দীপক কুমার দেব

১৪ আগস্ট, ২০১৫ ২২:৪১

স্মৃতিতে বাবুলদা

১৯৭০ সাল, সিলেটের সাহিত্য সংগঠন ‘সমন্বর লেখক সংঘ’ বিভিন্ন লেখা প্রতিযোগীতার আহ্বান করে, আমিও তখন কিছুটা লেখালেখি করতাম তাই একটা ছোট গল্প “সুলোচনা” লিখে পাঠালাম। কিন্তু এরপর আর খোজ নেইনি, অনেক পরে জানলাম, আমার লিখা ছোটগল্পটি পুরস্কৃত হয়েছে, সারদা হলে ‘সমস্বর’ পুরস্কার বিতরন করেছে, কিন্তু আমি নিতে পারিনি সেই পুরস্কার।

কিছুদিন পর হঠাৎ চোখে পড়ল জল্লারপাড়ে “সমস্বর লেখক সংঘের” সাইন বোর্ড। কোন কিছু না ভেবেই চলে গেলাম ওই অফিস ভবনে, রুমে ঢুকবো কি না ইসস্তত করছি তখনি রুমের ভিতর থেকে সিলেটি ভাষায় শব্দ কানে আসলো- “কে বা ইখানো”।
আমি দ্বিধান্বিত কণ্ঠে বললাম,- আমি।
'ই তো বুঝলাম, তুমি কে?'- বলেই ভিতরে ডাকলেন। গিয়ে দেখি একটি টেবিল তিনটি চেয়ার ৩জন বসা

আমি বললাম, আমি,- ‘দীপক’। প্রশ্ন- কোন দীপক?
আমি নিরুত্তর ভেবে পেলাম না কি বলবো, হঠাৎ-ই সহাস্য সুদর্শন মানুষটি আমাকে বল্লেন- তুমি কি সেই সুলোচনার লেখক দীপক?

বল্লাম,- হ্যা।

তিনি বল্লেন,- তুমি যে পুরস্কার পেয়েছো ঐ লেখাটির জন্য, তা জানো? বলেই ড্রয়ার থেকে পুরস্কার এর বের করতে করতে বল্লেন, তুমি কি আমাদের কে চিনো? বললাম না।

বললেন আচ্ছা শোনও,- উনি হচ্ছেন আমাদের সিলেটের অহংকার কবি দিলওয়ার, আর ইনি ইয়ামিন চৌধুরী আর আমি তোমাদের বাবুল দা।

সেই প্রথম দেখা ১৯৭০ সালের আমাদের বাবুল দা শ্রদ্ধেয় হেমচন্দ্র ভট্টাচার্যের সাথে পরিচয়। সুন্দর বাচন শৈলী, পরিপাটি, সুদর্শন, বন্ধুবৎসল সেই মানুষটিকে সারাজীবন এ কি রকম দেখেছি। আর শিখেছি অনেক কিছু যা এখনো আমার স্মৃতিতে অম্লান।

বাবুলদা’র সাথে আমার অসংখ্য স্মৃতি যা লিখে শেষ হবে না একটি বিশেষ স্মৃতি কথা দিয়ে ইতি টানছি,- ১৮৭২ সালে দীনবন্ধু মিত্রের “নীলদর্পন” নাটকের মাধ্যমে বাংলা নাটক এর যাত্রা শুরু হয়োছিলো আর ১৯৭২ সালে বাংলা নাটক এর “শর্তবর্ষ” উদযাপন করেছিলেন সিলেটে, আমাদের সবার প্রিয় বাবুল দা। তখন উনার সাথে থেকে দেখেছি অনুষ্ঠান সফল করার জন্য উনার পরিশ্রম আর দক্ষতা। যতদিন সিলেটে বাংলা নাটক হবে ততদিন বাবুলদা’র নাম চির স্মরনীয় হয়ে থাকবে।

আজ আবারও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছি, প্রণতি জানাচ্ছি দাদাকে যার সাহচর্যে থেকে অনেকগুনী মানুষের সাথে পরিচতি হয়েছি আর নিজেকে মানসিক ভাবে সমৃদ্ধি করেছি।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত