শাবিপ্রবি প্রতিনিধি

২৬ জুলাই, ২০২২ ১৩:৩৯

বুলবুল হত্যা: চার দফা দাবি শাবিপ্রবি শিক্ষার্থীদের

বুলবুল আহমদ হত্যাকারীদের গ্রেপ্তারসহ চার দফা দাবিতে ২৪ ঘন্টার আল্টিমেটাম দিয়েছেন সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

বুলবুল হত্যার প্রতিবাদে মঙ্গলবার দুপুরে ক্যাম্পাসে আয়োজিত মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে এই সময়সীমা বেধে দেন শিক্ষার্থীরা। এ কর্মসূচীতে কয়রেকজনও শিক্ষকও অংশ নেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার ভবনের সামনে মানববন্ধন কর্মসূচির আয়োজন লোকপ্রশাসন বিভাগের শিক্ষার্থীরা। মানববন্ধন শেষে বিক্ষোভ মিছিল বের করেন শিক্ষার্থীরা।

সোমবার সন্ধ্যায় ক্যাম্পাসের গাজীকালুর টিলায় দুবৃত্তদের ছুরিকাঘাটে খুন হওয়া বুলবুল লোকপ্রশাসন বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন।

মঙ্গলবার মানবনন্ধন শেষে শিক্ষার্থীদের ৪ দফা দাবি জানান লোকপ্রশাসন বিভাগের ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী আশরাফুল আলম আকাশ।

দাবিগুলো হলো- খুনিদের গ্রেপ্তার করে দ্রুত আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে, নিহতের পরিবারকে অতিদ্রুত সর্বোচ্চ ক্ষতিপূরণ নিশ্চিত করতে হবে এবং ক্ষতিপূরণের পরিমাণ ও প্রদানের উপায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করতে হবে, ক্যাম্পাসের সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং বুলবুলের স্মৃতি রক্ষার্থে বুলবুল হত্যার স্থানে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান ও বুলবল চত্বর ঘোষণা করতে হবে।

আকাশ বলেন, ২৪ ঘন্টার মধ্যে আমাদের দাবিগুলো পুরণের উদ্যোগ নিতে হবে। অন্যতায় ২৪ ঘন্টা পর আমরা আরো কঠোর কর্মসূচী দেবো।

তিনি বলেন, নিজের ক্যাম্পাসের নিজেদের কোন নিরাপত্তা নেই। আমরা দ্রুতই বুলবুল হত্যার সাথে জড়িতদের চিহ্নিত করে কঠোর শাস্তির দাবি জানাচ্ছি এবং শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।

মানববন্ধনে লোকপ্রশাসন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম অধ্যাপক,অধ্যাপক ড. শামীমা তাসমিম, অধ্যাপক ড. মো. আশরাফ সিদ্দিকী, সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ সামিউল ইসলামসহ বিভাগের শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন।

এদিকে বুলবুল হত্যার ঘটনায় সন্দেহভাজন ৩ জনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে বলে জানান সিলেট মহানগর পুলিশের উপ- কমিশনার (গণমাধ্যম) বি এম আশরাফ আলী তাহের।

তিনি বলেন, বুলবুল হত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের পাশ্ববর্তী এলাকার তিনজনকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছে, তাদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। ক্যাম্পাসের আশেপাশে যারা মাদকাসক্ত, নেশাগ্রস্ত এবং অন্যান্য অপকর্মের সাথে জড়িত আছে এমন ব্যক্তিদের আটক করার চেষ্টা চলছে।

এই হত্যার ঘটনায় সোমবার মধ্যরাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার মুহাম্মদ ইশফাকুল হক জালালাবাদ থানায় মামলা করেন।

জালালাবাদ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নাজমুল হুদা খান বলেন, মামলায় অজ্ঞাতনামা কয়েকজনকে আসামি করা হয়েছে।

বুলবুল হত্যার প্রতিবাদে মঙ্গলবারও ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থীরা। এর আগে সোমবার মধ্যরাতে সিলেট-সুনামগঞ্জ সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা।

রাত সাড়ে ১২টা থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ফটকের সামনে প্রায় আধাঘণ্টা সড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা। পরে উপাচার্যের আশ্বাসে তা প্রত্যাহার করা হয়।

এই হত্যার প্রতিবাদে রাতে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরাও। বিক্ষোভকারীরা ক্যাম্পাসের ভেতরে এমন ঘটনায় শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিয়ে প্রশাসনের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘ক্যাম্পাসের ভেতরে এমন ঘটনা কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমরা ঘটনাটি তদন্ত করে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব। আমি শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি সমবেদনা ও তাদের ধৈর্য ধরার আহ্বান জানাই।’

সোমবার সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে ক্যাম্পাসের ভেতরে গাজীকালুর টিলায় বুলবুল আহমেদের রক্তাক্ত দেহ পড়ে থাকতে দেখে অন্য শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে খবর দেন।

পরে গুরুতর অবস্থায় বুলবুলকে উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হলে চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।

বুলবুলের সহপাঠী অমিত ভৌমিক জানান, সন্ধ্যার বিশ্ববিদ্যালয়ের গাজীকালুর টিলায় বুলবুলকে ছুরিকাঘাত করা হয়। হামলাকারীরা ছিনতাইকারী হতে পারে বলে ধারণা অমিতের।

তবে খুনিদের চিহ্নিত করা যায়নি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী প্রক্টর আবু হেনা পহিল বলেন, ‘পুলিশ এ ঘটনার তদন্ত করছে। আশা করছি দ্রুত সময়ে খুনিরা গ্রেপ্তার হবে।’

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, ‘আহত অবস্থায় বুলবুলকে উদ্ধার করে প্রথমে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারে নেয়া হয়। কিন্তু রক্তক্ষরণ বন্ধ না হওয়ায় তাকে ওসমানী হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত