প্রণবকান্তি দেব

২০ এপ্রিল, ২০২১ ১৪:৩৪

'উই আর ব্লেসড টু বি এক্সেস স্টুডেন্টস'

"টুডে আই উড লাইক টু শেয়ার হাউ এ শাই ফারুক বিকাম স্মার্ট এনাফ টু টক ইনফ্রন্ট অব ইউ"- বক্তব্যটা যখন শুরু হয়েছিল এভাবে, স্ক্রিনে সবার তখন চোখ তার দিকেই। সাবলীল ভঙ্গিমায়, সহজাত উচ্চারণে, রেলিং বিছানায় প্রিয় মা কে পাশে বসিয়ে নিজের এক্সেস জার্নির কথা বলে যাচ্ছিল সে। প্রচন্ড আত্নবিশ্বাসী তার হৃদয় উগরে যেন কথাগুলো আসছিল।

সিলেট সোবহানীঘাট হযরত দারুসুন্নাহ ইয়াকুবিয়া মাদ্রাসার শিক্ষার্থী মোঃ ফারুক আহমদ এর পর আসে নীলিমা। হাতের মুঠোয় থাকা মাইক্রোফোন চালু করেই বলে উঠে "দ্যা উডস আর লাভলী, ডার্ক এন্ড ডিপ... এন্ড মাইলস টু গো বিফোর আই স্লিপ"! অতিথিরা মোহমুগ্ধতা নিয়ে চোখ গেঁথে রাখেন তাঁর ওপর। এক আকাশ সমান স্বপ্ন জড়ানো কন্ঠে নীলিমা গড় গড় করে বলে যায় "আই ইউজড টু ফিল শাই টু স্পীক ইংলিশ বাট এক্সেস রিমোভড মাই শাইনেস এন্ড নার্ভাসনেস, উই আর ব্লেসড টু হ্যাভ সাচ অপরচুনিটি, উই আর ব্লেসড টু বি এক্সেস স্টুডেন্টস"।

সিলেট শহরের অদুরের সিলাম পিএল উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী নুসরাত জাহান নীলিমার মাত্র দু'মিনিটের বক্তব্যে ইংরেজ কবি জন কীটস এর জিজ্ঞাসার জগতে খানিকের জন্য  যেন হারিয়ে যান সবাই; 'ওয়াজ ইট এ ভীসন অর এ ওয়েকিং ড্রীম?'।

ঘটনাগুলো ১২ এপ্রিল, সোমবার  বিকেলের। ভার্চ্যুয়াল প্লাটফর্মে তখন প্রাঞ্জল উপস্থিতি বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাস্ট্রদূত আর্ল আর মিলার এর। সঙ্গে ছিলেন কাঠমুন্ডু থেকে রিজিওয়াল ইংলিশ ল্যাংগুয়েজ অফিসার কার্টিস চান, আমেরিকান সেন্টার ঢাকার কালচারাল অফিসার জশ ক্যাম্প, একাডেমিক এক্সচেঞ্জ প্রোগ্রাম স্পেশালিষ্ট রায়হানা সুলতানা ও ইংরেজি ভাষা বিষয়ক প্রোগ্রাম ম্যানেজার শাওন কর্মকার। পুরো অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন এক্সেস প্রোগ্রামের কো অর্ডিনেটর প্রণবকান্তি দেব।  উপলক্ষ ছিল আমেরিকান দূতাবাসের অর্থায়নে পরিচালিত ইংলিশ এক্সেস মাইক্রোস্কলারশিপ প্রোগ্রামের অন্তর্ভুক্ত সিলেটের শিক্ষার্থীদের গ্র‍্যাজুয়েশন অনুষ্ঠান। ইএইচডিএস, সিলেট এর তত্বাবধানে সিলেটের বিভিন্ন স্কুল ও মাদ্রাসার ২০জন শিক্ষার্থী দু বছরব্যাপী ইংরেজি ভাষা ও জীবন দক্ষতা বিষয়ক প্রশিক্ষণ শেষে এ সমাপনী অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়েছিল সেদিন।

শিক্ষার্থীদের অভিব্যক্তি বর্ণনা আর রাস্ট্রদূত আর্ল মিলার এর অনুপ্রেরণামূলক বক্তব্য রাঙিয়ে তুলেছিল সে বিকেল। পরিবার ও সমাজের নানা প্রতিবন্ধকতা আর অর্থনৈতিক সীমাবদ্ধতাকে নিজেদের উদ্যম আর অধ্যাবসায় দিয়ে জয় করে সেদিন তারা হেসেছিল সাফল্যের আনন্দে।

অন্যদিকে, ভবিষ্যতের প্রস্তুতির জন্য শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার উৎসাহ দিয়ে আর্ল মিলার যখন বলছিলেন, ‘বাংলাদেশ কিছুদিন আগেই তার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্‌যাপন করল- যে দিনটিতে দেশটি তার নিজের পথ নিজেই তৈরি করে নেওয়ার অভিপ্রায় ও সামর্থ্যের ঘোষণা দিয়েছিল। তরুণ মনের শক্তিকে স্বীকৃতি জানানোর এর চেয়ে ভালো সময় আর হয় না। ঠিক আপনাদের মতো (তরুণ), যারা পরবর্তী ৫০ বছরের নকশা আঁকবেন। আপনারা এই দক্ষতা সঙ্গে নিতে পারেন এবং কাজে লাগাতে পারেন সেই নেতাদের মতো করে, যাঁরা ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গড়বেন।’ - তখন আনন্দ অশ্রুতে ছলছল করছিল শিক্ষার্থীদের স্বপ্নভরা চোখদুটো। সেই মাহেন্দ্রক্ষণে উপস্থিত ছিলেন তাদের স্বর্ণগর্ভা মা-বাবাও। অনুষ্ঠানের শেষ প্রান্তে প্রদর্শিত শিক্ষার্থীদের এক্সেসের কার্যক্রম সংবলিত একটি ভিডিও স্মৃতি কাতর করে তুলে সবাইকে এবং এরই সাথে সবাই তাদের সৃজনশীলতার পরিচয়টুকুও পেয়ে যান। স্পর্ধিত পদক্ষেপে কাঙ্ক্ষিত সাফল্যের মুকুট জয়ে সকল প্রতিবন্ধকতাকে মোকাবেলা করে এগিয়ে যাওয়ার ব্রতে শেষ হয় আনুষ্ঠানিকতা। এক্সেস এর সিনিয়র শিক্ষিকা নওরীন আক্তার কলির সমাপনী বক্তব্যে উঠে আসে সেই শপথের প্রতিধ্বনি।

উল্লেখ্য, ইংলিশ অ্যাকসেস মাইক্রোস্কলারশিপ প্রোগ্রাম আমেরিকান দূতাবাসের একটি দ্বি-বার্ষিক কর্মসূচি, যা অর্থনৈতিকভাবে সুবিধাবঞ্চিত ১৩-১৭ বছর বয়সীদের মধ্যে ইংরেজি ভাষা, আমেরিকান সংস্কৃতি, বিশ্লেষণাত্মক সিদ্ধান্ত গ্রহণের চর্চা এবং নেতৃত্বর ভিত তৈরি করে এবং উচ্চশিক্ষা ও কর্মসংস্থানের জন্য তাদেরকে আরও প্রতিযোগিতামূলক হয়ে উঠতে সহায়তা করে।

সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের জনগণের মধ্যে ব্যক্তিসম্পর্ক ও শিক্ষা-সংযোগ প্রসার, স্থানীয়ভাবে শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং উদ্ভাবনী শিক্ষার সুযোগ তৈরির মাধ্যমে বাংলাদেশি যুবাদের ক্ষমতায়নের জন্য ঢাকার যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের নেওয়া অনেক উদ্যোগের একটি এই অ্যাকসেস প্রোগ্রাম।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত