নিজস্ব প্রতিবেদক

০৯ আগস্ট, ২০২০ ০০:৫৯

অন্ধ, বন্ধ করো না পাখা...

করোনাকালে অপূর্ব'র সৃজনকর্মে

দুঃসময় থেকে সুসময়ে মানুষ পৌঁছে দেবে মানুষকে- বলেছিলেন নাজিম হিকমত। এই করোনা দুঃসময়েও নাজিমের সেই আশা ভঙ্গ করেনি মানুষ। খাবার-চিকিৎসাসহ নানা সহায়তা নিয়ে মানুষ দাঁড়িয়েছে সঙ্কটে পড়া তার স্বজাতির পাশে। কিন্তু সকলে যখন ঘরবন্দি মাসের পর মাস, ঘরের বাইরে বেরোনো মানে যখন মৃত্যুর দিকে এক পা এগিয়ে যাওয়া- তখন কী কেবল তার ভাত কাপড়েরই অভাব হয়? ঘরে বন্দি থেকে ভাইরাসকে না হয় ঠেকানো গেলো কিন্তু যে অবসাদ-বিষাদময়তা ঘিরে ধরছে, তার থেকে মুক্তি কিসে?

একদিকে, ব্যধি-মৃত্যুর মিছিল, আরেকদিকে জীবিকা নিয়ে অনিশ্চয়তা-আর্থিক টানাপোড়েন- সবমিলিয়েই এক বিষাদময় সময়। মানুষের এই বিষন্নতা, মনাসিক অশান্তি কাটাতেও এগিয়ে এসেছেন কিছু সৃষ্টিশীল মানুষ। নিজেদের সৃজনকর্মের মাধ্যমে ঘরববন্দি মানুষকে চাঙ্গা রাখার কাজ করে যাচ্ছেন তারা। দুঃসময়েও আশাবাদি হওয়ার ভরসা জুগিয়েছেন। গান-কবিতাসহ নানা সৃষ্টিশীল কাজের মাধ্যমে নেতিয়ে পড়া মানুষকে সুদিনের স্বপ্নটা জিইয়ে রাখতে উদ্ভুদ্ধ করে যাচ্ছেন।

প্রায় চার মাস ধরে নিষ্টার সাথে এই কাজগুলো যারা করে যাচ্ছেন ধারাবাহিকভাবে, অপূর্ব শর্মা তাদেরই একজন। মহামারির এই স্থরিব সময়ে সকলেই ঘরে আটকা। এই অলস সময় সৃজনকর্মে পার করছেন  কবি, সাংবাদিক ও গবেষক অপূর্ব শর্মা।

এই করোনাকালীন সময়ে অন্তত ২০টি গান লিখেছেন তিনি। কবিতাও লিখেছেনে অনেকগুলো। যার কয়েকটি ইতোমধ্যে দেশজুড়ে বেশ প্রশংসা কুঁড়িয়েছে। তার লেখা এসব গান-কবিতায় কণ্ঠ দিয়েছেন কিংবদন্তিতুল্য অনেকে।

করোনা সঙ্কট শুরুর পর অপূর্ব ‘জাগো মানুষ’ নামে একটি গীতি কবিতা লিখেন। ভারতের প্রখ্যাত শিল্পী শুভপ্রসাদ নন্দী মজুমদারের সুরে এই গানে কণ্ঠ দিয়েছেন যুক্তরাজ্য প্রবাসী জনপ্রিয় শিল্পী গৌরী চৌধুরী। এরপর তিনি লেখেন- ‘করোনার ফাঁদে পৃথিবী কাঁদে’, ‘বাংলা আমার মা’ এবং ‘দূর প্রবাসে’ সহ অনেক গান।

‘জাগো মানুষ’ গীতি কবিতাটি প্রবাসী বাচিক শিল্পী মুনিরা পারভীন আবৃত্তিও করেন। অপূর্ব’র এই গীতিকবিতা সম্পর্কে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য তপধীর ভট্টাচার্য্য বলেন, ‘এ ধরনের গান দুঃসহ সময়ে মানুষের মন থেকে হতাশা দূর করতে ভূমিকা রাখবে।’

এই সময়ে অপূর্ব শর্মা’র লেখা ‘দেখা হবে মিলন মোহনায়’ কবিতাটি বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে। অপূর্ব শর্মা এবং বাচিক শিল্পী মুনিরা পারভীনের পরিকল্পনায় এই কবিতার একটি ভিডিওচিত্রও নির্মিত হয়েছে।

ভিডিওচিত্রে কবিতাটি আবৃত্তিতে অংশ নেন- আবদুল গাফফার চৌধুরী, সেলিনা হোসেন, পীযুষ বন্দ্যোপাধ্যায়, ডালিয়া আহমেদ, শিমুল মুস্তাফা, মো. আহকাম উল্লাহ্, মাহিদুল ইসলাম, রবিশঙ্কর মৈত্রী, বেলায়েত হোসেন, এ কে এম শামসুদ্দোহা, মুনিরা পারভীন, কেয়া রোজারিও, শারমিন লাকী, মেরী রাশেদীন, নাজমুল আহসান, রূপশ্রী চক্রবর্তী, গোপন সাহার মতো বিশিষ্টজনেরা।

‘শুনতে পাও শিশুর কান্না’ ‘প্রাণের সিলেট’ ‘করোনায় কান্দি’- এই সময়ে অপূর্ব’র লেখা এরকম কয়েকটি কবিতাও সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচিত হয়েছে।

করোনাকালে অপূর্ব শর্মার লেখা অন্যান্য কবিতার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, ‘আলো আসবেই’, ‘প্রিয় স্বদেশ’, ‘পৃথিবী কাদে’, ‘কেন এই অবিচার’, ‘মানুষ বড় অসহায়’, ‘কাটবে আঁধার’, ‘সেবাব্রতীর জন্য শোকাঞ্জলি’, ‘শুনতে পাও শিশুর কান্না’, ‘করোনায় কান্দি’ (সিলেটি ডায়ালক্টে লেখা), ‘গান পোড়েনা’, ‘অবিনশ্বর’।

করোনাকালের সৃজনকর্ম নিয়ে অপূর্ব শর্মা বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সবাই ঘরবন্দি। উদ্বেগে-উৎকণ্ঠায় কাটছে সময়। এই সঙ্কটকালে নিজের চারপাশ আর মানুষের কথা চিন্তা করেই এসব লেখা লিখেছি। আমি মনে করি- সৃষ্টিশীল কাজের মাধ্যমে মানুষের কষ্ট, দুঃখ-দুর্দশা তুলে ধরার চেষ্টা করাও দুর্দনে তার লড়াইয়ে শরিক হওয়ার শামিল।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত