জুয়েল রাজ, যুক্তরাজ্য

১৫ মে, ২০১৭ ১৫:৩৯

লন্ডনের বৈশাখী মেলা যেন প্রবাসী বাঙালিদের প্রাণের স্পন্দন

পর মানুষে দুঃখ দিলে দুঃখ মনে হয় না, আপনা মানুষ দুঃখ দিলে মেনে নেয়া যায় না। রিংকুর কণ্ঠের হাহাকার লন্ডনের আকাশকেও ভারী করে তুলেছিল। ঝলমলে আকাশ হঠাৎ করেই মেঘলা  হয়ে যায়।

মাইলস মঞ্চে উঠে যখন গেয়ে উঠে  জ্বালা জ্বালা এই অন্তরে, আকাশ ভেঙে নেমে আসে বৃষ্টি। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই মাইলসের সাথে সুর মিলায় হাজার হাজার মানুষ। এরপর মাইলস একে একে গেয়ে শোনায়, ধিকি ধিকি আগুন জ্বলে, নীলা, পাহাড়ি মেয়ে, ফিরিয়ে দাও সহ তাঁদের জনপ্রিয় অনেক গান।  

পূর্ব লন্ডনের ওয়েভার্স ফিল্ড জুড়ে যেন ছোট এক বাংলাদেশ।  প্রতি বছরের মতো এবারও ব্রিটেনের বিভিন্ন শহরের পাশাপাশি ইউরোপের অন্যান্য দেশ থেকেও অনেকে এসে যোগ দিয়েছিলেন লন্ডন বৈশাখী মেলায়।

রোববার (১৪ মে) তৃতীয় বাংলা খ্যাত লন্ডনে বাঙালিদের প্রাণকেন্দ্র পূর্ব লন্ডনে অনুষ্ঠিত হল বাংলাদেশের বাইরে বাঙালিদের বৃহত্তম উৎসব বৈশাখী মেলা।  

সকাল ১১টায় ব্রিকলেনের ব্যাকসন স্ট্রিট থেকে বর্ণাঢ্য মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে মেলার সূচনা হয়। বিভিন্ন সাংস্কৃতিক সংগঠন ও স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা এতে অংশ নেয়। ব্রিকলেনের বিভিন্ন রাস্তা প্রদক্ষিণ শেষে শোভাযাত্রাটি ওয়েভার্স ফিল্ডে মেলার মূল মঞ্চে এসে মিলিত হয়। নানা রকম রঙিন মুখোশ, হাতি, ঘোড়া, নৌকা, প্রজাপতির সম্বলিত শোভাযাত্রাটি ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষকে ও আকর্ষিত করে। বাঙালি ছাড়াও অনেকেই যোগ দিয়েছিলেন শোভাযাত্রায়।

ম্যানচেস্টার থেকে নিজের বোন ও ভাগ্নিকে নিয়ে এসেছেন আরিফ। তিনি বলেন, বাংলা সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সাথে পরিচয় করিয়ে দিতেই আমি আমার ভাগ্নে-ভাগ্নিদের মেলায় নিয়ে এসেছি। যাতে করে নিজেদের শিকড় কে ভুলে না যায়।

মেলার মূল মঞ্চে দিনব্যাপী ছিল গান, নৃত্য ফ্যাশন শোসহ নানা রকম পরিবেশনা। বিলেতের বাঙালি শিল্পীদের পাশাপাশি বিলেতে জন্ম নেয়া ও বেড়ে উঠা নতুন প্রজন্মের শিশু কিশোরদের সাংস্কৃতিক পরিবেশনা ছিল উল্লেখ করার মতো। বাংলা সংস্কৃতির সঙ্গে সন্তানকে পরিচয় করিয়ে দেয়ার এক বড় সুযোগ বলে মনে করেন পরিবার পরিজন নিয়ে আসা মেলার অনেক দর্শক।

সকাল থেকে লোক সমাগম শুরু হলে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ওয়েভার্স ফিল্ড জনসমুদ্রে রূপ নেয়। একই শহরে থেকে ও হয়তো পরিচিত প্রিয়জনের সঙ্গে দেখা হওয়ার সুযোগ থাকে না, বৈশাখী মেলা সেই মিলন মেলাটি করিয়ে দেয়। বাঙালি পোষাক, নানারকম মুখরোচক খাবারের দোকানে দিনভর ছিল দীর্ঘ ভিড়। বাঙালিদের পাশাপাশি ভিন্ন সংস্কৃতির মানুষও এসে যোগ দিয়েছিল মেলা প্রাঙ্গণে। মেলায় বক্তব্য রাখেন স্থানীয় বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত এমপি রুশনারা আলী, টাওয়ার হ্যামলেট কাউন্সিলের মেয়র জন বিগস, ব্রিটেনে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার নাজমুল কাওনাইন, লন্ডন বাংলা প্রেস ক্লাবের সাবেক সভাপতি জনমত পত্রিকার সম্পাদক নবাব উদ্দীন।

ব্রিটেনের প্রত্যেক শহরেই এখন বাঙালিরা বৈশাখী মেলা আয়োজন করেন। লন্ডনের বিভিন্ন কাউন্সিলে ও আয়োজিত হয় বৈশাখী মেলা, পাশাপাশি বিভিন্ন সংগঠন ও মেলার আয়োজন করে থাকে। দুই যুগ আগে শুরু হওয়া লন্ডন বৈশাখী মেলার আকর্ষণ ঠিক আগের মতোই নতুন রয়ে গেছে। মেলায় আগত দর্শকের চেয়েও বেশী মানুষ সারা ইউরোপের জুড়ে ঘরে বসে এনটিভি  ইউকের সরাসরি সম্প্রচার উপভোগ করেছেন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত