সিলেটটুডে ডেস্ক

০৪ এপ্রিল, ২০২৪ ১১:৫৪

শিবির ও হিজবুতের বিপক্ষে বলায় হত্যার ‘হুমকি’ পাচ্ছেন বুয়েটের ৬ শিক্ষার্থী

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েটে) ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের যে আন্দোলন চলছে, তার পেছনে ‘অন্ধকার সংগঠন’-এর ইন্ধন রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বুয়েটের ছয় শিক্ষার্থী। এ ছাড়া ক্যাম্পাসে শিবির ও হিজবুত তাহরীরের তৎপরতা নিয়ে বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরায় প্রতিনিয়ত প্রাণনাশের হুমকি পাচ্ছেন অভিযোগ তুলে নিরাপত্তা চেয়ে উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছেন তারা।

বুধবার (৩ এপ্রিল) বিকালে উপাচার্যের কাছে স্মারকলিপি জমা দেওয়ার পর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের সামনে সংবাদ সম্মেলন করে এসব দাবি করেন তারা।

সংবাদ সম্মেলন করা ছয় শিক্ষার্থী হলেন- কেমিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী আশিক আলম, সাগর বিশ্বাস, অরিত্র ঘোষ ও ২১ ব্যাচের অর্ঘ দাস, সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী তানভীর স্বপ্নীল ও বিষ্ণুদত্ত চাঁদ।

তাদের অভিযোগ, ক্যাম্পাসে নিয়মতান্ত্রিক প্রগতিশীল রাজনীতির পক্ষে অবস্থান নেওয়ার কারণে রাজনীতির বিপক্ষে আন্দোলনকারীরা তাদের হত্যার হুমকি দিচ্ছে।

স্মারকলিপি প্রদান প্রসঙ্গে শিক্ষার্থী আশিকুল আলম বলেন, ‘শনিবারের সংবাদ সম্মেলনে শিবির ও হিজবুত তাহরীরের বিরুদ্ধে কথা বলার পর থেকে আমাদের ওপর নানা ধরনের বুলিং ও হুমকি আসছে। আমাদের পরিবারের কাছেও বিভিন্ন ধরনের মিথ্যা তথ্য যাচ্ছে। আমাদের বাবা-মাকে হুমকি দিয়ে বলা হচ্ছে যে, আপনাদের সন্তানদের দেখে রাখুন, পরের দিন কিন্তু পাবেন না। এ পরিপ্রেক্ষিতে আজ আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি স্যারের কাছে একটি স্মারকলিপি জমা দিয়েছি, যাতে এই হুমকিদাতাদের দমন করা হয়।’

তিনি আরও বলেন, ‘বাঁশের কেল্লার মতো বিভিন্ন নিষিদ্ধ গ্রুপগুলোতে আমাদের ছবি পাঠানো হয়েছে। সেগুলো স্ক্রিনশট আমরা প্রমাণসহ স্যারের কাছে দিয়েছি। এই গ্রুপগুলোতে আমাদের জীবননাশের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। বুয়েটের সচেতন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকবৃন্দ নামে একটা গ্রুপ আছে, সেটাতেও আমাদের ছবি প্রচার করে বুলিং করা হচ্ছে। যেই গ্রুপের প্রধান এজেন্ডা হলো এখানে খেলাফত প্রতিষ্ঠা করা; সেই গ্রুপ থেকে আমাদের বিরুদ্ধে হুমকি অবশ্যই ভীতিকর।’

আরিফ রায়হান দ্বীপকে যখন খুন করা হয় এর আগে তাকে নিয়েও এভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বুলিং করা হয়েছিল উল্লেখ করে আশিক বলেন, ‘এরপরও যখন উনি দমছিলেন না, তারপর উনাকে নৃশংসভাবে আমাদের বুয়েট প্রাঙ্গণে হত্যা করা হয়। একই কায়দায় আমাদের বুয়েট ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক তন্ময় আহাম্মেদ ভাইকেও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। আমাদের ক্ষেত্রেও একই জিনিস হচ্ছে, তাই আমরাও উদ্বিগ্ন।’

এমন পরিস্থিতিতে তারা তাদের জীবন নিয়ে সন্দিহান জানিয়ে এই বুয়েট শিক্ষার্থী বলেন, ‘যেভাবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আমাদের থ্রেট ও বুলিং করা হচ্ছে, আমরা নিতে পারছি না। আমাদের মারার মতো হুমকি দেওয়া হচ্ছে। যারা আমাদের হুমকি দিচ্ছে তাদের নাম আমরা উপাচার্যের কাছে দেওয়া লিখিত আবেদনে উল্লেখ করেছি।’

আশিক আরও বলেন, ‘‘আমাদের পাবলিকলি ও ব্যক্তিগতভাবেও হুমকি দেওয়া হচ্ছে। আমাদের পরিবারের কাছে ফোন করে বলা হচ্ছে- ‘আপনার সন্তানকে দেখে রাখুন, নয়তো পরে পাবেন না’। এই কথাগুলোর মানে কী? এসব কিছুই করা হচ্ছে, কারণ আমরা হিজবুত তাহরীর ও শিবিরের রাজনীতির বিরুদ্ধে কথা বলেছি। বাঁশের কেল্লাসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ গ্রুপে আমাদের ছবি পাঠানো হচ্ছে, যার স্ক্রিনশটসহ সব আলামত আমরা লিখিত আবেদনে উল্লেখ করেছি। সেসব গ্রুপে আমাদের জীবনের হুমকি দেওয়া হচ্ছে।’

তিনি বলেন, ‘যারা ছাত্ররাজনীতির বিরুদ্ধে আন্দোলন করছে, আন্দোলনের প্রথম দিন থেকে তাদের (সাধারণ শিক্ষার্থী) কোনো দফায় শিবির বা হিজবুত তাহরীরের কোনো নাম উল্লেখ ছিল না। এরপরে হঠাৎ করে কেন তারা এদের পয়েন্ট নিয়ে কথা বলছে, সেটা এখন ভাবার বিষয়। আমরা যখন বিষয়টা সামনে নিয়ে এসেছি, তখন তারা এটা নিয়ে কথা বলছে, যাতে তারা আমাদের পয়েন্টগুলো তুলে দিতে পারে।’

আশিক বলেন, ‘হাইকোর্ট যেহেতু রায় দিয়েছে আর উপাচার্যও যেহেতু বলেছেন যে হাইকোর্টের রায় শিরোধার্য, তাই যদি উপাচার্যের অনুমতি থাকে আমরা বুয়েটে প্রগতিশীলতার রাজনীতি চাই।’

আপনার মন্তব্য

আলোচিত