০৮ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০
হাওড়-বাওড়, নদী-নালা, খাল-বিলের দেশ ভাটি বাংলা। এখানকার বিস্তীর্ণ জলরাশি, বিশাল আকাশ, ধুধু প্রন্তর আর গা জুড়ানো লিলুয়া বাতাস যে কোন মানুষকে উদাস করে। এখানে পানির কল কল ধ্বনিতে এবং পাখির কূজনে প্রতিদিন সূর্যোদয় হয়। সোনালী আলো বিশাল জলরাশির উপর পড়ে চিকচিক করে সারাটিক্ষণ।
এখানকার হিজল, জারুল, বরুণ ঢোলকলমির সঙ্গে বেড়ে উঠে সুরের ঝংকার। প্রকৃতির সাথেই বেড়ে উঠে অগণিত শিল্পী। যাদের কণ্ঠে ধ্বনিত হয় বাঙালির হাজার বছরের কথা। এই বিশাল ভাটি অঞ্চলের (নেত্রকোণা, সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, সিলেট, হবিগঞ্জ) উদাস আকাশের নিচে লিলুয়া বাতাসে জন্ম হয় একেকজন রাধা রমণ, হাছন রাজা, জালাল খাঁ, রশিদ উদ্দিন, উকিল মুন্সি, আব্দুস সাত্তার, খোরেশদ মিয়া, শাহ আবদুল করিম, আবদুর রহমান।
যুগ যুগ ধরে যেসব বাউলশিল্পীরা বাঙালি চিন্তা-চেতনা, দর্শন শিল্পের সঙ্গে সময়ের যোগ ঘটিয়েছেন তাঁদের মধ্যে আবদুর রহমান একজন। সাম্প্রতিক সময়ে বাউল জগতের এক অনন্য নাম। জন্ম হবিগঞ্জ জেলার আজমিরীগঞ্জ উপজেলার জলসুখা গ্রামে ১৩৬৩ বাংলার চৈত্র মাসের প্রথম বৃহস্পতিবার। শৈশবেই ভাটির অপরূপ যৌবন দেখে প্রেমে পড়েন। সুর জাগে তাঁর মনে। ঢেউ ওঠে পুরো শরীরে। শৈশবের ঘোর লাগা ভাব যৌবনে পরিণত বয়সে প্রকাশ পায়। শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন বাউলসম্রাট শাহ আবদুল করিমের কাছে।
৩৪ বছর শাহ আবদুল করিমের সঙ্গে সঙ্গী হয়ে চষে বেড়িয়েছেন বাংলার বিভিন্ন অঞ্চলে। আবদুর রহমান হয়ে ওঠেন নেশায়-পেশায় পুরোদস্তর এক বাউল। বাংলদেশ টেলিভিশন, বেতারের একজন তালিকাভুক্ত গীতিকার ও কণ্ঠশিল্পী তিনি। প্রায় পাঁচ শতাধিক গান রচনা করার পাশাপাশি সুরও করেছেন। বর্তমানে সময়ে অনেক বাউলশিল্পী যখন দর্শক মাতানোর জন্য সস্তা জনপ্রিয় হওয়ার জন্য গানকে রিমিক্স করেন সেখানে আবদুর রহমান ব্যতিক্রম। ঝাঁকড়া বাবরি চুলের দীর্ঘাকৃতি এ বাউলের কণ্ঠের মায়াবী জাদুতে বিমোহিত হন সকলেই। আবদুর রহমানের সৃষ্টিকর্ম বর্তমান বাউল সাহিত্যের এক ভিন্নতর সংযোজন যা আমাদের চিন্তা ও চেতনার খোরাক জোগায়।
ঐতিহ্যবাহী সাংস্কৃতিক সংগঠন শ্রুতি সিলেট প্রতিবছর বাংলা নববর্ষের দিন একজন গুণীজনকে সম্মাননা জানায়। বিগত বছর গুলোতে শ্রুতি সম্মাননা পেয়েছেন ১৪১২ সালে গণসংগীত এ ভবতোষ চৌধুরী, ১৪১৩ সালে কবিতা'য় কবি তুষার কর, ১৪১৪ সালে উস্তাদ করিম শাহাব উদ্দিন নজরুল সংগীতে, ১৪১৫ সালে লোকসংগীতে গানেরপাখি চন্দ্রাবতী রায় বর্মণ, ১৪১৬ সালে চারুকলায় অরবিন্দ দাশগুপ্ত, ১৪১৭ সালে শিক্ষা ও সাহিত্যে ড. সুরেষ রঞ্জন বসাক, ১৪১৮ সালে রবীন্দ্র সংগীতে প্রমোদ দত্ত, ১৪১৯ সালে নাট্যকলায় জয়ন্ত চট্টোপাধ্যায়, ১৪২০ সালে রবীন্দ্রসংগীতে ড. মকবুল হোসেন, ১৪২১ সালে সংস্কৃতি সংগঠক ব্যারিস্টার মো: আরশ আলী, ১৪২২ সালে সাহিত্যে শাহীন আখতার, ১৪২৩ সালে আবৃত্তি'তে রূপা চক্রবর্তী, ১৪২৪ সালে রবীন্দ্রসংগীতে নীলোৎপল সাধ্য, ১৪২৫ সালে নজরুল সংগীতে সুজিত মুস্তাফা ,১৪২৬ সালে নজরুল সংগীতে সালাউদ্দিন আহমেদ, ১৪২৭ সালে কবিতায় হেলাল হাফিজ, ১৪২৮ সালে আবৃত্তিতে ডালিয়া আহমেদ, ১৪২৯ সালে নজরুল সংগীতে শারমিন সাথী ইসলাম ময়না। এবারের শ্রুতি সম্মাননা ১৪৩০ বাংলা পাচ্ছেন লোক সংগীতে বাউল আবদুর রহমান ।
বাংলা নববর্ষের দিন শ্রুতি সম্মাননা ১৪৩০ বাংলা বাউল আবদুর রহমানের হাতে তুলে দেয়া হবে।
আপনার মন্তব্য