ স্থাবর সম্পত্তির মতো ক্রয়-বিক্রয় হতে দেখা বিশেষভাবে দুঃখজনক।

এ পরিস্থিতিতে আইসিএসএফ সরকার এবং বিশেষত মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করছে এবং আবেদন জানাচ্ছে, অবিলম্বে সারাদেশে ছড়িয়ে থাকা বধ্যভূমিগুলো চিহ্নিতকরণ ও সংরক্ষণের জন্য যথাযথ উদ্যোগ নেয়া হোক।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত