সিলেটটুডে ডেস্ক

২২ জানুয়ারি, ২০২২ ১৬:০৪

হাসপাতাল থেকে ফিরে ফের অনশনে শাবির ২ শিক্ষার্থী

প্রায় ৬০ ঘণ্টার অনশনে অসুস্থ হয়ে পড়েছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী। অসুস্থ শিক্ষার্থীদের মাথার পাশে স্ট্যান্ড আর তাতে ঝোলানো স্যালাইন শিক্ষার্থীদের শরীরে পুশ করা। তবুও হাল ছাড়ছেন না কেউ।

অসুস্থ শিক্ষার্থীদের পাশে বসেই বন্ধু, সহপাঠী, জুনিয়র কিংবা সিনিয়রদের কেউ কেউ গভীর মমতায় যত্ন নিচ্ছে। কখনও কখনও অনশনরত শিক্ষার্থীর কষ্ট দেখে নীরবে চোখের পানি ফেলছেন অনেকেই। এমন দৃশ্য যেন এখন স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি)।

তিনদফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের উপর পুলিশের লাঠিচার্জ, গুলি আর সাউন্ড গ্রেনেড ছোড়ার পর শিক্ষার্থীরা গত সোমবার থেকে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের পদত্যাগে দাবিতে আন্দোলন করছে। এ দাবিতে ১৭ জানুয়ারি দুপুর দুইটা ৫০ মিনিটে ২৪ জন শিক্ষার্থী আমরণ অনশনে বসে। অনশনের প্রায় ২৪ ঘণ্টা পার হওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত এক এক করে ১৪ জন শিক্ষার্থী অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। এ ছাড়া বাকি অনশনরত শিক্ষার্থীদের শরীরে স্যালাইন দেওয়া হচ্ছে।

অসুস্থ ১৪ শিক্ষার্থীর মধ্যে কাজল দাস ও আব্দুল্লাহ আর রাফি গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসে ফিরে অনশনরত শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অবস্থান নিয়ে অনশন করছেন। কাজল দাস জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ইমার্জেন্সি ওয়ার্ডে এবং আব্দুল্লাহ আর রাফি এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডে চিকিৎসাধীন ছিল।

আব্দুল্লাহ আর রাফির স্বাস্থ্যের বিষয়ে ওসমানী মেডিকেলের চিকিৎসক মো. জাহিদ আহমেদের সঙ্গে কথা বললে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ সময় না খাওয়ার কারণে এ সমস্যা হচ্ছে। এভাবে না খেয়ে থাকলে শারীরিক সমস্যা আরও বাড়বে।’

আব্দুল্লাহ আর রাফি বলেন, প্রেশার লো, সুগার লো এবং শরীর নিস্তেজ হয়ে যাওয়ায় হাসপাতালে আসতে হয়েছিল।

এদিকে গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যায় ফের অনশনে যোগ দেওয়ার প্রসঙ্গে রাফি বলেন, ‘শরীর একটু স্বাভাবিক বোধ করায় আমি আবার এসেছি। আমার সঙ্গের এরা এখানে শীতের মধ্যে কষ্ট করছে, আমি যতক্ষণ স্বাভাবিক আছি ততক্ষণ এখানে থাকতে চাই। আর ভিসি পদত্যাগ না করা পর্যন্ত আমি অনশন চালিয়ে যাবো।’

এদিকে শাবিপ্রবিতে চলমান পরিস্থিতিতে শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলেন এবং তাদের সঙ্গে বসে কথা বলতে চান। এজন্য মন্ত্রী তাদের ঢাকায় আসার আমন্ত্রণ জানান। প্রথমে শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দল ঢাকায় যাওয়ায় কথা বললেও পরবর্তীতে অনশনরত এক শিক্ষার্থী আলোচনায় অংশ নিতে চাইলে তাকে ছেড়ে ঢাকায় যাওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল হয়। পরে শিক্ষার্থীরা অনলাইনে আলোচনার ইচ্ছে প্রকাশ করে, অন্যথায় মন্ত্রীকে ক্যাম্পাসে এসে তাদের দেখতে এবং কথা বলার জন্য অনুরোধ জানানো হয়।শিক্ষার্থীরা না গেলেও শিক্ষকদের পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল মন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলতে ঢাকা গেছেন বলে জানা গেছে।

অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের অনশন ও অসুস্থতা নিয়ে সিন্ডিকেট সদস্য এবং সেন্টার অব এক্সিলেন্সের পরিচালক অধ্যাপক ড. মস্তাবুর রহমান সমকালকে বলেন, শিক্ষার্থীদের নিয়েই তো ক্যাম্পাস। শিক্ষার্থীদের আগে বাঁচাতে হবে। এখানে চিন্তা করার মতো কিছু নেই। বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থীদের জন্য। শিক্ষার্থীদের সুন্দরভাবে বাঁচিয়ে রেখে তারপর অন্য চিন্তা করতে হবে।

অনশন ভাঙানোর বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের চেষ্টা চলছে। আমি নিজেও একজন সাস্টিয়ান। এটি আমার অনুভূতির সঙ্গে একাত্মতা। পুলিশি আক্রমণের ন্যাক্কারজনক এমন ঘটনা অতীতে তো ঘটেনি। আমি ওইটাই চাই, যারা দায়িত্বশীল জায়গায় ছিল তাদের দায়িত্ব নিতে হবে।

বেগম সিরাজুন্নেছা চৌধুরী ছাত্রী হলের প্রভোস্টের বিরুদ্ধে অসদাচরণের অভিযোগে গত বৃহস্পতিবার রাতে আন্দোলন শুরু হয়। সেখানে প্রভোস্ট কমিটির পদত্যাগসহ তিন দফা দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশি হামলার পর থেকে উপাচার্যের পদত্যাগের দাবিতে আন্দোলন চলছে।

রোববার বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর পুলিশ লাঠিচার্জ শুরু করে। তখন শিক্ষার্থীরা ইট পাটকেল ছুড়তে থাকলে পুলিশ রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড ছুড়ে শিক্ষার্থীদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ সময় প্রায় ৪০ জন শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। এই ঘটনায় আহত হয়েছেন শিক্ষক-কর্মকর্তারাও।

এ ঘটনায় আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের নাম উল্লেখ না করে মামলা করেছে পুলিশ।

জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি, তদন্ত) মো. আবু খালেদ মামুন বলেন, রোববার বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. এম এ ওয়াজেদ মিয়া আইআইসসিটি ভবনের সামনে উদ্ভূত পরিস্থিতি এবং ক্যাম্পাসে অশান্ত পরিবেশ নিয়ে সোমবার এ মামলা করা হয়। সেখানে দুই থেকে তিনশ জনকে আসামি করা হয়েছে। কিন্তু কারও নাম উল্লেখ করা হয়নি।

এ ছাড়া রোববার সন্ধ্যায় জরুরি সিন্ডিকেট সভায় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা করার পর সোমবার দুপুর বারোটার মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু প্রশাসনের নির্দেশ উপেক্ষা করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা হলে তালা ঝুলিয়ে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়। এর পর থেকেই ভিসির বাসভবনের সামনে আমরণ অনশনে রয়েছে শিক্ষার্থীরা।

আপনার মন্তব্য

আলোচিত