শাবি প্রতিনিধি

১৫ মার্চ, ২০২১ ০০:০০

শাবি শিক্ষক সমিতির নির্বাচন: ভোটের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন ‘শাবি শিক্ষক সমিতি’র নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আজ সোমবার (১৫ মার্চ)। নির্বাচন ঘিরে বিশ্ববিদ্যালয়ে চলছে নানা প্রস্তুতি ও প্রার্থীদের প্রচারণা।

নির্বাচনকে সামনে রেখে ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রার্থীরা। দীর্ঘদিন থেকে প্রতিষ্ঠিত ‘প্যানেল ভিত্তিক ঐক্যে’ চিড় ধরায় শিক্ষক রাজনীতিতে তৈরি হয়েছে নতুন সমীকরণ, যার প্রতিফলন ঘটতে পারে এবারের ভোটের ফলাফলে।
     
আজ সোমবার (১৫ মার্চ) সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল অডিটোরিয়ামে চলবে এ ভোট গ্রহণ। এবারের ভোটার সংখ্যা প্রায় ৪৫০জন।

প্রতিবারের ন্যায় এবারও আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের দু’টি প্যানেল ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ’, ও ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তচিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ’ এবং বিএনপি-জামায়াতপন্থী প্যানেল ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম’ প্যানেলের শিক্ষকরা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

আলাপ করে জানা গেছে, প্যানেল প্রতিবছরের ন্যায় থাকলেও থাকছে না প্যানেল ভিত্তিক ‘ভোট ব্যাংক’। সিনিয়র শিক্ষকদের প্রতি অনাস্থা আর মান-অভিমানে ‘প্যানেল ভিত্তিক বন্ডিং’-এ চিড় ধরেছে সব প্যানেলেই।

অনেক শিক্ষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, এবার তারা প্যানেলের বাইরেও ‘ব্যাক্তি’ হিসেবে প্রার্থীকে যাচাই করে ভোট দেওয়ার কথা ভাবছেন।

   খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের দু’টি প্যানেলের শিক্ষকদের মধ্যে প্রার্থিতা নিয়ে দ্বন্দ্ব তৈরি হয়েছে। বিশেষ করে এসব গ্রুপে সাস্টিয়ান (শাবির ছাত্র থেকে শিক্ষক হওয়া) এবং নন সাস্টিয়ান শিক্ষকদের মধ্যে মনস্তাত্ত্বিক দ্বন্দ্ব চরম আকারে।

‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তচিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ’ প্যানেলে যুগ্ম সম্পাদক পদে এক সহকারী শিক্ষককে মনোনয়ন দিলেও পরবর্তীতে তাকে সরিয়ে এই পদে সহকারী অধ্যাপক আহসান হাবিবকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। এই ঘটনায় এ গ্রুপের শিক্ষকদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।
     
জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের আপত্তি সত্ত্বেও প্যানেল নাম থেকে ‘ধর্মীয় মূল্যবোধ’ অংশ বাদ দেওয়ায় বিএনপি জামায়াতপন্থী ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ, বাংলাদেশি জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম’র শিক্ষকদের মধ্যেও দ্বন্দ্ব চরম আকারে বিরাজ করছে। ফলে বিগত বছরে আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের সাথে বিএনপি জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের লিয়াজোঁ করার যে গুঞ্জন উঠেছিল, বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের মধ্যে সম্পর্কে ফাটলের ফলে এবারের নির্বাচনে সেটা ঠিকভাবে কাজ না করতেও পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।  

আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকেই আওয়ামীপন্থী শিক্ষকদের দুটি প্যানেল ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ’, ও ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তচর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ’ নির্বাচনে পালাবদল করে বিজয়ী হয়ে আসছে। গত ১২ বছরে নিয়োগ প্রাপ্ত শিক্ষকরা প্রায় সবাই এই মতাদর্শের। সেই হিসেবে তাদের ভোটের সংখ্যায় বিএনপি-জামায়াতপন্থীরা একই জায়গাতে স্থির রয়েছে। নতুন করে আর তেমন কোন শিক্ষক যুক্ত হয়নি এ প্যানেলে। এ হিসেবে পরাজয় নিশ্চিত জেনেও বিএনপি-জামায়াতপন্থী ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম’ শুধুমাত্র নিজেদের অস্তিত্ব জানান দিতে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন। তবে সম্পর্কে ফাটল ধরার ফলে এবারের নির্বাচনে বিএনপিপন্থীদের সঙ্গ বাদ দিয়ে জামায়াতপন্থী শিক্ষকরা নির্বাচনে নতুন ছক আঁকতে পারেন বলে অনেকে ধারণা করা হচ্ছে।

উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের শেষ সময়ে এসে নিজেদের শক্ত অবস্থান তুলে ধরতে এবং প্রশাসনিক পদে নিজেদের অধিষ্ঠিত করতে এবারের শিক্ষক সমিতির নির্বাচন গুরুত্বপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সব প্যানেলের প্রার্থীদের কাছে। আওয়ামীপন্থী দুই প্যানেলের ভোট প্রায় কাছাকাছি থাকায় এবারের নির্বাচনেও নির্বাচনের ফলাফল নির্ধারণে বিএনপি-জামায়াতপন্থী শিক্ষকদের ভোট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তবে বিএনপি ও জামায়াতপন্থী শিক্ষকরা আলাদা করে নির্বাচন নিয়ে চিন্তা করলে বিগত বছরের থেকে এবার নির্বাচন নতুন মেরুকরণ তৈরি হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

নির্বাচনে আওয়ামীপন্থী ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তচিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ’ প্যানেল থেকে এবার সভাপতি পদে গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. রাশেদ তালুকদার প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। যিনি গত বছরও একই পদে নির্বাচন করে জয়লাভ করে বর্তমানে সভাপতি হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। কিন্তু দায়িত্ব পালনকালে শিক্ষকদের দাবি-দাওয়ার বাস্তবায়নে কার্যকরী উদ্যোগ গ্রহণ করার চেয়ে উপাচার্যের আস্থাভাজন থাকতেই বেশি চেষ্টা করেছেন বলে বিরুদ্ধ প্যানেলের শিক্ষকদের অভিযোগ রয়েছে।

প্রচারণায় পিছিয়ে নেই আওয়ামীপন্থী ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ’ থেকে সভাপতি প্রার্থী হওয়া সমাজকর্ম বিভাগের অধ্যাপক ড. তুলসী কুমার দাস। শিক্ষক সমিতিতে বিভিন্ন পদে নির্বাচনে পূর্বে জয়লাভ করে আসছেন।

আওয়ামীপন্থী ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও মুক্তচিন্তা চর্চায় ঐক্যবদ্ধ শিক্ষকবৃন্দ’র প্যানেল থেকে সাধারণ সম্পাদক পদপ্রার্থী হয়েছেন ইংরেজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ইশরাত ইবনে ইসমাঈল। তিনি বিদেশে উচ্চ শিক্ষা শেষে অল্প কিছুদিন পূর্বে ক্যাম্পাসে ফিরেছেন। দীর্ঘদিন ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত থাকায় একটা গ্যাপ তৈরি হয়েছে। তবে সে গ্যাপ কাটিয়ে উঠতে প্যানেলের সদস্যদের সহযোগিতায় চেষ্টা করছেন।

অপর দিকে ‘মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ শিক্ষক পরিষদ’ থেকে সাধারণ সম্পাদক পদে কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড পলিমার সায়েন্স বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. মহিবুল আলম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তিনি বিগত সময়ে তিন মেয়াদে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন।

  বিএনপি জামায়াতপন্থি শিক্ষকদের প্যানেল ‘মহান মুক্তিযুদ্ধ ও জাতীয়তাবাদী শিক্ষক ফোরাম’ থেকে সভাপতি পদে গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. সাজেদুল করিম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের সময় ব্যাপক প্রভাবশালী শিক্ষক হিসেবে তিনি পরিচিত থাকলেও সময়ের ব্যবধানে তার বিপরীত রূপ নিয়েছে। একই প্যানেল থেকে সাধারণ সম্পাদক পদে সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. শাহ মোহাম্মদ আতিকুল হক প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। দীর্ঘদিন থেকে বিএনপি জামায়াতপন্থী শিক্ষক নিয়োগ বন্ধ থাকায় তাদের ভোট ব্যাংক স্থির রয়েছে।

তবে ১৫ মার্চ সকাল সাড়ে নয়টা-বিকেল ৪টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ শেষে সকল সমীকরণের হিসেব মিলবে। এদিন রাতেই ভোট গণনা শেষে ফলাফল ঘোষণা করবেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার অধ্যাপক ড. জায়েদা শারমিন।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত