নিজস্ব প্রতিবেদক

২৬ জানুয়ারি, ২০২৪ ২৩:১৮

শীত উপেক্ষা করে পিঠা উৎসবে জনসমুদ্র

হিম হিম কুয়াশার আবরণে ষড়ঋতুর পরম্পরায় বাংলার প্রকৃতিতে আজ ফিরে আসে পিঠা পার্বণের উৎসব। বাঙালির ঘরে ঘরে পিঠা উৎসব শুরু হয় অগ্রহায়নের শুরু হতে। অগ্রহায়ন মানেই কৃষকের গোলায় নতুন ধান। কৃষাণির ব্যস্ততা দিনভর। নতুন চালের পিঠার ঘ্রাণে আমোদিত চারদিক। গ্রামজুড়ে উৎসবের আমেজ। পিঠা উৎসবের সঙ্গে মিশে আছে বাঙালির হাজার বছরের ইতিহাস, ঐহিত্য ও সংস্কৃতি। বাংলার কৃষিজীবী সমাজের সবচেয়ে ঐতিহ্যবাহী শস্যোৎসব নবান্ন।

অনাদিকাল থেকে কৃষিসভ্যতার ক্রমবিকাশের সঙ্গে সঙ্গে গ্রাম বাংলায় পালিত হয়ে আসছে এ উৎসব। পূর্বে অত্যন্ত সাড়ম্বরে উদযাপিত হতো নবান্ন উৎসব। সকল মানুষের সবচেয়ে অসাম্প্রদায়িক উৎসব হিসেবে নবান্ন উৎসব সমাদৃত ছিলো। অগ্রহায়ণের শুরু থেকেই আমাদের গ্রামবাংলায় চলে নানা উৎসব-আয়োজন।  বাঙালির বারো মাসে তেরো পার্বণ। এ যেন সত্যি হৃদয়ের বন্ধনকে আরো গাঢ় করার উৎসব।

 এবছর শীত শেষে ঋতুরাজ বসন্তের আগমন। করোনা ক্রান্তি লগ্ন শেষে আবারো নতুন ভাবে জেগে ওঠার আহ্বানে ২৬ জানুয়ারি সুবিদবাজারস্থ ব্লু বার্ড স্কুল এন্ড কলেজ প্রাঙ্গণে প্রতিবারের মতো ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন শ্রুতি সিলেট আয়োজন করেছিল দিনব্যাপী পিঠা উৎসব ১৪৩০ বাংলা।  এবার শ্রুতি পিঠা উৎসবের ত্রয়োবিংশতম আয়োজন। দিনব্যাপী আয়োজনের প্রথম অধিবেশন উদ্বোধন করেন বরেণ্য আবৃত্তিশিল্পী বীরমুক্তিযোদ্ধো ডালিয়া আহমেদ । প্রভাতি আয়োজনে অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার দেবজিৎ সিংহ। অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্য রাখেন শ্রুতি সদস্য সচিব সুকান্ত গুপ্ত।

সকাল ১০ টায় প্রথম অধিবেশনে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন প্রবাসী কল্যান ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান প্রতিমন্ত্রী শফিকুর রহমান চৌধুরী এমপি। আরো উপস্থিত ছিলেন জেলা পরিষদ সিলেটের চ্যায়ারম্যান নাসির উদ্দিন খান, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন, বীর মুক্তিযোদ্ধা ভবতোষ বর্মণ রানা, হুসনে আরা অধ্যক্ষ ব্লু বার্ড স্কুল এন্ড কলেজ, শামসুল আলম সেলিম সভাপতি সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট সিলেট, রজত কান্তি গুপ্ত সভাপতি সম্মিলিত নাট্য পরিষদ সিলেট।

আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, শীত এলেই দিগন্তজোড়া প্রকৃতি হলুদ-সবুজ রঙে ছেয়ে যায়। পাকা ধানের পাশাপাশি প্রকৃতিকে রাঙিয়ে দেয় গন্ধরাজ, মল্লিকা, শিউলি, কামিনী, হিমঝুরি, দেব কাঞ্চন, রাজ অশোক, ছাতিম আর বকফুল। এই শোভা দেখে আনন্দে নেচে ওঠে কৃষকের মন।  নতুন ধানের চাল দিয়ে তৈরি করা হয় পিঠা, পায়েস, ক্ষীরসহ হরেক রকম খাবার। সোনালি ধানের প্রাচুর্য আর বাঙালির বিশেষ অংশ নবান্ন  জীবনানন্দ দাশের কবিতায় ফুটে ওঠেছে অনন্য মহিমায়। কবি জীবনানন্দ দাশ তার কবিতায় লিখেছেন- ‘আবার আসিব ফিরে ধানসিঁড়িটির তীরে- এই বাংলায়/ মানুষ নয়- হয়তো বা শঙ্খচিল শালিখের বেশে/ হয়তো ভোরের কাক হয়ে এই কার্তিকের নবান্নের দেশে/ কুয়াশার বুকে ভেসে একদিন আসিব এ কাঁঠাল ছায়ায়।’

করোনা কাল শেষে ঋতুরাজ বসন্তের আগমনের বারতায় শীত জেঁকে বসেছে। মানুষ আবারো জেগে উঠছে শুদ্ধ সংস্কৃতির শুভ বারতায়। করোনাকে জয় করে আবারো এগিয়ে যাবে সমাজ এবং সংস্কৃতি।

দ্বিতীয় অধিবেশন দুপুর আড়াইটায় প্রথম পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন  সিলেট সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। নগরপিতা তাঁর বক্তব্যে বলেন শ্রুতি পিঠা উৎসবের মাধ্যমে নগরে যে উৎসবমুখর পরিবেশ সৃষ্টি হয় তা আমাদের নগরবাসির জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কোলাহল পূর্ণ নগরের নগরবাসি একটি দিন উৎসবে আনন্দে আবহমান সংস্কৃতির সাথে এক হয়ে যায়।

দিনব্যাপী আয়োজনের পিঠা প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরনীতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোবারক হোসেন।

দিনব্যাপী আয়োজনে সমবেত পরিবেশনায় অংশগ্রহণ করে - ছন্দনৃত্যালয়, গীতবিতান বাংলাদেশ, জাতীয় রবীন্দ্রসংগীত সম্মিলন পরিষদ সিলেট, পাঠশালা, আনন্দলোক, মুক্তাক্ষর,কৃষ্ণচূড়া সাংস্কৃতিক সংঘ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়,সংগীত নিকেতন,সুরের ভূবন, নৃত্যাঞ্জলি, অন্বেষা শিল্পী গোষ্ঠী, নৃত্যশৈলী, শিকড় শাবিপ্রবি, মাভৈঃ আবৃত্তি সংসদ শাবিপ্রবি, নৃত্যসুধা, ভাবুক, ললিত মঞ্জরি, নৃত্যরথ প্রমুখ। আমন্ত্রিত আবৃত্তিশিল্পী হিসেবে উপস্থিত থাকবেন  বরেণ্য আবৃত্তিশিল্পী ডালিয়া আহমেদ, ড. শাহাদাৎ হোসেন নিপু,মাসুম আজিজুল বাসার, মোঃ মুজাহিদুল ইসলাম, নন্দিতা দত্ত,  নাজমা পারভীন প্রমুখ।

 আমন্ত্রিত সংগীতশিল্পী  হিসেবে উপস্থিত থাকবেন বাউলা কানু, শামীম আহমেদ,গৌতম চক্রবর্তী,বাউল সূর্যলাল, প্রদীপ মল্লিক, খোকন ফকির,জয়িতা তিথি, পল্লবী দাশ মৌ,আশরাফুল ইসলাম অনি, তৃষা দাশ, অনিন্দিতা মৌ প্রমুখ।
দিনব্যাপী পিঠা প্রতিযোগিতায় প্রায় অর্ধ শতাধিক স্টল অংশ নেয়। বাহারী রকমের পিঠার পসরা সাজিয়ে তারা বসেন। জাতি ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সবাই এক হয়ে গিয়েছিল পিঠা উৎসবের দিনব্যাপী আয়োজনে। ঐতিহ্যবাহী পিঠা উৎসব ঘিরে নগর জুড়ে ছিলো উৎসব উৎসব আমেজ। জাতীয় সংগীতের মাধ্যমে পিঠা উৎসবের ত্রয়োবিংশ তম আয়োজন শেষ হয়।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত